পোস্টস

কবিতা

জুলাই বিপ্লবের কবিতা

১৭ আগস্ট ২০২৪

এনামূল হক পলাশ


 

***আবু সাঈদের বুক***

 

 

আবু সাঈদ,

ভাই আমার, 

পুত্র আমার, 

বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো 

এক বিশাল বুক নিয়ে 

জন্মেছিলে এই অভাগা দেশে।

তারপর ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই

পুলিশ ঝাঁঝরা করে দিলো তোমার বুক,

পুলিশ ঝাঁঝরা করে দিলো মানচিত্র।

 

 

আমি কীভাবে ভুলে যাব ভাই হারানোর বেদনা? 

আমি কীভাবে ভুলে যাব পুত্র হারানোর বেদনা?

আমি কীভাবে বয়ে বেড়াবো এই ঝাঁঝরা মানচিত্র? 

তুমি বুক পেতে নিরস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিলে

গাঢ় নীল অথবা হালকা জলপাই কালারের 

সসস্ত্র কুকুরগুলোর মুখোমুখি।

 

ইয়াবা ব্যবসায়ী কুকুরের দল মানচিত্রটি 

সদম্ভে নিজেদের পকেটে ভরে

গুলি করে দিলো তোমার নিরস্ত্র বুকে।

তুমি হাঁটু গেড়ে চেটে খাওনি শুয়োরের পা,

বাংলাদেশকে ফেলে রেখে দেখাওনি পিঠ,

বেজন্মার মতো চেপে ধরোনি মায়ের টুটি, 

কেননা একদিন তুমি জন্মেছিলে মাতৃগর্ভে।

 

 

আবু সাঈদ, তোমার বুক ঝাঁঝরা করে দিলো

আমার গাঢ় নীল জারজ ভাইয়ের দল।

হয়তোবা কোন মায়ের পেটে তাদের জন্মই হয় নাই,

হয়তো কোনো মা গোপনে জরায়ুতে ধারণ করেছিল 

অসংখ্য অসভ্য ইতরের বীর্য আর 

হয়তোবা আমিই এইসব কুকুরের পিতা।

আমি ঘরে বসে আছি তাই

আমাকে হত্যা করো।

 

 

আবু সাঈদ, তুমি আমার ভাই

আবু সাঈদ, তুমি আমার পুত্র

আবু সাঈদ, তুমিই আমার শিকার। 

আবু সাঈদ, আমি এক শিকারী ভাই

তোমার জানাজায় যেতে পারি নাই,

আমি এক শিকারী পিতা

যার রূহানী আত্মায় তুমি জন্মেছিলে বৃথা।

এমন এক সময়ে এসে গেছি আমরা-

ভাইয়ের মুখোমুখি ভাই থাকেনা নিরাপদ 

আর 

পিতার মুখোমুখি নিরাপদ থাকে না সন্তান।

 

 

মুখোমুখি দাঁড়িয়েছো!

কি চাও? অধিকার? 

মুখোমুখি আছো তাই 

তুমি আমার সহজ শিকার। 

আমি পুলিশের ভাই

আমি পুলিশের পিতা

আমার সামনে অথবা পেছনে কেউ নাই।

আমি অসংলগ্ন অপ্রকৃতস্থ হয়ে আছি

আবু সাঈদ, 

ইয়াবা ব্যবসায়ী কুকুরদের পিঠই আমার পিঠ।

আবু সাঈদ, 

তোমার চিতিয়ে রাখা বুকই আমার বুক।

ক্ষমা করে দিও ভাই আমার 

ক্ষমা করে দিও পুত্র আমার 

তোমার কবরে আমি সহযাত্রী হতে পারিনি।


 

(২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনরত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিরস্ত্র আবু সাঈদকে সামনে থেকে বুকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করে। তার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই ২০২৪ এই কবিতাটি লিখা হয়।)


 

***বাংলা বসন্ত***

 

 

২০২৪ সালের জুলাই মাসে 

ভরা বর্ষায় 

বসন্ত এসেছে এই বাংলায়। 

রক্ত স্নানের পরে ৩১ জুলাই   

বন্ধ হয়েছে ভাতের হোটেল। 

 

 

ভারতীয় কোটায় হওয়া মন্ত্রী 

নারায়ণ বাবু ঘুরছে পতাকা নিয়ে। 

পতাকার মাঝখানে লেগে আছে

গুলিতে ঝাঁঝরা মুগ্ধর রক্ত।

 

 

মুগ্ধর অপরাধ ছিলো অনেক, 

সে তৃষ্ণার্ত মানুষকে পান করাবে বলে 

পানি নিয়ে ঘুরছিলো রাস্তায়। 

তিস্তা ব্যারেজ অথবা ফারাক্কা দিয়ে

বন্ধ করা পানির ধারা খুলে দিয়ে- 

পানি লাগবে? পানি? পানি লাগবে?

বলে চিল্লাতে চিল্লাতে আমাদের পুত্র 

মুগ্ধ রাস্তায় নেমে এসেছিলো 

তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশকে পানি পান করাতে।

 

 

নারায়ণ বাবু, শুনছেন? 

আপনার প্রভূ আমাদেরকে 

তৃষ্ণার্ত রেখে মারতে চায় 

আর ইন্ডিয়ান হাই কমিশনার আসে 

আপনার কাছে ওয়াইনে গলা ভেজাতে।

 

 

নারায়ণ বাবু, 

আপনি যখন ক্ষমতার মদে চুর,

আমার মুগ্ধ তখন তৃষ্ণার্ত মানুষকে 

পানি দিতে নেমে পড়েছে রাস্তায়। 

আপনি আর আপনার প্রভু ভাবলেন,

মুগ্ধ দেশের জন্য ফারাক্কার পানি ছেড়ে দিচ্ছে 

মুগ্ধ দেশের জন্য তিস্তার ব্যারেজ খুলে দিচ্ছে। 

আর তখন আমার সন্তানের বুক 

আপনার প্রভুর পাঠানো পুলিশ কুকুর  

গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিলো।

 

 

নারায়ণ বাবু শুনছেন? 

২০২৪ সালের জুলাই মাসে 

ভরা বর্ষায়

বাংলাদেশে বসন্ত এসে গেছে। 

 

 

*৩২ জুলাই ২০২৪, নাগড়া, নেত্রকোণা