পোস্টস

সমালোচনা

ফাস্টফুড চলচ্চিত্রঃ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী- তুফানময়, ফাস্টফুড-ই যেনো যেন রোজগার রুটি

২০ আগস্ট ২০২৪

মাহজুবা তাজরি

ভালো মুভি কাহাকে বলে এটা নিয়ে আসলে একটি গবেষণা করার দরকার। কী কী বৈশিষ্ট থাকলে ভালো মুভিকে ভালো বা একটা সিনেমাকে আপনি খারাপ বলবেন? এটা বোঝানোটা কঠিন। সিনেমাকে তো লার্জার দ্যান লাইফ বলা হয়। লার্জার দ্যান লাইফ যদি সিনেমা হয় তাহলে সেটাকে ভালো কিংবা খারাপ ডিফাইন করাটা একটু অদ্ভুত না? লার্জার দ্যান লাইফ একটা বস্তুকে আপনি এই লাইফের রাইট-রঙ প্যারামিটার দিয়ে কেন চিন্তা করবেন? বরং এভাবে চিন্তা করা যায়। সিনেমা দেখে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? কোন দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করেছে? কোন গল্প আপনাকে সিনেমা দেখা শেষ করার পর ভাবিয়েছে বা কোথায় আপনার মন্তব্য করার ইচ্ছা হয়েছে ইত্যাদি।  তবে কোন সিনেমা ভালো কোন সিনেমা খারাপ সেটা এক বাক্যে প্রকাশ করাও যায় না। তবে আমরা যখন কাউকে কোনো সিনেমা দেখার জন্য রেকমেন্ড করি তখন আমরা বলি অমুক সিনেমাটি ভালো, দেখতে পারেন। কিন্তু সিনেমাকে এভাবে ডিফাইন করা কি আসলেই যায়?  


 

যাইহোক, বাংলাদেশি  সিনেমা নিয়ে যেহেতু দর্শকেরা ইতোমধ্যে যথেষ্ঠ তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তুফান সিনেমার মধ্য দিয়েই। তো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তুফান সিনেমা হবেই। এছাড়াও তুফান নিয়ে কথা বলতে আসলে এনিম্যাল,কবির সিং ইত্যাদি ইত্যাদি মুভি আসবেনা তা তো আসলে হবে না। সুতরাং বলিউড মুভির প্রভাব বাংলাদেশি সিনেমায় যে ৯০ এর দশক থেকে প্রবলভাবে ছিলো এবং এখনো ঠিক প্রবল ভাবেই আছে বলা যায়। গান থেকে শুরু করে লাইটিং, সেট ডিজাইন , ক্যামেরা ক্যারিক্যাচার, চরিত্রায়ন  কিসের প্রভাব নাই!  সিনেমা তো বুঝলাম সিনেমা ছাড়াও এর পদার্পন আছে। যেমন সামাজিক চালচলন, প্রথাগত সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। 


 

তুফান সিনেমা নিয়ে যদি খসড়া কোনো মন্তব্য করতে হয়। তাহলে বলবো, তুফান আসলে একটা সেট অফ তামিল বা বলিউড একশন। যেটা প্রায় বিশ পঁচিশ বছর ধরে বলিউডে  হয়ে আসছে। তবে তুফানের বিশেষত্ব যদি নির্ধারণ  করাই লাগে তাহলে বলা উচিত, বাংলাদেশের একশন সিনেমা বলিউড বা তামিল ইন্ডাস্ট্রিকে সিন-বাই-সিন পদার্পন করার দক্ষতা দেখাচ্ছে।কিন্তু এখানে কথা আছে।  একটা সিনেমা বলিউড সিনেমা্র স্ট্যান্ডার্ড রিচ করলো কিন্তু সেটা সে একা করতে পারছেনা। তার কালার গ্রেডিং আর্টিস্ট লাগতেছে বিদেশী, তার ডিরেকশন  লাগতেছে বিদেশী (উল্লেখ্য যে সব সিনেমায় না), তার কস্টিউম খুবই স্বতন্ত্রহীন এমনকি তাঁর বাচন ভঙ্গিও আলাদা করা যাচ্ছেনা মাঝেমধ্যে। 


 

নায়কের রুপ 


 

