পোস্টস

ভ্রমণ

সমতল হতে পাহাড়ে

২৬ জুলাই ২০২৪

জহিরুল ইসলাম

সমতল হতে পাহাড়ে
জহিরুল ইসলাম

শীত সকাল খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গল আবীরের। আজকের সকালটি অন্যান্য দিনের চেয়ে খানিক আলাদা।এক কাপ গরম চা পান করে ব্যাগ গুছিয়ে নিল আবীর। নিজেকে ফ্রেশ রাখতে আবীর সারাদিনে মাত্র এক কাপ গরম চা পান করে আর প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যেখানে পাখির কিচিরমিচির শোনা যায় সেখানে কিছু সময় পার করে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মনে মনে পুরো দিনের ছক আঁকেন মনের ক্যানভাসে। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সোজা বের হয়ে পথের ধার ঘেঁষে চলতে শুরু করল আবীর। শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটতে হাঁটতে একসময় এসে পৌঁছালো মহাসড়কের নিকট। অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্য। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর গাড়ি এলো সিটে বসে পড়া মাত্রই গাড়ি চলতে শুরু করল।রাস্তার দুই ধারে গাছের সারি, সরষে ফুল, ধান ক্ষেত‌।আবীর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।গাড়ি চলতে চলতে গ্ৰাম ছেড়ে আস্তে আস্তে শহরের পানে ছুটে চলছে অবিরত।আবীর সমতল হতে আজ পাহাড় দেখার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। উদ্দেশ্য মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি অবলোকন করা। ভ্রমণের তীব্র নেশা ছোটবেলা থেকে তার।তবে কখনো এভাবে একেলা ভ্রমণ করার সুযোগ হয়নি।এই প্রথম সে নিজে নিজে বের হলো পাহাড় দেখবে বলে।হুট করে গতরাতে সিদ্ধান্ত নিলো।
বেলা প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। আবীর যে বাসটি করে যাত্রা শুরু করলো তা এসে থামল রামগড় নামক স্থানে।বাসের সকল যাত্রী এক এক করে নেমে পড়ছে বাসস্ট্যান্ডের পাশে দুইজন হকার দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে।এদিকে সূর্যের আলোয় খানিক ঘেমে আছে আবীর।এদিকে প্রচন্ড মাথা ব্যথা আর বমি বমি ভাব হচ্ছে। ওষুধ লাগবে তার।এর আগে কখনো এমনটা হয়নি আবীরের।আজ হয়তো একা একা আর মনের ভেতর অস্থিরতায় খাবি খাওয়ায় হয়তো এখন হচ্ছে। ফ্রেশ হতেই নেমে পড়লো আবীর। হাইওয়ে রোড পার হয়ে প্রথমে নিজের হাত মুখ ধুয়ে নিল সে।পানি ভীষণ ঠান্ডা শরীর জুড়িয়ে যায় আহা!হাত মুখ পরিষ্কার করে পাশের একটি ওষুধ দোকান থেকে কিছু ওষুধ নিলো সে সাথে এক বোতল পানি।তারপর বাসের কাছে এক হকার থেকে দশ টাকার ঝালমুড়ি নিলো। এরমধ্যেই বাস ছেড়ে দিল। তাড়াহুড়ো করে পকেট থেকে দশ টাকার একটি নোট দিয়ে বাসে উঠে বসলো।যাক এবার আয়েশ করে যাওয়া যাবে।গাড়ি চলতে শুরু করলো। ঝালমুড়ি খাওয়া শেষ করে ঢগঢগ করে পানি খেয়ে নিলো আবীর।এরপর ওষুধ খেয়ে নিল।এবার খানিক স্বস্তি বোধ করছে সে।
রামগড় পার হতেই শুরু হলো আঁকাবাঁকা পথ।উঁচু নিচু পাহাড়ের উপর বাস দোল খেতে খেতে চলছে অবিরত। আঁকাবাঁকা পথ দেখে খানিক ভয় পেয়ে গেল আবীর যদি কিছু হয়।মনের ভেতর আতংক ছড়িয়ে পড়ে তার।একবার সামনে বাস চলার দৃশ্য দেখছে তো আরেকবার চালকের দিকে তাকাচ্ছে সে। কিছুটা অবাক হল এরা কতই না দক্ষ প্রশিক্ষিত চালক।কিছুটা সময় অতিক্রম করলো আবীর এবার কিছুটা আশ্বস্ত হলো। স্বাভাবিক হয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন করতে থাকলো আবীর।যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়।ছোট বড় অসংখ্য পাহাড় আর তরুলতায় ঘেরা প্রকৃতি।পাহাড়ের মাঝে মাঝে ছোট ছোট কয়েকটি বসত বাড়ি দেখতে পেলো।কি সুন্দর প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দু'চোখ জুড়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে একসময় সাফিনের ঘুম আসে চোখে।আবীর ঘুমিয়ে পড়ে সিটের সাথে মাথা ঝুঁকিয়ে।একসময় ঘুম ভাঙ্গে তার।বাস থেমে আছে চালক দুরে এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলছে।কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।প্রায় দশ মিনিট পর চালক আসে আবার চলতে শুরু করে বাস।আস্তে আস্তে বেলা বাড়তে থাকে গন্তব্য ঘনিয়ে আসতে থাকে।ঘন্টা খানেক চলার পর হঠাৎ আবীরের বমির ভাব শুরু হয়।
