পোস্টস

গল্প

*অবন্তি তোমাকে*

১৩ আগস্ট ২০২৪

Gouri Bhowmick

সকাল ০৭:০০ টা। অপূর্ব চলে গেল ঢাকা মেডিকেলের সামনে। সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। চোখে চশমা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর মোবাইলটা বারবার হাতে নিচ্ছে আর টাইম দেখছে। টাইম তো এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অপূর্ব কার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ? অবন্তীর জন্য।কেন জানি মনে হচ্ছে আজও আসবে না অবন্তি। কিন্তু অপূর্বর বিশ্বাস যদি আসে। অপূর্ব এখনো অপেক্ষা করেই যাচ্ছে। 

 

সকাল ৯ টা। এখনো ঢাকা মেডিকেল গেটের পাশে। কতগুলো মানুষ আসছে আর যাচ্ছে কিন্তু অবন্তি আসছে না।অপূর্ব কয়েকবার ফোনও করেছে  অবন্তীর মোবাইলে কিন্তু ফোন বন্ধ। অপূর্ব ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেল।

 

 অপূর্ব আর অবন্তী দুজনেই খুব ভালো বন্ধু। শুধু বন্ধু নয় ভালো বন্ধু। দুজনেই একসাথে স্কুলে, কলেজে এবং ঢাকা মেডিকেলে থার্ড ইয়ারে পড়ছে।অপূর্ব আর অবন্তীর বাবা খুব ভালো বন্ধু।
 

অবন্তি একটু দুষ্টু এবং বেখেয়ালি। কোনো ব্যাপারেই সিরিয়াস ছিল না কখনো। প্রায় সময়ই একে এই কথা দিত আর ওকে ওই কথা দিত। কিন্তু কোনো কথাই রাখার মত এতটা সিরিয়াস সে ছিল না। সেরকমই অপূর্বকে একদিন বলেছিল সকাল ৭:০০ টায় ওর সাথে রিক্সায় করে ঘুরে আসবে ঢাকা শহরটা কিন্তু এবারও অবন্তী সিরিয়াস ছিল না।এরকম আরো কয়েকবার ঘটেছে অপূর্বর সাথে। কিন্তু অপূর্ব বারবার অবন্তিকে বিশ্বাস করে। কারণ অপূর্ব অবন্তিকে ভালোবাসে । ভালোবাসে মানে একটু বেশিই ভালোবাসে। 

 

সেই দিনের ঘটনার পর অপূর্ব ঠিক করেছে আর অবন্তীর সাথে কথা বলবে না অপূর্ব অবন্তীর কোন ফোন রিসিভ করছে না। ক্লাসে গেলেও অবন্তীর সাথে কথা বলছে না কিন্তু অবন্তি বুঝতেও পারছেনা কেন অপূর্ব এরকম করছে কারণ অবন্তি এরকমই।

 

কিছুদিন পর

অবন্তী ওর বাবা মার সাথে অপূর্বর বাসায় গেল। অপূর্বর বাবা-মা অপূর্বকে ডেকে বললো তোমার আংকেল আন্টি এসেছেন ।অপূর্ব দৌড়ে চলে এলো। কারণ অপূর্ব আর অবন্তীর সাথে রাগ করে থাকতে পারছে না। অপূর্ব এসে অবন্তীর বাবা মাকে সালাম দিল। অপূর্বর মা তখন বলল অবন্তিকে নিয়ে তোরা ভিতরে গিয়ে কথা বল্।অপূর্ব নিয়ে গেল অবন্তিকে। ওরা ছাদে গেল। অবন্তীর সাথে অপূর্ব একটা কথাও বলছে না। কিন্তু অবন্তি একাই কথা বলে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল হল....... অপূর্ব কোন কথাই বলছে না শুধুমাত্র সে নিজেই কথা বলছে। কিরে তোর আবার কি হলো? তুই আমার সাথে কথা বলছিস না কেন ? ফোন ধরিস না ,ক্যাম্পাসে কোন কথা বলিস না। কি হয়েছে তোর? অপূর্ব চুপ করেই থাকছে। এক পর্যায়ে অবন্তি রাগ করে চলে যেতে চাইল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে অপূর্ব বলে উঠলো..... আসিস নি কেন সেদিন?অবন্তি বলল, কোন দিন? সকাল ৭ টায় মেডিক্যালের সামনে রিক্সা দিয়ে ঘোরার কথা ছিল আমাদের। তুই জানিস অবন্তি আমি দুই ঘন্টা ওখানে দাঁড়িয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করেছি।তোকে কতবার ফোন করেছি ..... মোবাইলটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিস। তুই বল এরপর তোর সাথে আমার কি করা উচিত। অবন্তি সব কথা শুনে অট্টহাসি শুরু করল। আর অপূর্বকে বলল, তুই কি ওই ব্যাপারটা সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিস। আরে বোকা আমি তো এমনি বলেছি। আচ্ছা ঠিক আছে যা sorry..... আর হবে না।অপূর্ব বলছে, "তুই তো এর আগেও এরকম কাজ করেছিস আর সরি বলেছিস ।তারপর আবার করিস।" অবন্তি বললো, বললাম তো সরি আর হবে না এরকম। কি আর করবে অপূর্ব। আবার সেই মায়াবী হাসিতে ফেঁসে গেল আর ওকে মাফ করে দিল। 

