বন্ধুত্বের ঊর্ধ্বে নৈতিকতা-মানবিকতা বইলা বইলা যারা নিজেরে একখান মানবিক মুলা হিশেবে হাজির করতেছেন তাদের উদ্দেশ্যে।
প্রথমত, বন্ধুত্ব কোনো শর্ত-সাপেক্ষ বিষয় বা সম্পর্ক নয় যা আপনি ঠিক করতে পারেন যে আপনি কেমন বন্ধু নিবেন আপনার জন্য। আপনি চাইলেই আপনার জন্য একটা নীতিবান-মানবিক বন্ধু বানাতে পারবেন না। যদি পারতেন তাহলে সকল নীতিবান-মানবিক বন্ধুগুলো একদিকে আর অনৈতিক-অমানবিক বন্ধুগুলো অন্যদিকে ভাগ হয়ে যেতো। তা হচ্ছে না। নৈতিক-অনৈতিক মিলেমিশেই বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, বলতে পারেন যে বন্ধুত্ব তাহলে কেমন? সত্যি বলতে আমার কাছে বন্ধুত্বের কোনো সংজ্ঞা নেই। আমি জানিনা বন্ধুত্বকে কীভাবে একটা বিশেষণে আবদ্ধ করা যায়। আদৌ কি যায়? এটা আলোচনার বিষয়, আবার নয়।
বন্ধুত্বের পরে সম্পর্কটা বিভিন্ন দিকে গড়াইতে পারে। সেটা মানবিক-অমানবিক, নৈতিক-অনৈতিক সবই হইতে পারে। এটাই চির সত্য। বন্ধুত্বকে যারা এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চায়, তাদের বন্ধুত্ব কতো ঠুনকো; সেটা ভেবেই তো আফসোস হয় আমার।
পৃথিবীর ভালো এবং খারাপ কাজ ঘটে যাওয়ার পিছনের নায়কদের খুঁজলে সেখানে বন্ধুত্বের নিদর্শন পাওয়া যায়। তারমানে তো এই নয় যে, বন্ধুত্বের কারণেই এসব হয়েছে। আপনার ভালো বন্ধু নেই তারমানে যে বন্ধুত্বটাই খারাপ এই নয়।
নীতি-আদর্শ-মানবিকতা ইত্যাদি বিশেষণ গুণাবলি একান্তই ব্যক্তিগত। এককভাবে কেউ সেগুলো নিজের মধ্যে লালন না করলে সেটা যৌথভাবে সম্ভব নয়। এগুলো চর্চার বিষয়। তবে কারোর থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার বিষয়টা থেকে যায়। বন্ধুত্ব একটা সম্পর্ক। বন্ধু হলো এই সম্পর্কের কাঁচামাল। এখানে বন্ধু কিংবা বন্ধুত্বের দোষারোপ করাটা বোকামি। ব্যক্তি অমানবিক হতে পারে, বন্ধু নয়। ব্যক্তি অনৈতিক হতে পারে, বন্ধু নয়। আমি বলছি না যে বন্ধু বা বন্ধুত্ব একদম উচ্চ মাকামের সম্পর্ক বা তেমন কিছু। কিন্তু আপনি কিছু বিশেষণের জন্য বন্ধু-বন্ধুত্বকে ব্লেইম দিতে পারেন না।
পরিশেষে, বন্ধুত্ব-বন্ধু সকল বিশেষণের ঊর্ধ্বে। এটাই সত্য।
বন্ধুত্ব চিরজীবী হউক।