অবশেষে বেলা প্রায় আড়াইটার দিকে বাস এসে পৌঁছায় বাস স্ট্যান্ড এর সামনে।আবীর ব্যাগ গুছিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আবীরের বন্ধু। হাসিমুখে স্বাগত জানায় সে।দুই বন্ধুর সাক্ষাৎ হলো অবশেষে।সমতল থেকে পাহাড়ে এসে পৌঁছেছে আবীর।আহা কি উচ্ছ্বাস কি আনন্দ তার মনে।
বাস স্ট্যান্ড থেকে দুই বন্ধু সোজা চলে যায় বাজারে।সেখান থেকে পূর্বে কেনা প্রয়োজনীয় বাজার নিয়ে বের হয়।মিনিট তিরিশেক পর তারা এসে পৌঁছালো গন্তব্যে। চারদিকে উঁচু নিচু পাহাড়ের ঘেরা তার মাঝে ছোট ছোট কাঠের তৈরি ঘরবাড়ি। আবীরের বন্ধুর বাসায় প্রবেশ করে প্রথমে কুশলাদি বিনিময় করে নেয় তারা।আবীর কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।এখন বেশ স্বস্তিবোধ করছে সে মনে মনে একটু খুশি ও বটে।দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নেয় তারা এর ফাঁকে খোশ গল্পে জমে উঠে দুই বন্ধুর আড্ডা।আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ঠিক করে নেয় পরবর্তী পরিকল্পনা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমে আসে পাহাড়ে।হিমেলের বাসার পাশেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত।অল্প সময়ে বিকেলের অবসর সময়টা কাটানো যাবে বেশ আনন্দে।
হিমেল আবীর ও হিমেলের পরিচিত আরেক বন্ধু রাজন তিনজন মিলে হাঁটা শুরু করে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে।গল্প করতে করতে একেবারে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায় তিনজন। পরিচিত হতে থাকে নানা ধরনের ফল ও বৃক্ষের সাথে।একসময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে বাড়ি ফেরার তাড়া। সন্ধ্যার সময় এখানে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায় খুব।মাঝে মাঝে দুর ঝোপের আড়াল হতে শিয়ালের ডাক শুনতে পাওয়া যায়।একসময় রাত হয় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবীর।
খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে আবীরের। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকের দিনটি বেশ ফুরফুরে ও সজীব অনুভূত হচ্ছে তার।সকাল সকাল পাহাড়ি পথ বেয়ে হাঁটতে থাকে দুজন। চারদিক কুয়াশায় ঘেরা জনমানবহীন নির্জন পথ।মাঝে মাঝে দু একটি গাড়ি সাঁই করে চলে যায় পাহাড়ের পথ ধরে।ঘন্টা খানেক হাঁটার পর বাসায় ফিরে তারা। আজকের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন যেকোন মূহুর্তে বৃষ্টি নামতে পারে।একসময় ঠিক বৃষ্টি নামে পাহাড়ের বুকে। বিষন্ন হয় আবীরের মন।মনে মনে ভাবতে থাকে কপালটাই মন্দ তার সাধ করে পাহাড়ে ঘুরতে এসে এখন বৃষ্টির কবলে পড়তে হয়েছে।মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ে সে।হিমেলের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তার।চট জলদি ফ্রেশ হয়ে গরম গরম ভাত খেতে নেয়‌।মুরগির মাংস পাহাড়ি ডাটার শাক ডাল রান্না হয়েছে আজ।বেশ মজা করে খায় তারা।আজ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। বিকেলের সময়টা হুমায়ূন আহমেদের "মেঘের ওপারে বাড়ি" নামক বইটি পড়ে। সন্ধ্যায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে টং দোকানে চা পান করতে করতে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার পরিকল্পনা সেরে নেয়। সকালবেলার আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে যাত্রা শুরু করবে তারা। তাদের সফর সঙ্গী হিসেবে একজন গাইড যাবে।
