Posts

গল্প

টেপ রেকর্ডারের দিনগুলোতে...

July 29, 2024

ফখরুল ইসলাম

232
View

আজ অনেক ভোরেই ঘুম ভাঙল আকবর আলীর। ঘড়ির কাটায় ঠিক কটা বাজে দেখেনি, অনুমান থেকেই এমনটা মনে হচ্ছে। আধো আলোতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল, ঘড়িটা ডেড হয়ে আছে অনেকদিন হলো। ব্যাটারি বিকল হওয়ার কথা অবশ্য হাওয়া বানু বলেছিল বেশ কয়েকবার। নতুন আরেকটা আনবে আনবে করেও বাজারে যাওয়ার পর আর মনে থাকে না। আকবর আলীর বয়সটাতো কম হলো না। গত অগ্রাহয়নে ৬৫ পেরোলো। হাওয়া বানু সেটা বুঝতে পেরেই ব্যাটারির কথা কাগুজে টুকে দিয়েছিল একদিন। সেই কাগজটাই কখন যে পকেট থেকে হাওয়া হয়ে গেছে কে জানে!

রাতের খাবার সেরে আকবর আলীর স্বভাবমতো রেডিওটা নিয়ে বসার অভ্যাস বহু পুরনো। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেশ বিদেশের নানান খবর শোনার বাতিক। মাঝে মাঝে মন ভালো থাকলে একআধটা আধুনিক সঙ্গীতও শোনা হয়। গতকাল রাতে সেসবরই কিছুই হয়নি। খেয়ে সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী হাওয়া বানু কিংবা বড় ছেলের বউ সেজুতি একবারের জন্যও বলেনি বাবার কি হয়েছে। সবাই যেন কিছু একটার অপেক্ষায়!

সকালের নাস্তা সেরে আকবর আলী চায়ের কাপ হাতে ঘরের দরজার পাশে চেয়ার পেতে বসে আছেন। তার দৃষ্টি বাড়ির প্রবেশদ্বার বরাবর রাস্তায়। সৌদি প্রবাসী বড় ছেলে শরীফের একটা ডাক আসার কথা। পাশের জেলার এক ছেলে শরিফের সঙ্গে সৌদিতে থাকে। সম্প্রতি সে দেশে ফিরেছে। তার মাধ্যমেই ডাকটা পাঠিয়েছে আকবর আলীর ছেলে। সে আবার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পার্সেলটা বাড়িতে পাঠিয়েছে।

সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ। হ্যাঁ, ডাক অফিসের পিয়নই আসছে। আধখাওয়া চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়ালেন আকবর আলী। উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছিল তার। অনেকদিন ছেলেটার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। অনেকে স্বজনদের কাছে বিদেশবিভুঁইয়ে থেকে চিঠি লেখে তবে শরিফ এসবে নেই। সে টেপ রেকর্ডারে কথা রেকর্ড করে চার-ছয় মাস অন্তর অন্তর ক্যাসেট বাড়িতে পাঠায়। বাড়ি থেকেও একই কায়দায় কথা রেকর্ড করে পাঠানো হয়। মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার থাকলে গঞ্জের টেলিফোনের দোকান থেকে ফোন করা হয়। যদিও ঠিকমতো কথা বলা যায় না আর তাছাড়া অনেক ব্যয়বহুলও। সে তুলনায় ক্যাসেটে মন ভরে কথা ধরে রাখা যায়।

Comments

    Please login to post comment. Login