পোস্টস

গল্প

মিস লংকা

২৭ আগস্ট ২০২৪

উম্মে ফারহানা

আমি তখন মাত্র মনুমিয়ার চায়ের দোকানে ঢুকছি। মনুমিয়ার পুরা নাম মোহাম্মদ মনোয়ার। তারে সবাই মনুমিয়া বইলা ডাকে। পাড়া সুবাদে যারা প্রতিবেশি কিংবা বেশি খাতিরের লোক, তারা ডাকে মনুভাই। তার চায়ের কোয়ালিটি তেমন ভালো না, কিন্তু দোকান চলে বেশ। জায়গাটা সুবিধাজনক আর বসার ব্যবস্থা আছে বইলাই হয়তো, এই দোকান কখনো ফাঁকা দেখিনা। এই দোকানের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হইলো এখানে সবসময় গান বাজে। মনু এত এত পুরান দিনের গান কই থাইকা যোগাড় করে কে জানে!
দোকানে ঢুইকা রাহুলরে বললাম একটা গোল্ডলিফ আর এক কাপ চা দিতে। মনুমিয়ার এসিস্ট্যান্টের ডাকনাম রাহুল, বাপমায়ের দেওয়া নাম ছিল রুহুল আমিন, সে নিজেই পাল্টায়া রাহুল কইরা নিছে। রাহুল সিগারেট দিয়া চা আনতে গেছে সময় বশির হন্তদন্ত হইয়া আসলো। দেইখা মনে হইলো দৌড়ায়া আসছে। আইসাই ধুপ কইরা বইসা পড়লো আমার পাশে।

বিকাল পইড়া আসার এই সময়টাতে প্রায় সব চায়ের দোকানেই ভিড়। কিন্তু আমরা এই দোকানেই বসি। ঠিক কবে থাইকা আমরা এইখানে বসতে শুরু করছি সেইটা আমার আর এখন মনে নাই। বিশেষ একটা দোকানে বসার কোন উদ্দেশ্য আমাদের কারো ছিল না, কিন্তু বছর খানেক আগে বশিরের এই দোকানের প্রতি পক্ষপাতের একটা কারণ আমরা আবিষ্কার করছি। বিকালের একটা নির্দিষ্ট সময়ে বশির এই এলাকায় থাকবেই থাকবে। এই দোকান থাইকা সরাসরি দেখা যায় যে বিউটি পার্লার সেই পার্লারে কাজ করে এমন একটা মেয়ের আসা যাওয়ার রাস্তাটা মনুর দোকানের সামনে দিয়া। মার্কেট থাইকা বাইর হইয়া ঘুইরা যাইতে অনেক সময় লাগে দেইখা মনুর দোকানের সামনের রাস্তা দিয়া রেললাইন পার হইয়া অনেকেই শর্টকাট মারে। বশির যে সন্ধ্যার দিকে মনুর দোকানে বইসা থাকে বইসাই থাকে তার কারণ হইলো এই সময়ে পার্লারের দুইতিনজন মেয়ে এইখান দিয়া যায়। তারাও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না কইরা রেললাইনের অংশটা পায়ে হাঁইটাই পার হয়। 