এনিম্যাল মুভির কথা শুরুতে বলছিলাম। বলার কারণ হচ্ছে, প্রথম ঝলকে  সিনেমাকে দেখে আপনার মনে হবে যেমন খুশি তেমন সাজো কন্টেস্টে শাকিব খান রনবীর কাপুর সেজেছেন। কেউ কেউ যদি এটাকে জাস্ট এডাপ্টেশন বলে তাহলে এখানে অনেক চ্যাঁচামেচি করা যায় কিন্তু করে আদৌ কোনো লাভ নাই। কারণ তাহাদের চোখের কোটরে এখন লাল বেলুন ঝুলছে নায়ক মেগাস্টার শাকিব খান কে দেখে।  আর ক্যারেকটারাইজেশন! এনিম্যাল মুভিতে একটা প্রচন্ড ম্যাসকুলিন, রাগী, নারীবিদ্বেষী এবং মানবতাবিদ্বেষী চরিত্রকে আমোদে ভাসানো হয়েছে। তুফান সিনেমায় এর ভিন্ন কিছু তো পাওয়া যায়-ই নাই। বরং এর সাথে যোগ হয়েছে কিছু মেকি এট্রিবিউট। 


 

মাঝেমাঝে আপনার দেজাভু(Deja Vu) হতে পারে যে, এই সিন টা আমি কোন বলিউড সিনেমায় যেন দেখেছিলাম! মনে পড়ছে না। একই সেট একই জায়গা একই ক্যামেরার ফ্রেম এবং একই পোশাক। 

 তবে সুক্ষ্ণ পরিবর্তন এইযে, আগে নায়কেরা শয়তানের বিনাস করতো এখন নায়কেরা আগের মত অনেক অসহায়, গরীব থাকলেও ভিলেনের কাঠপুতুল হয়ে  বেঁচে থাকতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এটা নিয়ে অভিযোগ আছে তা নয়। বেঁচে থাকা সবার জন্যেই কঠিন। তাই কে কার গোলামি করলো সেটা মুখ্য না। তবে   এইযে একটা ছেলে ছোটোবেলা থেকে ‘’রাক্ষস’’ হয়ে উঠলো সেটা প্রোমোট করার যে আহ্লাদ সেটার ক্রেডিট গোজ টু দ্য আন-ডিনায়েবল আর্জ টু প্রোমট হাইপার-ম্যাস্কুলিনিটি এমাং দ্য সোসাইটি এবং  দ্য আর্জ অফ দ্য ডিরেক্টর টু সেল আ মেগাস্টার উইথ জিরো স্টোরি। জিরো স্টোরি বলার কারণ হছে, এই সিনেমার গল্প তিন দিনের মাথায়ই আমার মাথা থেকে চলে গেছে।


 

এখন এখানে একটা ক্রিটিকাল থিংকিং এর বিষয় আছে, স্টার-মেগাস্টারের আখ্যাগুলা কোথায় পাওয়া যায়? আর দ্বিতীয়ত, শাকিব খানের সিনেমা আগেও হলে আসছে। জীবনে তিনি ২৪৭ টি সিনেমা করেছেন।  কিন্তু  মানুষ কয়টা সিনেমা এত দলবল নিয়ে সেলিব্রেট করতে গেছে ! এই তুফান সিনেমায় শাকিব খান নিজেকে পরিবর্তন করেছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।  এটাই হছে কথা আর কি! নিজের এটিটিউটের মাঝে আলফা চরিত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনো গল্প দেখার আশা মানুষের আছে বা সাম্প্রতিক সময়ে ছিল কিনা জানিনা। সাধারণত আমরা মেনে নিয়েছি একশন মুভির গল্প তেমন চমৎকার কিছু হবেনা। তবে টেকনিকাল এমিউজমেন্ট থাকলেই দর্শক খুশি। বিশ্বব্যাপী সিনেমার মাঝে বহু একশন সিনেয়ায় আছে যেখানে কোনো গল্প নাই। তবে একশন ঠিকই তাঁর জায়গায় টপনচ। তুফান সিনেমা আপনার পর্দায় দেখতে খারাপ লাগবেনা। সময় খুব দ্রুত কাটবে। কারণ এই সিনেমাকে আমরা ‘’স্লো’’ বা ধীরগতির সিনেমা বলতে পারব না। এখন এখানে ছোটো করে বলে রাখা যায়, রেহানা মারিয়াম নুর কে অনেকেই স্লো সিনেমা বলেছেন এবং কেউ কেউ বলেছেন এই সিনেমা তাদের স্নায়ুতে ঘুমের উদ্রেক ঘটিয়েছে। একটু উধৃতি দিয়ে রাখি। রেহানা মারিয়াম নূর একটি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বলে চিহ্নিত করা যায়। সুতরাং কেনো ঘুম ঘুম চোখে তাঁরা ঝিকিমিকি তাঁরা দেখেছে সেটার কারণ অনুসন্ধান না করি। 


 

আলফা/ সিগমা/ বিটা ইথোলজি থেকে বায়োলজিতে এসে সিনেমায় এসে পদার্পন করলো!