 

ভালোই চলে যাচ্ছে দুজনের। একদিন অপূর্ব অবন্তিকে নিয়ে ক্লাসের ফাঁকে ক্যান্টিনে বসে আছে।অপূর্ব হঠাৎ করে অবন্তীকে বলল, আচ্ছা অবন্তী তুই কি সত্যিই কিছু বুঝিস না? অবন্তি বলল, কি বুঝব? অপূর্ব বলছে, "না মানে আমার ব্যাপারে।" অবন্তি বলল, তোর ব্যাপারে আবার নতুন করে কি বুঝার আছে? অপূর্ব যেই অবন্তিকে ওর পছন্দের কথা বলতে যাচ্ছিল.... ঠিক তখনই অন্য সব বন্ধুরা চলে এল আড্ডা দিতে। অপূর্ব আর কিছু বলা হলো না অবন্তীকে। কি আর করা যাবে........।

 

এভাবেই কেটে যাচ্ছিল অপূর্ব আমাদের বলা না বলা সুন্দর জীবন। দুজনেই মেডিকেল ফাইনাল দিয়ে দিল। পরীক্ষা শেষ। অবন্তীর বাসায় বসে থাকতে আর কিছুতেই ভালো লাগছে না। কোথাও ঘুরে আসতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। এই দিকে অপূর্বর একেবারেই ভালো লাগছে না অবন্তীকে না দেখতে পেয়ে। তারপর দুজনেই দুজনকে ফোন করছে একসাথে। দুজনেরই মোবাইল ব্যস্ত..... কিছুতেই ঢুকছে না।পরে অবন্তি অপূর্বর বাসায় ফোনে ফোন করেছে। অপূর্বর মা ফোনটা রিসিভ করলে অবন্তি অপূর্বকে চাইল। তারপর দুজনে কথা বলল। অবন্তি অপূর্বকে একটা কফি হাউজে আসতে বলল। কফি খেয়ে দুজনে ঘুরতে যাবে। অপূর্ব বলল আসবে। এত বড় সুযোগ পেয়েছে অবন্তিকে দেখার। অল্প কিছুক্ষণ সময় কাটানোর সেই সুযোগ অপূর্ব কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না।আর অপূর্ব এটাও ভাবছে আজ সে অবন্তীকে  বলেই দিবে যে সে অবন্তীকে কতটা ভালোবাসে। 

 

ঘড়িতে চারটা বাজে। অপূর্ব নীল রং এর  একটি ফুল শার্ট পড়েছে। সেই শার্টটা অবন্তি ওকে ওর জন্মদিনে গিফট করেছিল। অপূর্ব খুব আনন্দিত। রাস্তার পাশে একটি ফুলের দোকান থেকে অবন্তীর পছন্দের ২০ টা রজনীগন্ধা নিল।বিকেল পাঁচটার মধ্যে অপূর্ব পৌঁছে গেল সেই কফি হাউসে। এইদিকে অবন্তিতো রাস্তায়। প্রচুর জ্যাম পড়েছে আর অপূর্ব অপেক্ষায় বসে আছে। অবন্তীর কখন আসবে, কিভাবে প্রপোজ করবে, অবন্তি কি আমার প্রপোজ গ্রহণ করবে- এসব ভেবে চলেছে অপূর্ব।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখল ৫ টা ৫৫ বেজে গেছে। কিন্তু অবন্তিতো এখনো আসছে না। অপূর্ব চিন্তা করল একটা ফোন দিই। ফোন দিল কিন্তু মোবাইল বন্ধ বলছে অপূর্ব বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে মোবাইলে কিন্তু বারবার বন্ধ দেখাচ্ছে।এভাবে সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গেল। অপূর্বর হঠাৎ মনে পড়ল সে অবন্তি আগের মতো করছে না তো। ও আমাকে আবার বোকা বানালো। অপূর্বর খুব রাগ হলো। সব ফুলগুলো ছিড়ে ফেলে সে কফি হাউস থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে গেল। খুব কষ্ট পেয়ে অপূর্ব খুব কান্না করতে লাগলো।অপূর্ব ডিসিশন নিলো সে বিদেশ চলে যাবে। এই দেশে আর সে থাকবে না। সে এই কষ্ট আর কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সে অবন্তীর সাথে আর কোন রকম যোগাযোগ রাখছে না। 

 

অবন্তি অপূর্বকে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু অপূর্ব ফোন রিসিভ করছে না। অবন্তী হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে ভাবছে আমি আবার অপূর্বর সাথে এরকম করলাম। কিন্তু সেদিনতো আমার কোন দোষ ছিল না।আমি তো অপূর্বর সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু রাস্তায় আমার এই দুর্ঘটনা আমাকে যেতে দিল না কিন্তু অপূর্ব তো আমাকে ভুল বুঝছে। আমি এখন কি করবো?