যথারীতি গাড়ি চলতে শুরু করে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে। বাতাসের বেগে ছুটে চলে গাড়ি চারদিকে সুবিস্তৃত পাহাড় আর পাহাড়।যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ।সকাল নয়টায় গাড়ি যাত্রা শুরু করে দুপুরে আবীরদের বহনকারী গাড়ি দিঘিনালা নামক স্থানে গিয়ে থামে।গাড়ি থেকে নেমে সাফিন ও তার বন্ধু মিলে শপিং করে নেয়।সেখান থেকে আবার গাড়ি ভাড়া করে সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে।উঁচু উঁচু পাহাড়ের কোলঘেঁষে ছুটে চলা গাড়ি গুলো যেন মুক্ত পাখির মতো ডানা ঝাপটে পাড়ি দেয় অজানা গন্তব্যে।সরু রাস্তায় সাঁই সাঁই করে চলতে থাকে গাড়িগুলো।
ভয় ডরহীন ভীষণ সাহসী ও চৌকস গাড়ি চালকেরা।একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে মাঝ পথে একবার গাড়ি থামে তখন দুপুরের খাবার খেয়ে নেয় তারা।ঘড়ির কাঁটায় ঠিক চারটা বেজে সতেরো মিনিট তখন পৌঁছায় আবীররা মেঘের রাজ্য খ্যাত রাঙামাটির কোলে অবস্থিত অফার সৌন্দর্যে ভরপুর সাজেক ভ্যালিতে। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর ফেলে আসা দুর্গম পাহাড়ি পথগুলোকে মনে হয় মাটি ছোট্ট ঢিবির মতো। চারদিকে সবুজ শ্যামলিমা ঘেরা পাহাড়ি জনপদ।আকাশে তখন হালকা মেঘের ঘনঘটায় সূর্যের আলোর ঝিলিক প্রতিফলিত হচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর ও বিস্ময়কর সে দৃশ্য।এমন প্রকৃতির রুপ দেখার জন্য হয়তো আবীর এতদিন ধরে অপেক্ষা করেছিল।
সাজেকের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে আস্তে আস্তে এগোতে থাকল তারা।আজ রাতটি আপাতত এখানকার স্থানীয় পাহাড়িদের সাথেই কাটাবে বলে আগে থেকেই ঠিক করে নিলো।মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর সেখানে পৌঁছল তারা।তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে চায়ের আড্ডায় মেতে উঠল তিন তরুণ।চা পান শেষে বিল পরিশোধ করে রওনা দিল কংলাক পাহাড় অবলোকনের উদ্দেশ্যে।সেখান থেকে মেঘের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় স্পষ্ট ভাবে।প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী ছুটে আসে এই দৃশ্য দেখার জন্য।কংলাক পাহাড় সাজেকের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের একটি।এই পাহাড়কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পাহাড়িদের জীবনযাত্রার নতুন অধ্যায়।এখানকার স্থানীয় পাহাড়িরা পাহাড়ের পাদদেশে নির্মাণ করেছে ঘর বাড়ি।আয়ের উৎস হিসেবে এখানে বেশ কয়েকটি চা দোকান রয়েছে।এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেলের।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসা ভ্রমণ পিপাসু মানুষজন সেসব আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করে।এখানের রাত্রি যাপন অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশ জমজমাট ও আনন্দময় হয়।রাতে পরিবেশিত হয় ব্যাম্বো গ্ৰিল, কাবাব সহ নানান ধরনের ভোজ্য খাবার।আবীররা যখন সাজেকে প্রবেশ করে তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সময় হয়ে যায়।দিনের শেষ সূর্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিশাকাশে ঢলে পড়তে থাকে।এক সময় আসে সে অন্তিম মুহূর্ত আবীরেরা দলভেদে কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে। দিনের শেষ সূর্যাস্ত মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করে সবাই‌।পাখিরা ডানা ঝাপটে উড়ে যায় দুর অন্ধকারে।ক্রমশ সূর্যটা বিলীন হয়ে যায় পাহাড়ের আবছায়াতে।