 

আলফা মেইল, সিগমা মেইল কিংবা বিটা মেইল চরিত্রটা আমার কাছে নতুন ছিলো । আলফা  চরিত্র কি জিনিষ সেটা আমি নিজেই আগে জানতাম না। তবে মাঝে ঘাটাঘাটি করে জেনেছি ।  রুডলফ শ্ন্যাঙ্কেল (Rudolph Schenkel) দ্বারা নেকড়েদের উপর করা এক স্টাডি বা গবেষণার সাহায্য নিয়ে দেখান যে, নেকড়েদের মধ্যে কিছু নেকড়ে বেশ কর্তৃত্বপূর্ণ এবং আধিকতর প্রভাবশালী। তারাই এই নেকড়ে সমষ্টির নেতা হয়ে ওঠে, অন্যকে কন্ট্রোল করে, মহিলা নেকড়েরা সহজেই এদের সঙ্গিনী হয়ে ওঠে।(সূত্রঃ অনলাইন) তবে এই গবেষণাকে তিনি নিজেই বিশেষ ভাবে গ্রহন করেননি কারণবশত। জুলজিতে যে অংশে প্রানীদের আচার - আচরণ নিয়ে বিশেষন করা হয়, সেটাকে বলে ইথোলজি। এই ইথোলজিতে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রানিদের আচরনের কথা বলা হয়েছে। কোনো সাইকোলজিকাল স্টাডিতে মানুষের মাঝে আলফা, সিগমা , বিটা চরিত্রের ভাগ পাওয়া যায়নি। 


 

মানুষের ক্ষেত্রে ‘আলফা, বিটা, সিগমা’ নামকরণ আসলে মিডিয়ার হাত ধরে। ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন প্রাশ্চাত্য সিরিজ , সিনেমায় আলফা মেইল চরিত্রটি বৈধতা পায়।  তার বদৌলতেই  সিনেমাতে আমরা যখন একটা চরিত্রকে আলফা মেইল বা সিগমা মেইল হিসেবে আখ্যায়িত করি বা দেখে এমন ভাবে গ্রহন করি যেন এমনই রূপ হওয়ার কথা চিরায়ত পুরুষের। এমনই এই জিনিষটা আসলে আমাদের জন্য এমন এক মুখোরচক থালা, যেটা সারাজীবন খাওয়ার পরও শেষ হছেনা। বরং গলাধকরণ করার কষ্ট ছোটোদের দিয়ে দিচ্ছি। তারপর ছোটরাও সেটা খেয়ে আলফা , সিগমা হয়ে যায়।  বাই দিস টাইম ইউ অলরেডি নো আই এম নট টকিং এবাউট একচুয়াল ফুড। 


 

তবে ইন্টারনেটে নারী চরিত্রের ক্ষেত্রেও আলফা সিগমা , বিটা ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু সেই চরিত্রায়ন মূলধারায় কখনো তো আসেই নাই বরং নারীদের যদি আচরনগত বৈশিষ্টের শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাহলে নারীদের সব সময়ই আলফা অর সিগমা পুরুষদের সঙ্গী হিসেবে দেখানো হয়। তুফান , এনিম্যাল , টাইগার, বাজরাঙ্গী ভাইজান, সুরঙ্গ সব সিনেমাতেই নারীর কাজ নায়কের কাঁধের উপর হাতটা রেখে নিতম্ব উঁচু করে দায়িয়ে থাকা। আর একটু কুক কুক কুক করে নাচগান করা। 


 

