পোস্টস

প্রবন্ধ

সুন্দরবন দিবস এবং দক্ষিণাঞ্চলের গীতরঙ্গ - মুহাম্মদ আল ইমরান।

১০ আগস্ট ২০২৪

মুহাম্মদ আল ইমরান

১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়।

"২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে 'সুন্দরবন দিবস' ঘোষণা করা হয়।"

ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছরই বর্ষাকালে ছোট থেকে মাঝারি আকারের বন্যা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ঘূর্ণিঝড় বা বন্যা প্রভাব সেভাবে পড়তে পারেনা। কেননা সুন্দরবনের গাছপালায় এই ঝড় বাধা পেয়ে দূর্বল হয়ে পরে৷ সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে। প্রতি বছর বহির্বিশ্বের ও দেশের হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে। তাই এ কথা বলতে বাঁধা নেই যে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেশ ভূমিকা পালন করে সুন্দরবন।

এবার আসা যাক দক্ষিণাঞ্চলের গীতরঙ্গে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর নাট্যকলা বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, ড. কামালউদ্দিন কবির স্যার "বাংলার গীতরঙ্গ" পাঠে গীতরঙ্গকে ৪ ভাগে ভাগ করেছেন। সেখানে একটি অংশ হলো জন আখ্যানমূলক গীতরঙ্গ। যাতে আছে পালা, যাত্রা, গীত, কিস্সা বা কাহিনি।

দক্ষিণাঞ্চলের সাহিত্য খুবই জনপ্রিয় কাহিনি হলো 'বনবিবি'। যা মূলত সুন্দরবন এলাকা সম্পর্কিত। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো:
"...ইব্রাহিম নামের এক আরব সওদাগর তার স্ত্রী গুলাল বিবিকে নিয়ে জাহাজে দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় বাণিজ্য যাত্রায় আসেন। আরব সাগরের সেই জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলে রায়মঙ্গলের মোহনায় থামে। গুলাল বিবি তখন সন্তানসম্ভবা। ইব্রাহিম তার স্ত্রীকে এই বনের মধ্যে বিসর্জন দেয়। অজানা-অচেনা, গহীন অরণ্যে থেকে যেতে হয় গুলাল বিবিকে। গুলাল বিবির দুঃখ দেখে পশুরাও তাদের হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে আসে সাহায্যে। সকলে তাকে মায়ের মত ভালোবাসে। এই বনে গুলাল বিবির যমজ সন্তান হয়। পত্রের নাম রাখা হল শাহ জংলি এবং কন্যার নাম রাখা হল বনবিবি। বিপদ-আপদ, ভালো-মন্দের সহায় বুনোরা। সুন্দরবন এলাকার রামমঙ্গল, বাঁশখালি, আন্ধারমানিক এসব জায়গা দখল করে সারা বনের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে যান বনবিবি। তিনি হয়ে ওঠেন বনের মাতা বা বনবিবি। কেউ কেউ তাকে বনদেবীও বলে থাকেন।..."

আমাদের জীবন নির্ভর আত্মপরিচয় অনুসন্ধান করতে গেলে আমরা পেয়ে যাই গীতরঙ্গ। অর্থাৎ গীত, বাদ্য, নৃত্য ও নাট্য। এসব জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাসের সাথে। সুন্দরবনের ইতিহাস বলতে গেলে বনবিবির কাহিনি গ্রামের মানুষের নিকট বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়। আর এসব কাহিনি আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ স্বরুপ। বর্তমান সময়ে গ্রামীণ জনপদের গীতরঙ্গ আমরা ভুলতে বসেছি। তাই সুন্দরবন দিবসে আমাদের এই দৃঢ় অঙ্গীকার হোক আমাদের আত্মপরিচয়ের স্বার্থে হলেও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের গীতরঙ্গ তথা বাংলার গীতরঙ্গ চর্চা করতে হবে।