পোস্টস

চিন্তা

যুদ্ধের অনন্ত চক্র: মুক্তির অসমাপ্ত যাত্রা

১১ আগস্ট ২০২৪

আলিফ রহমান বিজয়

মানব ইতিহাস যেন এক অবিরাম যুদ্ধের কাহিনী। মুক্তির জন্য লড়াই, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা - এই সবই মানুষকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দাসপ্রথা বিলোপ থেকে শুরু করে নারীর অধিকার আন্দোলন, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ - প্রতিটি যুগে মানুষ নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই লড়াইয়ের শেষ কোথায়? মুক্তির এই যাত্রা কি কখনো সমাপ্ত হবে?


 

ইসলাম ধর্মে যুদ্ধকে অন্যায় বলে গণ্য করা হলেও, আত্মরক্ষা এবং নিজেদের ধর্ম ও সম্পদের রক্ষার জন্য যুদ্ধকে জায়েজ বলে মনে করা হয়।


 

কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমাদেরকে যুদ্ধ করা ফরজ করা হয়েছে, যদিও তা তোমাদের জন্য অপছন্দ হয়।" (সুরা বাকারা: ২১৬)


 

অর্থাৎ, যুদ্ধ একটি কঠিন পরিস্থিতি, কিন্তু কখনো কখনো এটি অনিবার্য হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে, হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা নির্দোষ মহিলা, শিশু এবং অসমর্থ বৃদ্ধদেরকে হত্যা করো না। কোনো শত্রুকে আগুনে ফেলে মেরো না। ফলন্ত বৃক্ষ কেটো না কিংবা পরাজিতদের সম্পত্তি নষ্ট করো না" (আবু দাউদ)।


 

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, ইসলাম শান্তিকে উৎসাহিত করে। যুদ্ধ শেষ উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। যুদ্ধ শুরু হলেও নিরপরাধ, মাজলুমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো।


 

রাজনৈতিক মুক্তির জন্য বিপ্লব, স্বাধীনতার যুদ্ধ - এই সবই ইতিহাসের পাতায় লেখা। কিন্তু অনেক সময় একটি শাসককে উৎখাত করে অন্য একটি শাসক ক্ষমতায় আসে। মুক্তির নামে নতুন করে শোষণ শুরু হয়। সামাজিক মুক্তির লড়াইয়ে বর্ণবাদ, জাতিবাদ, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠে। কিন্তু সমাজের গভীরে রোপণ করা এই বৈষম্য দূর করা সহজ নয়। ইসলামে সকল মানুষকে সমান বলে গণ্য করা হয়।


 

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "আরবী কোনো আরবের উপর, এবং কালো কোনো গোরার উপর কোন শ্রেষ্ঠত্ব রাখে না। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ার মাধ্যমে।" (বায়হাকী)


 

অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে দারিদ্র্য, অসমতা, শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলে। ইসলামে জাকাতের মতো ব্যবস্থা দারিদ্র্য দূর করার জন্য রয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমাদের ধন-সম্পদ থেকে নির্ধারিত পরিমাণ জাকাত দাও, যাতে তা তোমাদের জন্য শুদ্ধিকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়।" (সুরা তওবা: ১০৩)


 

বৌদ্ধিক মুক্তির লড়াইয়ে অন্ধকার, অজ্ঞতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলে। ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।" (ইবনে মাজাহ)


 

-মুক্তির ধারণা কী?

-সত্যিকারের মুক্তি কী?

-মুক্তির জন্য কী করণীয়?


 

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমাদের মুক্তির ধারণা সম্পর্কে স্পষ্ট হতে হবে। ইসলামে মুক্তির অর্থ হলো আল্লাহর আনুগত্য করা এবং তার হুকুমের বশীভূত হওয়া।


 

যুদ্ধ হলো সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। তাই যুদ্ধের বিকল্প খুঁজতে হবে। আলোচনা, সংলাপ, সহযোগিতা - এই সবই সমস্যার সমাধানের পথ। ইসলামে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করা হয়।


 

মুক্তির পথ সহজ নয়। এটি একটি দীর্ঘ এবং কঠিন যাত্রা। এই যাত্রায় আমাদের সকলকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষা, সচেতনতা, সহযোগিতা এই সবই মুক্তির পথে আমাদের গাইড করে।

যুদ্ধের ইতিহাস বলছে, মুক্তির যাত্রা কখনো শেষ হয় না। কিন্তু আমরা হার মানতে পারি না। আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য, মানবতার জন্য।


 

ইসলাম ধর্ম মুক্তির জন্য লড়াইকে সমর্থন করে, কিন্তু শান্তিপূর্ণ উপায়ে। যুদ্ধ শেষ উপায়। ইসলাম মানুষকে ন্যায়, সত্য এবং সমানতার পথে চলতে উৎসাহিত করে। মুক্তির যাত্রা একটি কঠিন পথ হলেও, ইসলামের শিক্ষা আমাদেরকে এই পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।