আমি প্রথম এই তথ্যটা শুনতে পাইছি শাহীনের কাছে। সেইদিন মনুর মোবাইল ফোনের সঙ্গে লাগানো স্পীকারে পুরান আমলের বাংলা গান বাজতেছিল- “চুরি করেছ আমার মনটা, হায় রে হায় মিস লংকা”। আমি তখন আম্মা কারেন্ট বিল দেওয়ার জন্য যে টাকা দিছিল সেইটা খরচ কইরা ফালাইছি বইলা সামান্য টেনশনে ছিলাম।পরদিন যেমনেই হোক টাকা যোগাড় কইরা বিল দিতে হবে। কয়েকটা পাহাড়ি মেয়ে সামনে দিয়া যাওনের সময় শাহীন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি কইরা গান গাইতে থাকলো, “চুরি করেছ আমার প্যান্টটা, হায় রে হায় আমি ন্যাংটা”। শাহীন লুঙ্গি পিন্দা ছিল, তার ভাবে মনে হইতেছিল গানের কথার সঙ্গে নাচের ভঙ্গি মিলানের জন্য লুঙ্গিটাও সে খুইলা ফেলতেই পারে যখন তখন। শাহীনের এই কাজগুলা খুব অসহ্য লাগে, দেখতাছস দ্যাখ, টোন করার দরকার কী!টাকার টেনশনে আমি বিলা হইয়া ছিলাম। তাই শাহীনের উপরে আরো বেশি মেজাজ খারাপ হইলো। আমি জোরে ধমক দিয়া ওরে থামতে কইলাম। শাহীন তখন মন খারাপ কইরা থাকা বশিরের সামনে আইসা আরো বেশি উৎসাহে নাচতেছে। আমার ধমকে তেমন একটা কাজ হবে বইলা আশা করিনাই,অনীক অনেকবার ওরে এমন অশ্লীল ব্যবহার করতে মানা করছে, লাভ হয়নাই। কিন্তু দেখলাম শাহীন থামছে। থাইমা আমারে কইলো যে ওই তিন মেয়ের মধ্যে যে মাঝখানের জন নীল সবুজ প্রিন্টের কামিজ আর লাল ওড়না গায়ে, সেই মেয়েটার জন্যই বশির প্রতিদিন এইখানে বইসা থাকে। ততক্ষণে মেয়েগুলা চইলা গেছে, ওভারব্রিজের দিকে তাকায়া আমি দেখলাম তাদেরে পিছন দিক থাইকা।

সেইদিন থাইকা মুখে মুখে সেই মেয়ের নাম হইয়া গেলো মিস লংকা। অর আসল নাম কী তা আর আমরা জানার চেষ্টাও করলাম না। মিস লংকা বইলাই তারে ডাকা হইতো। বশির চুপচাপ ধরণের মুখচোরা ছেলে। শাহীনের অশালীন আচরণ আর কথাবার্তার জন্য যে মেয়েগুলা আমাদের দিকে তাকাইতেছেই না, আমরা সেইখানে নাই, তারা কিছুই শুনেনাই- এমন একটা ভাব কইরা নিজেদের মধ্যে কথা কইতে কইতে চইলা যাইতেছে, আর এতে কইরা যে বশিরের মিস লংকার সঙ্গে কিছু হইবার সম্ভাবনাও কইমা যাইতেছে- এই ব্যাপারটা নিয়া আমারই বিরক্ত লাগতেছিল। অথচ বশির কিছুই কইলো না।আমাদের কারোর কোন মেয়েবন্ধু ছিল না, প্রেমিকা তো ছিলোই না তখনও। কাজেই মিস লংকার হালহকিকত জানার জন্য কোন মেয়েকে যে বিউটি পার্লারের ভিতরে পাঠানো যাবে সেই উপায় মনে আসলেও বাস্তবায়ন করতে পারতেছিলাম না আমরা। শেষ পর্যন্ত শাহীনই কইলো যে তার খালাতো বোন নীপারে পাঠায়া মিস লংকার ফোন নাম্বার যোগাড় করার চেষ্টা করা যাইতে পারে। আমরা যখন মিস লংকার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বাইর করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব উঠাইতেছিলাম তখন পুরা সময়টা বশির উদাস মুখে পার্লারের দিকে চায়া ছিল। 