নেমে আসে নিস্তব্ধতা সাজেকের বুকে। এখানকার রাত্রিগুলো সত্যিই বিস্ময়কর,দুরে বাজে গিটারের টুংটাং শব্দ আর গানের সুর।কংলাক পাহাড়ের শীর্ষ থেকে যতদুর চোখ যায় শুধু অন্ধকারময় চারদিক।কোথাও কোথাও মিটিমিটি আলো জ্বলে।কংলাক পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার পর নেমে আসে আবীরেরা। দুপুরের হালকা খাবারের পর এখন প্রচন্ড খিদে পেয়েছে ওদের। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে ওরা।পরটার সাথে মাংসের ঝোল আর চা পান শেষে বেরিয়ে আসে ওরা। অবশ্য এবার বিল পরিশোধ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়নি ওদের। স্থানীয় এক কিশোর ওদের অতিথি আপ্যায়ন করায়।উদর পূর্তি শেষে ওরা একটি মুরগির দোকানে যায়।সেখান থেকে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে ফিরে আসে পাহাড়ি কামরায়।আজকে রাতে পাহাড়িদের সাথে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে।গল্প কথায় কেটে যায় খাবারের সময় জানা যায় পাহাড়ে তাদের দুর্গম দুর্বিষহ জীবন যাপনের ইতিকথা।খাবার গ্ৰহণ শেষে চাঁদের আলোয় পাহাড়ের পথ ধরে এগিয়ে যায় আবীর ও হিমেল কংলাক পাহাড়ের চূড়ায়।সেখানে রাত্রি যাপন ছিলো রোমাঞ্চকর। সাজেকের কংলাক পাহাড়ে রাত যত গভীর হয় ততই নেমে আসে সুনশান নিরবতা।নিরবতার সাথে সঙ্গী হয় অন্ধকার আধো আধো আলো আর তীব্র শীতের মধ্য দিয়ে এখানে রাত পার করে মানুষ।রাতের বেশিরভাগ সময় জেনারেটরের মাধ্যমে আলো সরবরাহ করা হয়।হিমেল আর আবীর চা খেতে খেতে পরিচয় হয় এক আট বছরের চঞ্চল দুরন্ত ছেলের সাথে।ছেলেটির নাম তরুন! ছোটবেলায় ছেলেটি তার মাকে হারান।এরপর তার বাবা নতুন আরেকটি বিয়ে করায় বাবার আদর থেকে বঞ্ছিত হয় তরুন।এরপর চলে আসে সাজেকের কংলাক পাহাড়ে চায়ের দোকানে।সেখানে দোকানে দোকানে কাজ করে নিজের আহার যোগাড় করে ছেলেটি।যেসকল পর্যটক সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে তাদের সাথে খুব সহজে দারুন সখ্যতা গড়ে তুলতে দক্ষ ছেলেটি। পর্যটকেরা ও তাকে ভালোবেসে টাকা পয়সা দেয় আর ছেলেটি ও তাতে বেজায় খুশি হয়।ছেলেটির সাথে গল্প করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায় তাদের।এরপর সাজেকের কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট একটি ঘরে রাত্রি যাপন করে আবীর হিমেলরা।রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি তাদের।এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কেটে যায় নিমিষে‌।
খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে আবীরের। কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে।এরপর বের হয় রুম থেকে।ঝাপসা কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারদিক।দেখে মনে হচ্ছিল যেনো আকাশে উড়ে যাওয়া সফেদ মেঘের দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুইজন।আস্তে আস্তে পূর্ব আকাশে উদিত হয় সকালের সূর্য।রোদের আলোয় কেটে যেতে থাকে কুয়াশার দেয়াল। পূর্ব দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের পাহাড়ের নিচ থেকে সূর্যের আলো এসে পড়ে সাজেকের কংলাক পাহাড়ের শীর্ষে।দেখে মনে হচ্ছিল এযেন স্বর্গীয় কোন দৃশ্যপট।ভোর ছয়টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কংলাক পাহাড়ে মেঘ উড়ে যাবার দৃশ্য অবলোকন শেষে বেরিয়ে পড়ে আবীরেরা খাগড়াছড়ির উদ্দ্যেশ্যে। সাজেকের মানুষের সরলতা আর জীবন যাপন এবং সাজেকের সৌন্দর্যকে স্মৃতিতে নিয়ে একটু একটু করে এগুতে থাকে ওরা এত মুগ্ধকর দৃশ্য বোধহয় বাকি জীবনে আর দেখা হবে কিনা সন্দেহাতীত।