কোটা আন্দোলন কি, কেন, কিভাবে এবং আরও আনুষঙ্গিক আলোচ্য বিষয় এই মুহূর্তে চলতেছে। না, এসবের ভেতর যাইতেছি না। আমার আলাপ অন্যখানে। আমার আলাপ আমাদের জাতির মস্তিষ্করে নিয়া, জাতির মস্তিষ্কের কাছে। অবশ্যই সেইটা প্রত্যেকের আলাদা আলাদা মস্তিষ্কের কাছেই। এই পর্যায়ের মাস আপরাইজিং বলা হইতেছে ১৯৫২ এর পর এই প্রথম। হইতেই পারে। সংখ্যার বিচারে, ব্যাপ্তির বিচারে এইরকম হয়তো আসলেও বায়ান্নর পরে এই প্রথম। কিন্তু আসলেও কি ছাত্র আন্দোলনটা আন্দোলন বা বিপ্লবের জায়গা থেকে পিওর? জানি, আমারে সন্দেহ করতেছেন এখন! ঠিক এইটাই আমার আলাপ। আমরা কোন বিষয়ে তৃতীয় আলাপ-তৃতীয় পক্ষ রে চিনি না, চেনার চেষ্টাও করি না। নাকি বলা উচিত বুঝি না। আমাদের কাছে একসময় ফুটবল মানে আছিল হয় আবাহনী নয় মোহামেডান অথবা আর্জেন্টিনা নয়ত ব্রাজিল। আপনারা একটু ঘাটলে দেখতে পাবেন, একদল মানুষ আছে যারা আবাহনী-মোহামেডানের বাইরে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের বাইরে বাকি দলগুলারে চিনে না। অথবা চিনলেও, জানে না, মানে রেকগনাইজ করে না। এর অর্থ আসলে কি দাঁড়াইলো? আপনি যখন ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধের ডামাডোলে অন্ধ হয়া যান, তখন অন্য যোগ্য বা যোগ্যতর দলগুলা আসলে আমাদের মনযোগ বঞ্চিত হয়। এইটারে যোগ্যতার প্রতি অন্যায্য আচরণ কইলে কি ভুল বলা হইবো? আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল ছাড়া অন্তত আরও দশটা বিশ্বমানের দল আছে যারা সবাই প্রায় একই পরিমান ঐতিহ্যবাহী, ফুটবল খেলুড়ে জাতি হিসাবে। এই সমস্যাটা হয় আমাদের সব ক্ষেত্রেই। আমরা চায়ের দোকান থেইকা হোটেল-রেস্তোরাঁয় আড্ডায় এবং তর্কে সবসময়ই বিশ্বাস করি, হয় এসপার নয় ওসপার। তৃতীয় কিছু আমাদের ভাবনায় কখনও আছিলো না, এখনও নাই। অথচ উত্তর আধুনিক মানুষের মন, মানসিক গভীরতা আজ জ্ঞানে ধ্যানে যেইখানে পৌঁছাইছে সেইটা বোধকরি আমরা জাতিগত ভাবে ভাবতেও পারতেছি না।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে আমরা সারা জীবন যাইনা আসছি এখানে রাজনীতি মানেই আওয়ামী লীগ নয়ত বিএনপি। এখনও পর্যন্ত বিগার স্কেলে বিষয়টা যদিও তাইই। কিন্তু তৃতীয় ভাবনারে ধর্তব্যের মধ্যে হিসাব করা জরুরি, নিজেদের উত্তরণের জন্যই। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “না” ভোটের প্রবর্তন করা হইছিল, যেইটা তৃতীয় ভাবনারে কোন দিন প্রাধান্য না দেয়া জাতি হিসাবে আমরা খারিজ করছিলাম। জানি অনেকে বলবেন জাতীয় সংসদে রাজনীতিবিদগণ খারিজ করছেন, পাবলিক না। আমি মতান্তরের হিসাবে বলতেছি। অথবা সরাসরিও ভাবতে পারেন। এই রাজনীতিবিদরা যেহেতু এই দেশ এই সমাজেরই মানুষ, মঙ্গল গ্রহ থেইকা আসে নাই। তারা সংসদে যা বলে এবং করে সেই সব তো এই দেশের মানুষেরই একরকম রিফ্লেকশন, সে হয়তো পার্সেন্টেজের হিসাবে বাড়বে বা কমবে। এই যে কোটা আন্দোলন হইতেছে, এইটা কিন্তু আপনি বা আমি কেউ যেহেতু গোয়েন্দা পুলিশে কাজ করি না, শত ভাগ বিশ্বাসের সাথে জানি না এবং বলতেও পারি না আন্দোলনটা পিওর এবং অরগ্যানিক। আমরা প্রকৃত অর্থে জানি না এই আন্দোলনের পেছনে ভিন্ন কোন শক্তির সহায়তা আছে কিনা। তবে আমরা এতটুকু কি ভাবতে পারি, যে এই জাতীয় ঘৃণ্য কাজ আমাদের দেশের কনটেক্সটে ভাবলে যে কেউ করতে পারে? সেরকম সম্ভাবনারে আপনি বা আমি উড়ায়ে দিতে পারবো কি? মোটেও ভাববেন না ভিন্ন কোন শক্তির প্রভাব বা সহায়তা থাকলে এই ছোট বাচ্চাগুলারে রাজাকার জাতীয় ট্যাগিংয়ে ফালায় দেয়া যাবে? আর আমরা তা মাইনা নিবো। তাদের নির্বিচারে গুলি-গ্রেফতার করবেন, আর আমরা চুপ কইরা থাকবো? বিষয়টা যদি তেমন হয়া থাকে, সেইক্ষেত্রে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র টুল হিসাবে ব্যবহার করা হইছে, এবং এখন স্কেপগোট হিসাবে ব্যবহার করা হইবো। আবার বিষয়টা সেইরকম নাও হইতে পারে। আবার ধরেন এমনও হইতে পারে, এই পুরা কোটা সংষ্কার আন্দোলনটাই একটা মুখোশ আন্দোলন। এর নেক্সট লেয়ার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন, যেইটা বোধকরি এখন বোঝা যাইতেছে।
দেখেন কারণ অথবা কনটেক্সট যাই হোক, আমরা যখন একটা রাজনৈতিক ঘটনারে তৃতীয় মানে তিন নাম্বার প্রোব্যাবিলিটি দিয়া দেখতে পারবো, অথবা আরও বেশি সংখ্যক প্রোব্যাবিলিটি দিয়া দেখতে পারবো, ভাবতে পারবো, বিষয়টা উত্তর আধুনিক সময়ের মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য আরও মঙ্গলজনক হইবো। প্রোব্যাবিলিটির সংখ্যার সাথে সাথে আমাদের রাজনৈতিক উত্তরণের পথও সুগম এবং সুষ্ঠু হইতে হবে। দিন শেষে আপনি যত বেশি তৃতীয় অথবা ততোধিক রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বের সাথে নিজেরে সন্নিবেশিত করতে পারবেন, আপনার দেশ যিনি শাসন করবেন তিনিও ততখানি উত্তরণ এবং প্রগতির মুখাপেক্ষী হবেন আপনার, আপনার দেশের এবং অবশ্যই তার নিজের জন্যও। আমরা যেন একটা উন্নত দেশ হয়া উঠতে পারি, সেই প্রত্যাশা রাখলাম।