কিছুদিন পর....... 
অপূর্বর মা বাবা অবন্তিকে দেখতে ওদের বাসায় গেল। সেখানে গিয়ে অবন্তির বাবা মাকে কথায় কথায় বলে উঠল অপূর্ব সামনের সপ্তাহে বিদেশ চলে যাচ্ছে অপূর্ব। সেটা শুনতে পেল অবন্তীর বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল। অবন্তি মনে মনে ভাবছে আমার অপূর্বর বিদেশ চলে যাবে শুনে এরকম লাগছে কেন। এটা তো আনন্দের খবর। অবন্তি আবার অপূর্বকে ফোন দিল কিন্তু অপূর্ব ফোন সুইচ অফ। কিছুতেই ভালো লাগছে না। অবন্তি বুঝতে পারছে না কেন শুধু অপূর্বকে দেখতে ,ওর সাথে কথা বলতে মন চাইছে।অবন্তির কেন এত খারাপ লাগছে, ছটফট করছে ভিতরটা। অপূর্ব কি আমার অ্যাক্সিডেন্টের কথা জানতে পারিনি নাকি রাগ করে আমাকে দেখতে আসেনি।

অপূর্ব চলে যাওয়ার আগের রাত সব প্যাক করা শেষ অপূর্ব অবন্তীর গিফট করা সবকিছু নিয়েছে। অপূর্বর বারবার অবন্তীর কথায় ভাবছে। ও ভাবছে কি করা যাবে অবন্তিকে থেকে ছেড়ে। একবারের জন্য অবন্তীর সাথে কথা হলো না। ওকে দেখলাম না। এসব ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেল।এদিকে অবন্তি এয়ারপোর্ট যাবে ওর বাবা-মার সাথে। কিন্তু ওর বাবা-মা এই অসুস্থ শরীর নিয়ে অবন্তিকে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। কিন্তু অবন্তী ওর বাবা মাকে সব খুলে বললো আর কান্নাকাটি করল এবং উনারা রাজি হয়ে গেল।

এই দিকে অপূর্ব এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ রেডি। বাবা-মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। রাস্তায় হেঁটে যেতে যেতে ভাবছে ,আমার কি আর অবন্তীর সাথে কখনোই দেখা হবে না? আমার এত খারাপ কেন লাগছে?মনে হচ্ছে বুকের ভিতরের সবকিছু উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব ভাবছে একটা মিরাকেল যদি আমার সাথে হতো। একবার যদি অবন্তীর সাথে দেখা হয়ে যেত। তাহলে...... । এমনিতেই হঠাৎ একটি ডাক শুনতে পেল অপূর্ব। মনে হচ্ছিল কেউ একজন অপূর্ব বলে ডাকলো। অপূর্ব বলছে এমন কেন মনে হল যে অবন্তি আমায় ডাকছে। অপূর্ব ভাবছে এটা ওর মনের ভুল। এটা হতে পারে না। অপূর্ব আবার শুনতে পেল সেই ডাক।পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে অবন্তি দাঁড়িয়ে আছে। অপূর্ব নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। অবন্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো অপূর্বর কাছে। অপূর্ব চোখ সরাতে পারছে না অবন্তীর দিক থেকে। কি মিষ্টি লাগছে অবন্তিকে। নীল শাড়ি, নীল টিপ, খোপায় অপূর্বর প্রিয় বেলি ফুলের মালা আর হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ। অপূর্ব এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে সত্যিই অবন্তি।এমনি হঠাৎ অবন্তি বলে উঠল, "কিরে তুই আমাকে কিছু না বলে কোথায় চলে যাচ্ছিস? তুই কি জানিস তুই আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছিস? তুই বিশ্বাস কর আমি সেদিন তোর কাছে যাচ্ছিলাম কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম তুই আমাকে আবার ভুল বুঝলি। কিন্তু এবার কিন্তু আমার কোন দোষ ছিল না। তোকে আমি এ কথাটা জানানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তুই ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিস। তুই কেন এমন করলি?" অপূর্ব কিছু না বলে শুধু শুনেই যাচ্ছিল।অপূর্ব ওর ভুল বুঝতে পারল এবং অবন্তিকে সরি বলল। অপূর্ব এবার অবন্তিকে বলল.... তুই ভালো থাকিস। আমি এবার আসি। এই কথা বলে অপূর্ব চলে যাচ্ছিল। অবন্তি আবার পিছন থেকে অপূর্বকে ডাকল.....। অপূর্ব বলল, "কিছু বলবি?" অবন্তী বলল, "তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি ?তাহলে আমি কিভাবে থাকবো আমি যে তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি তোকে.......। আমি সব বুঝতে পেরেছি।"অবন্তী অপূর্বকে ফুলগুলো দিল আর বলল, "এবার আর ভুল হবেনা ।আমি প্রতিদিন সকাল সাতটায় তোর সাথে রিকশায় ঘুরতে চাই। তুই ঘুরবি না আমার সাথে। অপূর্ব বললো, "নিশ্চয়ই ...... ঘুরবো।"