"এইসব দিনরাত্রি" হুমায়ূন আহমেদের রচিত একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক টেলিভিশন নাটক।
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তীর নাম হুমায়ূন আহমেদ। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার। তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও বেশ সমাদৃত।
একটা সময় বাংলাদেশে টেলিভিশন নাটক ছিলো বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। আর সেই টেলিভিশন শব্দটি শুনলে ঐ সময়ের মানুষ বুঝতো বিটিভি'কে। আর ১৯৮৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয় হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় নাটক, "এইসব দিনরাত্রি"। প্রতি মঙ্গলবার প্রচারিত হত নাটকটি। ঐ সময়ে সবার বাসায় টিভি ছিল না। যাদের বাসায় টিভি থাকতো তাদের বাসায় ভিড় পড়ত। বর্তমানে "এইসব দিনরাত্রি" নাটকটি "বাংলাদেশ টেলিভিশন" এর ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়। সেখানে মোট ৫৯টি পর্ব আছে। প্রতিটি পর্বের সময়সীমা ২০-২২ মিনিট।
একান্নবর্তী পরিবারের এই নাটকে রয়েছে আশা, আনন্দ, ব্যর্থতা। জীবন অতিক্রম করতে নানাবিধ পথ পাড়ি দিতে হয়। সবাই চায় জীবনকে সুন্দর ভাবে অতিবাহিত করতে। গল্পের রফিক চরিত্রেক কথাই বলি না কেন! নাটকে রফিকের দৃশ্য শুরু হয় সাধারণ জ্ঞানের বই মুখস্থ করার অবস্থায়। রফিক চাকরির জন্য মুখস্থ করতে সাধারণ জ্ঞান। সেও তার জীবনকে সুন্দর রাখতে চায়। আর সেজন্যই সে বই পড়ে নিজেকে প্রস্তুত করছে প্রতিযোগিতার জন্য। নাটকের শেষ দৃশ্য নীলু স্মৃতিচারণ শেষে একটি পাখি কিনে পার্কে ঘুরতে আসা মেয়েটিকে উপহার দিচ্ছে। কিন্তু এই দৃশ্য আবেগের প্রতিফলন ঘটিয়ে চাইলে মেয়েটির বাবা-মা উপহার নিতে পারতো। কিন্তু না। তারা উপহার নেয় নি। কেনই বা নিবে নীলু তো তাদের পরিচিত কেউ নয়। শাহানার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় খুবই ধনী একটি ছেলের সাথে। কিন্তু সে মনে মনে ভালোবাসে আনিসকে। পূর্ণতা পেল না তাদের ভালোবাসার। তবুও ভালোবাসা ভালো। ভালোবাসা মানে শ্রদ্ধা, সম্মান। তবে পূর্ণতা পেয়েছিলো অন্য চরিত্রদ্বয়ের মধ্যে- রফিক শারমিনকে ভালোবাসে। শারমিনের বিয়ে অন্যত্র ঠিকঠাক। কিন্তু শারমিন বিয়ে করে ফেলে রফিককে। হুমায়ূন আহমেদ তার সৃষ্টিকারী চরিত্রের মধ্যে সবসময় বাস্তবতা প্রধাণ্য দেয়। হুমায়ূন আহমেদের চরিত্র নিয়েও পৃথক গ্রন্থ বা লেখা বের হতেই পারে। সে বিষয়ে অন্য একদিন কথা হবে। তার বাস্তব চরিত্র রচনার তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। যিনি সুখী নীলগঞ্জের স্বপ্ন দেখেন। একজন শিক্ষকের অনেক দারুণ পরিকল্পনা থাকে তবে অর্থের কাছে সেই পরিকল্পনা হার মানে। কিন্তু নাটকে সুখী নীলগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবের দিকে যাত্রা করে।
নীলুর চাকরিতে প্রমশন হয় কাজের ব্যস্ততা বাড়ে। মেয়ে টুনির সঙ্গে দুরত্ব বাড়ে। এই দূরত্বের জন্যই কি টুনিকে হারাতে হলো নীলুর? অবশ্য হুমায়ূন আহমেদ তার চিন্তিত গল্পের প্রয়োজনে বাস্তবতা বুঝানোর জন্য নিষ্ঠুরতম কাজ করেন। যেমন দেখেছিলাম "কোথাও কেউ নেই" নাটকে বাকের ভাইর বেলায়। দেশে বাকের ভাইর মৃত্যু যাতে না হয় সে জন্য আন্দোলন চলে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ গল্পের প্রয়োজনে আবেগে ভেসে যান না। বাকের ভাইর মৃত্যু হলো। এমনকি দর্শক ঐ চরিত্রের অভিনেতার চল্লিশাও দিয়েছিলো। যাইহোক, নীলুর মেয়ে টুনি মারা যায়। শোনা যায়, অনেকেই হুমায়ূন আহমেদকে অনুরোধ করেছিলেন টুনি চরিত্রকে বাঁচিয়ে রাখার। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
নাটকটিতে অভিনয় করেন, দিলারা জামান(চরিত্র: মা), কাজী মেহফুজুল হক(চরিত্র: বাবা), বুলবুল আহমেদ(চরিত্র: শফিক), আসাদুজ্জামান নূর(চরিত্র: রফিক), ডলি জহুর(চরিত্র: নীলু), আবুল হায়াত, শিল্পী সরকার অপু(চরিত্র: শাহানা), ইনামুল হক(চরিত্র: মি করিম), খালেদ খান(চরিত্র: আনিস), নায়ার সুলতানা লোপা(চরিত্র: টুনি), লুৎফুন নাহার লতা(চরিত্র: শারমিন) ও আবুল খায়ের(চরিত্র: অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক) সহ আরো অনেকে।
প্রায় ৪০ বছর পরও "এইসব দিনরাত্রি" নাটকের জনপ্রিয়তা কমেনি বরং বেড়েছে। বর্তমান সময়েও শোনা যায় হুমায়ূন আহমেদের নাটকের প্রসংশা। তার রচিত ও পরিচালিত নাটকে পাওয়া যায় সহজ ভাষা। নাটক যে সমাজের দর্পণ স্বরুপ তার প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদের নাটকগুলো।
মুহাম্মদ আল ইমরান
তারিখ: ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই আগস্ট ২০২৪