এমন না যে , বাংলাদেশে নারী প্রধান চরিত্রের সিনেমা হয়নাই। ৯০-২০০০ সালে অনেক হইছে। কিন্তু সেগুলা পরিবারকে নিয়ে দেখতে যাওয়া তো দূরের কথা। বন্ধুবান্ধব যদি কখনো চুপিসারে জেনে যায় এই সিনেমা দেখেছি আঙ্গুল তুলে হাসে। যাইইহোক, আলোচনার কেন্দ্রবন্দু তুফান সিনেমা এবং ভালো সিনেমা আর খারাপ  সিনেমা আসলে কাকে বলে। 


 

রায়হান রাফি পরিচালিত তুফান সিনেমাটির টেকনিকাল এমিউজমেন্ট আছে। সিনেমাটোগ্রাফি রিয়েলিস্টিক। পুরুষ চরিত্রদের মধ্যে ডাইভারসিটি  লক্ষ করা যায়। নতুন নায়িকা দেখা যায়। তবে নায়িকা হিসাবে তাঁর হাতে গোনা ১৫ টা ডায়লগও আছে কিনা সন্দেহ। 


 

আবারো নায়িকা হয়ে গেলো একটি ক্যারামেল পপকর্ণ !


 

 আমরা কখনো এমন তামিল একশন সিনেমা আমাদের নিজেদের হলে, আমাদের নিজেদের ভাষায় দেখিনাই বলে আমাদের আমোদ লাগতেছে। তবে টেকনিকাল এমিউজমেন্ট টাই কি শেষ কথা? একটা সিনেমা অনেক ভালো হইতেই পারে।   সিনেমা একটা কমিউনিকেশন মিডিয়াম । কিন্তু এমন কেনো হবে যে একটা সিনেমায় একজন নির্মাতার মূল উদ্দেশ্যই থাকবে নারীকে ধোঁককাবাজ, কপটচারিনী, জালিক চরিত্র হিসেবে দেখানো? তাহলে কি এখানে ব্যক্তিগত জীবনের কোনো প্রতিক্রিয়া সামনে আসছে কিনা সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়। চলচ্চিত্রে ইচ্ছাকৃত নারী চরিত্রকে ভিলেন রূপে দেখানোটাকে রীতিমত সেলিব্রেট করা হচ্ছে নাকি না সেটা না ভেবেই একটা সিদ্ধান্তে আসার ,মত বিষয়। 


 

এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন আছে। রায়হান রাফির চরিত্র কেনো টিনেজারদের মত পবিত্র?  তিনি কেনোই বা এত সরলীকরন করে নারীমুর্তিকে পর্যালোচনা করেন? তাছাড়া দর্শকের নিজদের মধ্যেও কতখানি নারীবিদ্বেষী মনোভাব আছে সেটাও বা কম কিসে বোঝা যায়। যদিও দর্শক যথেষ্ঠই বিরক্ত হয়েছিলেন যখন সুড়ঙ্গ সিনেমাটি হলে আসে। মানুষকে তখন নারী চরিত্রের একটা রূপ দেখানো হয়েছে যা প্রকাশ্যেই নারী চরিত্রকে গোল্ড ডিগার হিসেবে কোনঠাসা করার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন।  


 

এখন অনেকেই বলতে পারেন, উক্ত সিনেমা অর্থাৎ তুফান নিজেই তো একজন নেগেটিভ চরিত্র। সিনেমার দৃশ্যে বার বার সে নিজেকেই বার বার  ‘’রাক্ষস’’ বলে দাবী করছে । তাহলে রায়হান রাফির চলচ্চিত্র মিসোজেনি কোথা থেকে আসলো। যেখানে নারী পুরুষ উভয়কেই ভিলেন হিসাবে দেখানো হচ্ছে তখন কেন এটাকে আপনি মিসোজেনি বলবেন। এর যুক্তিত্তর আসলে খুব যে তাত্বিক সেটা বলার সুযোগ নাই। তবে দেখার বিষয় আছে। ধরেন আপনি সিনেমায় মেগাস্টার শাকিব খান কে রাক্ষস চরিত্রে অভিনয় করতে দেখলেন বা রনবীর কাপুরের এনিম্যাল এবং অন্যান্য বহু চরিত্রে অভিনয় করতে দেখলেন। আপনার মনে হবে ‘’কেয়া এক্টিং কিয়া হ্যায়’’ হি কিল্ড ইট। যেমন তুফানে শাকিব কে দেখে আমরা যেমন পাংখা পুলার থেকে ইলেট্রিক ফ্যান হয়েছি। 


 

