অতল শ্রদ্ধা জানাই বঙ্গবন্ধুর পুণ্যস্মৃতির প্রতি। যিনি বহুবার বহু জায়গায় বলেছেন, আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা ও আত্মসংযম'র কথা। কিন্তু আমরা হয়েছি পুরোই উল্টো। ওই উল্টো পথে আমাদের বেপরোয়া গতি সুপারসনিক উড়োযানকেও হার মানায়। ন্যূনতম লজ্জার মাথাটাও গিলে খেয়ে কী কী সব করে চলেছি আমরা! কতবার ভাবি এই বুঝি সরকারি লোকজন সাধুসন্তু হয়ে গেল। দেশটার মানুষের আর দুঃখ থাকবে না। যতবার এমনটা ভেবেছি, গুনে গুনে ঠিক ততবার বেনজীর-মতিউরদের শ্রীচেহারা বের হয়ে এসেছে। সরকারি ছত্রছায়ায় পিছল কুঁচো মাছের মতো অচল সিস্টেম গলে বেরিয়েও গেছে। অতঃপর আশা ছেড়ে দিয়েছি। মেনে নিয়েছি ওরা আর ভালো হবে না।
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের অনুসারী ও মুক্তিকামী মানুষকে উদ্দীপ্ত করতে বারবার বহু ভাষণে বলেছেন, 'আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।'
এইসময়ের প্রেক্ষিতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরাও এই শ্লোকটি বলতে শিখেছে। কিন্তু সরকারি বাহিনীর একদম ওদিকে খেয়াল নেই। জলকামান বা পিপারস্প্রে দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা গেলেও আরক্ষা বাহিনী ব্যবহার করছে প্রাণঘাতী বুলেট। ম্যাসাকার করবার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে কথিত অদৃশ্য দুষ্কৃতিকারীদের।
বঙ্গবন্ধু বলতেন, জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এই কথা মনে রাখতে হবে। আমি বা আপনারা সবাই মৃত্যুর পর সামান্য কয়েক গজ কাপড় ছাড়া সাথে আর কিছুই নিয়ে যাব না। তবে কেন আপনারা মানুষকে শোষণ করবেন, মানুষের উপর অত্যাচার করবেন? বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত –শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।
আমরাও বঙ্গবন্ধুর স্বরে সুর মিলিয়ে সমস্বরে বলি, শোষিতের পক্ষ ছাড়া আমাদের অন্যকোনো পক্ষ নেই। আপনাদের মনে যদি শোষণ করবার ন্যূনতম ইচ্ছাও থেকে থাকে প্লিজ আপনারা অফ যান।
বঙ্গবন্ধু বিপ্লবের কান্ডারি ছিলেন। তিনি গণ অধিকার আদায়ে বিপ্লবকে রীতিমতো নার্সিং করেছেন। তিনি বলতেন, গণআন্দোলন ছাড়া, গণবিপ্লব ছাড়া বিপ্লব হয় না।
বঙ্গবন্ধু খুব ভালো কথা বলেছেন রাজনীতিবিদদের নিয়ে।
'অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোন দিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।' ও মিস্টার পলিটিশান, আপনারা যদি যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারেন, খামোখা সময়কে কেন ডিস্টার্ব করবেন?
১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষকে সেবা করে মন জয় করতে হবে। তোমাদের কাছে আমার নির্দেশ, তোমাদের কাছে আমার আবেদন, তোমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমাদের কাছে রাতের আরাম, দিনের বিশ্রাম হারাম, আমাদেরও কাজ করতে হবে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ জন্মগ্রহণ করে নাই। বাংলাদেশে শোষণহীন সমাজ গঠন করার জন্যই আওয়ামী লীগ জন্মগ্রহণ করেছে। শোষণহীন সমাজ গড়ে তুলতে হবে। লোভের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। লোভ যেখানে ধ্বংস সেখানে। একবার যদি কেউ লোভী হয়ে যায়, সে জীবনে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। শুধু আপনার মুখে কালি দেবে না, কালি দেবে সেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখে। যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ স্বাধীন হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু-ভাসানীর প্রিয় আওয়ামী লীগের কথা সবাই জানে। এখনকার আদর্শচ্যুত উচ্চ ফলনশীল আওয়ামী লীগের জন্য এটাই বলবার যে, 'একবার যদি কেউ লোভী হয়ে যায়, সে জীবনে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। লোভ যেখানে ধ্বংস সেখানে।'
লেখক: সাংবাদিক
০১ আগস্ট ২০২৪