পোস্টস

চিন্তা

গ্যাং অব ফোর ও খোয়া যাওয়া দেড়শ বিলিয়ন ডলার

২৭ আগস্ট ২০২৪

ফারদিন ফেরদৌস

শেখ হাসিনা তার সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। চারপাশের মানুষকে আর মানুষ পদবাচ্যে বিবেচনা করতে পারতেন না। সাধারণ মানুষের মন পড়বার ন্যূনতম সক্ষমতা তার ছিল না।

টানা চারবার মসনদে আরোহন করতে পেরে নিজেকে আইরন লেডি ভাবতে শুরু করেছিলেন brutal শেখ হাসিনা। টাইম ম্যাগাজিনের মতো প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যমও তাকে ওই অভিধা দিয়ে রেখেছিল। যেখান থেকে সাধারণ মানুষের নুইসেন্স ও পালস বুঝবার সক্ষমতা তার ছিল না। শেষেরদিকে তিনি মাত্র চারজনের মতামত নিয়ে টোটাল শাসনব্যবস্থায় ছড়ি ঘোরাতেন। দুর্নীতিতে অর্থ কামাইয়ে এই চারজন যতটা না চৌকষ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ততটাই জড়বুদ্ধিসম্পন্ন। কার্যত ওই চারজনের দুর্বুদ্ধিতেই শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছিলেন গণবিচ্ছিন্ন dictatorial & kleptocratic শাসক।

ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই গ্যাং অব ফোরকে পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত করেছে। আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রভাবশালী এক নেতা ‘গ্যাং অব ফোর’ প্রসঙ্গে বলেন, গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।

এই চার নেতা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এর মধ্যে সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের ব্যাংক শেয়ার বাজার ধ্বংসকারী। আসাদুজ্জামান খান পুলিশ নষ্টকারী, সর্বদলের রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করেছেন টকেটিভ ও আত্মপ্রচারেনিগ্ন ওবায়দুল কাদের। কথিত অবৈতনিক আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে জয় শেষ সময়ের মায়ের প্রাণ রক্ষা ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক ভালো বুদ্ধি ও পরামর্শ যে দিতে পারেননি -এটা এখন প্রমাণিত সত্য।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরো বলেন, ‘চারজনের এই দল শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তাঁর ছিল অন্ধবিশ্বাস। তাঁর যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাঁদের কারণে হারিয়েছেন।’

ভারতের আরেকটি গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনকে দেড় দশক ধরে অন্ধভাবে সমর্থন জুগিয়ে গেছে ভারত। ছাত্র–জনতার টানা আন্দোলনের মুখে শেষমেশ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সামরিক কার্গো উড়োজাহাজে করে সেই ভারতেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এর আগে মাত্র ২০ দিনে ৫৪২ জনের প্রাণহানি (এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি ৭৫৭) হয়েছে।

বছরের পর বছর ‘সাউথ ব্লক’ হাসিনার রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের ব্যাপারে অন্ধ হয়ে থেকেছে। এটি তার (ভারতের) ঘনিষ্ঠ মিত্র এই সরকারকে দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করতে সহায়তা করেছে, যা আনুমানিক ১৫০ বিলিয়ন (১৫ হাজার কোটি) ডলার বা ১৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি (১ ডলার=১১৮ টাকা হিসাবে) টাকা। এই অর্থ বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের দ্বিগুণ।

Authoritarian শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ আর কখনোই অন্যের দুর্নীতি ও স্বৈরশাসন নিয়ে কথা বলতে পারবে না। কারণ অর্থ পাচার করে দেশের কোষাগার খালি করে দেয়ার পারঙ্গমতায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে দেশের অন্য শাসকদের আর তুলনা চলে না। টোটাল বিষয়টাই ঘটেছে ভারতের এক পাক্ষিক সমর্থনে। এতে ভারত কী পেয়েছে? গণ ভবনে এক ভাষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'আমি কারো কাছ থেকে কিছু চাই না, তবে ভারতকে আমরা যা দিয়েছি, তারা সারাজীবন মনে রাখবে!'

এতে করে সবচেয়ে খারাপ যে ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের সাথে বাংলাদেশি গণমানুষের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এটা খুব স্বাভাবিক যে কারো দুর্নীতি ও দুঃশাসন যদি প্রতিবেশী মুরুব্বিদের লাই পায়, ছত্রছায়া পায়; ওই মুরুব্বিদেরকে দুঃশাসনের ভিক্টিমরা কেন বন্ধু ভাববে? কার্যত সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা ভারতের এতদিনকার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা মারাত্মক মার খেয়েছে। তারা হয়ত নতুন দিনে তাদের প্রয়োজনেই আমাদের আনকোরা শাসকদের সাথে সম্পর্ক গড়বে। বাংলাদেশিদের সাথে বন্ধুত্ব ফিরে পেতে চাইবে। কিন্তু আমরা কোনোদিনই আর গণ-আন্দোলনে প্রাণ দেয়া হাজার মানুষের প্রাণ ফিরে পাবো না। মায়েদের আহাজারিও কোনোদিন থামবে না। আমাদের কোষাগারে আর ফিরবে না বহুমূল্যবান দেড়শ বিলিয়ন ডলার।

লেখক: সাংবাদিক
২৭ আগস্ট ২০২৪