শাহীন তখন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতন একবার আসল আরেকবার প্যারোডি ভার্সনে মিস লংকা শিরোনামের গান গাইতে ছিল। প্রথম দিন আমি পেছন থাইকা দেখছিলাম বইলা চেহারা দেখতে পারিনাই। পরের দিন আগেই তক্কে তক্কে ছিলাম। তিনজনের চেহারাই ভালোমতন দেইখা নিছিলাম। ওরা চইলা গেলে বশিররে জিগাইলাম, “কোনটা রে?” বশির কোন লজ্জা বা রাগ না দেখায়া নিস্পৃহ ভঙ্গিতে কইলো, “বামের জন”। ‘বামেরটা’ না বইলা ‘বামের জন’ বলাতে আমার মনে হইলো ভুল করছি, জিগানো দরকার ছিল “কোন জন”। তৃতীয় দফায় আমি মিস লংকারে বশিরের পছন্দের মাইয়া হিসাবে দেখতে সমর্থ হইলাম। মাইয়ার চেহারা ভালো, গায়ের রঙ উজ্জ্বল, চুলের বেণীটা মোটা আর টিপটপ কইরা বান্ধা। অনেক লম্বা চওড়া না হইলেও বাঙালি মাইয়াগর তুলনায় বেশ শক্ত সমর্থ মনে হইলো। আমি এই কথা কওয়াতে শাহীন বিশ্রী একটা হাসি দিয়া কইলো, “এই গান্নিগুলা বাল চাছে নাকি? হাইগ্যা হছে?”। আমি বুঝলাম আবারো একটা ভুল কইরা ফেলছি। মিস লংকার প্রসঙ্গে কিছু কইতে চাইলেও বশিরের সঙ্গে আলদা কইরা কওয়া দরকার আছিলো। শাহীনের সামনে কথা তোলাই উচিৎ হয়নাই। আমি অপরাধবোধ আড়াল করার জন্য একটা সিগারেট ধরাইলাম। আড়চোখে লক্ষ্য করলাম রাহুল পর্যন্ত শাহীনের নোংরা কথায় হাসতেছে। জাহিদের মুখেও সামান্য হাসির আভাস।বশির নির্বিকারে মিস লংকা আর তার বান্ধবিদের চইলা যাওয়ার রাস্তার দিকে তাকায়া ছিল। মনে হইলো সে কিছুই শুনে নাই। এমনিতেই বাঙালি মেয়ের বদলে গারো (কিংবা চাকমাও হইতে পারে) মেয়ের প্রেমে পইড়া বশির আমাদেরে যথেষ্ট চমক দিছে, তার উপরে তার এই উলটাপালটা আচরণে আমরা সবাই আরো দিশা হারায়া ফালাইলাম। রাহুলের কাছে জানা গেলো যে সকাল সাড়ে নয়টা দশটার দিকে যখন মার্কেটের দোকানগুলা খুলতে শুরু করে তখনও বশির এই এলাকায় থাকে। আমরা থাকিনা বইলা জানি না। কিন্তু তার এই প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে বেমানান মিস লংকার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতে তার উৎসাহের অভাব। আমার মনে হইলো সম্ভবত শাহীনের বাজে কথাগুলার কারণেই তার খালাতো বোনের সাহায্য নিতে চায় না বশির। চাপা স্বভাবের জন্য সে রাগ প্রকাশ করেনা, শাহীনরেও কোনদিন বলেনাই কিছু। কিন্তু মনে মনে সে চইটা আছে। কিংবা এমনও হইতে পারে যে তার আসলেই প্রেম করার উদ্দেশ্য নাই। দূর থাইকা দেইখাই তার আনন্দ। যে কারণে শাহীনের উৎকট আচরণেও সে বিরক্ত হয় না। শাহীন না থাকলেও মিস লংকার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কিছুই হয়তো করতো না সে। 

আজকে মনুর দোকানে বাজতেছে “বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে”। হন্তদন্ত হইয়া আসা বশিরের মুখের দিকে চায়া আমার মনে হইলো কোন কিছু সমস্যা হইছে। না জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো বলবে না। আমি কী হইছে জিজ্ঞেস করার আগে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিলাম তারে। ধরানো সিগারেট তার দিকে আগায়া দিয়া রাহুলরে কইলাম আরেক কাপ চা দিতে আর গানের আওয়াজ কমায়া দিতে । বশির শুকনা মুখে চায়ে চুমুক দিতে থাকলে আমি জানতে চাইলাম সমস্যা কী। বশির কইল কক্স’স বাজার না টেকনাফ কই জানি এক বৌদ্ধ লোক ফেইসবুকে মুসলমানগর বিরুদ্ধে কী জানি লিখছে, তাতে কইরা লোকজন ক্ষেইপা গিয়া বৌদ্ধদের মন্দির পুড়ায়া দিছে। কক্স’স বাজারে মন্দির পুড়াইলে বশির এইখানে বইসা চিন্তিত ক্যান হবে সেইটা আমি প্রথমে ধরতে পারলাম না। জাহিদ আর অনীক আইসা বসার পরে ব্যাপারটা খোলাসা হইলো। দেখলাম ওরাও অনেকটাই জানে। বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙার পরেই কিছু অতি উৎসাহী স্থানীয় পোলাপান পাহাড়ী ছেলেদের ধইরা মাইরধর করছে। দুই একজন পাহাড়ী মেয়েকে উঠায়া নেওয়ার ঘটনাও নাকি হইছে। আমি আবার কিছু না ভাইবাই কইয়া ফেললাম, “ওরা তো আর বৌদ্ধ না”, বশির এইবার কিঞ্চিৎ অধৈর্য হইয়া বলল, “হইলেই কী?”। আমি পরক্ষণেই ভুলটা বুঝতে পারলাম। ওরা বৌদ্ধ কি খ্রিষ্টান তাতে কিছু আসে যায় না। কোন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান খাল কাইটা কুমীর আনার জন্য ফেইসবুকে এই সমস্ত অবমাননাকর কথাবার্তা লেখে না। সব ভাংচুর লুটতরাজ হইয়া যাওনের পরে দেখা যায় আইডি ফেইক ছিল, আইডির মালিক যারে ভাবা হইছিল তার কাছে ইন্টারনেটই নাই। 
 
