পোস্টস

গল্প

বন্যার পানি কমতেই ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

২৭ আগস্ট ২০২৪

Md.Nazmul Hoque

বন্যার পানি কমছে। নদীর বাঁধ ভেঙে যে ভয়ানক বন্যা পুরো গ্রামটাকে তছনছ করে দিয়েছিল, সেই পানি এখন ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু বন্যার পানি সরে গেলেও গ্রামবাসীদের মনে যে আতঙ্ক আর হতাশার ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে, তা সহজে মুছে যাবে না।

গ্রামের প্রতিটি ঘরবাড়ি, মাটির উঠোন, স্কুল, বাজার সবকিছুতেই যেন বন্যার দাগ লেগে আছে। মাটি কাদায় ভিজে আছে, ঘরের দেয়ালে পানির লেগে থাকা দাগ এখনো স্পষ্ট। কোথাও কোথাও ধসে পড়া ঘরবাড়ি, ভাঙা পথঘাট আর গাছপালা সবই যেন বন্যার ভয়াবহতার চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।

বন্যার পানির সাথে সাথে ঘরের সব আসবাবপত্র ভেসে গিয়ে হারিয়ে গেছে। এখন শুধু ভেসে আছে দুঃখ আর হতাশার চিহ্ন। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের আলোয়, যখন গ্রামের মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে, তারা দেখছে তাদের স্বপ্নের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের প্রিয় জনদের জন্য বুক ফাটিয়ে কান্না করছে কেউ কেউ, কেউ আবার বসে আছে নিঃশব্দে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পানির দিকে।

ছোট্ট মেয়ে রিতু তার খেলনা পুতুল খুঁজে পাচ্ছে না, সে তার মায়ের কাছে এসে বলল, "মা, আমার পুতুলটা কোথায়?" মায়ের চোখে জল, সে জানে, বন্যার জলে রিতুর পুতুল ভেসে গেছে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটিকে কীভাবে বোঝাবে?

গ্রামের বড়ো বৃদ্ধ হাজি সাহেব বসে আছেন তার বাড়ির উঠোনে। তিনি ভাবছেন, এত বছর ধরে তিনি এই গ্রামে থেকেছেন, এমন ভয়ানক পরিস্থিতি তিনি কখনো দেখেননি। তার চোখের সামনে গ্রামের মানুষদের কষ্ট দেখে তার মন ভেঙে যাচ্ছে।

পাশের বাড়ির গৃহবধূ লাল বানু তার স্বামীর ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে। তার স্বামীকে বন্যার পানিতে ভেসে যেতে দেখেছিল সে। এখন শুধু হাতে রয়ে গেছে স্বামীর ছবি আর তার সাথে কাঁদতে থাকা ছোট্ট ছেলে।

তবে, বন্যার ক্ষতচিহ্নের মাঝেও কিছু মানুষ জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তারা জানে, বন্যা তাদের সব কিছু কেড়ে নিলেও, তাদের বেঁচে থাকার সাহস ও শক্তি কেড়ে নিতে পারেনি। তারা আবার ঘুরে দাঁড়াবে, তাদের ভাঙা ঘরবাড়ি মেরামত করবে, আবার নতুন করে জীবন শুরু করবে।

তারা জানে, জীবনের প্রতিটি বাঁধা পার করেই তাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। গ্রামের মানুষগুলো নিজেদের মধ্যে হাত ধরে, একে অপরকে সাহায্য করে আবার নতুন করে শুরু করার প্রতিজ্ঞা করছে। ক্ষতচিহ্নগুলো বয়ে বেড়ালেও, তাদের মনে আশা জাগছে যে একদিন এই ক্ষতচিহ্নগুলোও মুছে যাবে, আর নতুনভাবে বেঁচে থাকার শক্তি ফিরে আসবে।

বন্যার পানি কমছে, কিন্তু ভেসে উঠছে জীবনের নতুন এক গল্প, যেখানে বেদনার সাথে আছে সংগ্রাম, এবং ধ্বংসের ভেতরেই লুকিয়ে আছে পুনর্জন্মের আশ্বাস।