 কিন্তু আপনি চিন্তা করেন গাঙ্গুবাই এর কথা। আপনি চিন্তা করেন হীরামান্ডির কথা। আপনি চিন্তা করেন রেহানা মারিয়াম নূরের কথা। সিনেমা হিসেবে রেহানা মারিয়ামের কোনো আয় নাই।  পরন্তু , আয়ের আশাও তাঁরা করেননাই। এই সকল নারীকেন্দ্রিক সিনেমার বিশেষ মূল্য বাজারে নাই এবং দর্শকের মনেও নাই। অধিকন্তু সিনেমাকে ফাস্টফুড বানানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে উক্ত সিনেমা তুফান। অনেক বেশী মেয়োনিজ, অনেক বেশী( চিজ নায়িকা হ্যায় মাস্ত মাস্ত), আর ডেলিকেট বান । তাহলে সিনেমাকে ব্যবসায়িক ভাবে দাঁড় করানো যায়। 


 

এখন কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে নারী কেন্দ্রিক সিনেমা কোথায়? এই হাতে গোনা দুই একটা ছাড়া আর কোনো সিনেমা তো দেখা যাচ্ছেনা। আসলে বাংলাদেশে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা ইতিপূর্বে অনেক  হয়েছে। কিন্তু সে সকল সিনেমা ছিলো অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ। এমনকি একটা সময় ছিলো কোনো সিনেমার পোষ্টারে শরীর ভিজিবল করা হতো যেন মানুষ আগ্রহ নিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। তার আগে সিনেমা দেখানোর জন্য এই স্ট্র্যাটেজি অবলম্বন না করলেও হতো কারণ সিনেমার মান তখন অন্যরকম ছিলো। তবে ৯০ এর মাঝামাঝি থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিনেমার অন্ধকার যে যুগ চলছিলো সেটা  পুনরুদ্ধার করার জন্যও হয়তো এই স্ট্র্যাটেজিতে পদার্পন করতে হয়েছে। 


 

এই ধারাবাহিকতা এখনো আছে। বাংলাদেশের যত কমার্শিয়াল সিনেমা আছে সাম্প্রতিক সময়ের বা হচ্ছে সবগুলার একেকটা গল্পের সেট। এই সেটগুলা বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরী করে। উন্নতি বলে কেউ যদি কিছু ধরতেই চায় তাহলে টেকনিকাল এমিউজমেন্ট ছাড়া বলার মত আর কিছু খুঁজেই পাবেনা। কারন সিনেমার গল্পের পরিবর্তন হয়নাই, চরিত্রায়নের পরিবর্তন হয়ে ‘’রাক্ষস’’ হয়েছে । আস্তেধীরে নায়ক এবং নায়কের সেই নীতি, সেই মতাদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এই মতাদর্শ হারিয়ে যাওয়া খারাপ সেটা বলছি না। বরং ভালো কারণ এই যুগে পীড়ার অন্যতম কারণ আপনার নীতি এবং মতাদর্শ আছে। সেটা বহাল রেখে আপনি চলতে চান। ছলচাতুরীতে পটু হবে নায়ক, আর নায়িকা তো শুধু নায়কের পাশে ফ্লোরাল প্রিন্টের জামা পরে বসে থাকবে। কারণ নায়িকা হিসেবে তার কাজই বা আর কি। লাল রাঙা ঠোঁট আর গোলাপি গাল আর কিছু নাচ। 


 

তবে নারী চরিত্রের অবমানকর দৃশ্যায়ন আমরা একপাশে রেখে সিনেমার উন্নতি হয়েছে নাকি অবনতি হয়েছে সেটা বিচার করাটা কতখানি বাঞ্ছনীয় সেখানে একটা ভাবার বিষয় আছে। কারণ যে সিনেমায় গল্প নাই, ভবিষ্যত নাই,অনুভুতি নাই,  ভাবমূর্তি নাই, চিন্তার খোরাক নাই সেটা সিনেমা কিভাবে হতে পারে সেটা একটা অদ্ভুত বিষয় বটে। পরিশেষে, এটা ঠিক বলা সহজ নয় তুফান কি একটা ভালো সিনেমা নাকি খারাপ সিনেমা। মূল কথা এটাই, টেকনিকাল এমিউজমেন্ট হিসেবে তুফান ভালো। তবে শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিনেমায় শঈল্পিক বিপ্লবের কোনো অন্ত নাই। সিনেমা চলবে…..