আমি বশিররে জিগাইলাম মিস লংকা কই থাকে, সে ঠিকঠাক আছে কি না। বশির তারে দুই/তিন দিন ধইরা দেখতে না পায়াই এমন অস্থির হইয়া আছে। আমি কয়েকদিন মনুর এইখানে আসিনাই বইলা জানতাম না এতকিছু। আমার মন মেজাজ খারাপ ছিল। গত কয়েক মাসে আমার একটা প্রেম হবে হবে করতেছিল, কিন্তু গত সপ্তাহে বুঝলাম যে এইটা আসলে হবার সম্ভাবনা নাই। বুইঝা ফেলার পরে আমার মন বিক্ষিপ্ত হইয়া ছিলো। দুনিয়াদারি ভাল্লাগতেছিল না। পরে ভাইবা দেখলাম এক দিক থাইকা ভালোই হইছে। মেয়েটা কিসে জানি অনার্স পড়ে, কথায় কথায় জ্ঞানী জ্ঞানী আলাপ করে।  মেয়েমানুষ এত জ্ঞান কপচাইলে বিরক্ত লাগে। এই যেমন মিস লংকার ব্যাপারটা যখন আমি তারে ফোনে কইতেছিলাম, সে ফস কইরা বলল উপজাতি শব্দটা নাকি আপত্তিকর, আদিবাসী বলতে হবে। আমি হালকা করার জন্য ফাইজলামির সুরে কইছিলাম, “কী আসে যায়, চিংকুদেরে আদিবাসী কই আর উপজাতি কই, ওরা তো আর শুনতেছে না, সামনে তো আর কই নাই”। এই কথা শুইনা মেয়ে আমারে কয় আমি নাকি ‘রেসিস্ট’, কইয়া ফট কইরা মুখের উপরে ফোন রাইখা দিছিল। মর জ্বালা, আমি বলে বশিরের প্রেম যাতে হইয়া যায় তাই মিস লংকার লগে যোগাযোগের চেষ্টা চালাইতেছি আর আমারে কয় রেসিস্ট! উপজাতি-আদিবাসী বিষয়ক কথাটা মনে হয় সে ভুল কয়নাই, অনীক কইলে হয়তো আমি মাইনাও নিতাম, কিন্তু প্রেম শুরু হওয়ার আগেই মাস্টারি ধরণের কথা শুইনা আমার মুখের ভিতরে তিতা লাগছে। 

বশির চুপ কইরা একের পর এক সিগারেট খাইতে থাকল আর অনীক কইল বাকি কথা। মিস লংকা যে পার্লারে কাজ করে সেইটার প্রধান বিউটিশিয়ান রুবা আপাও নাকি তাদের জাতেরই। রুবা আপা এক মুসলমানেরে বিয়া কইরা পুরাদস্তুর মুসলমান হইয়া গেছেন, বোরখা পরেন আর নাম নিছেন দিলরুবা -আগে অন্য নাম ছিল। পার্লারের মালিক তার জামাই, আগে অন্য ব্যবসা ছিল (এখনও সেগুলা আছে), রুবা আপাও অন্য পার্লারে ছিলেন। এক জাতের হইলেও মিস লংকা আর তার বান্ধবিদের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক নাই, পরিবারের কেউ রুবা আপার লগে সম্পর্ক স্বীকার করে না আর মেয়েদেরে তার সঙ্গে কাজ করতে দেওয়ার তো প্রশ্নই উঠেনা। মিস লংকা আর তার দুই বান্ধবির একজনরে গত পরশু রাত থাইকা আর পাওয়া যাইতেছে না। পার্লার থাইকা তারা আর হোস্টেলে ফিরে নাই। তৃতীয় যে মেয়েটা সবসময় তাদের সঙ্গে থাকে সে সেইদিন যায় নাই, তার ওভারটাইম ছিল, কাজ শেষে সে রুবা আপার বাসায় থাকছে। পরদিন ডিউটির টাইম হবার আগে পর্যন্ত তাদের খোঁজ কেউ করেনাই। রুবা আপা আর তার জামাই এই ব্যাপারে থানায় ডায়রি করছেন বইলা জানা যায় নাই। অনীক এত খবর কই পাইল তা জানার কৌতূহল হইলেও আমি সেই অবান্তর প্রশ্ন আর তুললাম না। অনীকরে ক্ষুব্ধ মনে হইলো। কে বা কারা এইসব ঘটাইতে পারে তাদের নামধাম সে জানে এবং সেইসব লোকেদের যে কোনদিন কিছু হয়না সেইটাও সকলেরই জানা- এই কথাটা সে নিচু গলায় কইলো। শাহীনও কোন ভাঁড়ামি না কইরা চুপচাপ বইসা থাকলো। জাহিদ আর আমি বশিরের দুই পাশে বইসা থাকলাম আর বশির আরো কয়েকটা সিগারেট শেষ কইরা উইঠা দাঁড়াইয়া বলল, “বাসায় যাই”। 

 

এরপর থাইকা বশির বিকাল হইতেই আর মনুর দোকানে আইসা বসে না। আমরা কিছুদিন আসলাম। মনে মনে আশা করতে থাকলাম বশির আসবে আর মিস লংকাও তার বান্ধবি কিংবা কলিগদেরে নিয়া আগের মতন হাঁইটা যাবে। কিন্তু দুইটার একটাও ঘটলো না। এরমধ্যে অনীক একদিন জানাইলো মিস লংকার নাম আসলে শুচিস্মিতা হাজং। লগের মাইয়াটার নাম কী, ওরা কোন এলাকা থাইকা আসছিলো, সেইখানে ফেরত যাইতে পারছে কি না এইসকল তথ্য অনীক জানে কিনা তাও আমরা কেউ জিগাইলাম না। বেশ কয়েক সপ্তাহ চইলা যাবার পরে আমাদের আশা শেষ হইয়া গেলো। আমরা বশিরকে খুঁজতে তার বাসা পর্যন্ত গেলাম না একবারও। তার বিষন্ন চেহারা দেখার মতন মনের অবস্থা আমাদের কারো ছিলো না। 

মাসখানেক পর জুতা ঠিক করানোর জন্য মার্কেটের পিছন দিকের গলি দিয়া যাইতে যাইতে মনুর দোকানের সামনে দিয়া গেলাম। বিকালে এই জায়গায় আর আড্ডা দেওয়া হয়না তাই আসাও হয়না এইদিকে। অনীক আর জাহিদ চাকরি বাকরির খোঁজে কই কই জানি গেল গিয়া, শাহীন বড়বাজারে ব্যবসা শুরু করল, রেলক্রসিঙের এই রাস্তা থাইকা তার গদি অনেক দূর। আমিও বিকালের দিকে আর আড্ডা দিতে বাইর হইনা। কারো সঙ্গেই নিয়মিত দেখা হয়না। ভরদুপুরে পুরান জায়গা দেইখা মনে হইল এক কাপ চা খায়া যাই। পশ্চিমের রোদ ঠেকাইতে একটা পুরান ব্যানার ঝুলায়া পর্দার মতন দেওয়া। সেইটা তুইলা দেখি বশির দোকানের সিমেন্টে বাঁধানো বেঞ্চে লম্বা হইয়া শুইয়া রইছে, চোখ বন্ধ কইরা।
আর প্রথমবারের মতন মনুর দোকানে কোন গান বাজতেছে না।