পোস্টস

নিউজ

নারীবিদ্বেষ, বর্ণবাদের অভিযোগে শেক্সপিয়ারকে বাদ দিতে চান মার্কিন শিক্ষকরা

২৭ আগস্ট ২০২৪

নিউজ ফ্যাক্টরি

বর্ণবাদ, নারীবিদ্বেষ, সমকামীবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষ এবং শ্রেণীবিদ্বেষের অভিযোগে ইংরেজ নাট্যকার ও কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ক্লাসিক লেখাগুলো শিক্ষার্থীদের না পড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়োক টিচাররা। ওয়োক শব্দের মাধ্যমে সামাজিক এবং জাতিগত ন্যায়বিচারের মত বিষয়ের প্রতি সচেতনতাকে বুঝায়।   

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল লাইব্রেরি জার্নালের (এসএলজে) একটি সংখ্যায় ইংরেজি সাহিত্যের অনেক শিক্ষকই জানিয়েছেন, তারা শেক্সপিয়ারের লেখা হ্যামলেট, ম্যাকবেথ এবং রোমিও এন্ড জুলিয়েট এর মত ক্লাসিক সাহিত্য বাদ দিচ্ছেন। এর পরিবর্তে আধুনিক, বৈচিত্র্যময় এবং সকল শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তি আছে এমন কিছু পড়ানোর চেষ্টা করছেন। শেক্সপিয়ার পড়ানোর প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা।  

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজির অধ্যাপক এবং শেক্সপিয়ার স্কলার আয়ানা থম্পসন বলেছেন, ‘শেক্সপিয়ার ছিলেন ইংরেজ সাম্রাজ্যের কালো এবং বাদামী রঙের মানুষদের সভ্য বানানোর একটি অস্ত্র।'   

মিশিগান হাইস্কুলের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের প্রধান জেফরি অস্টিন বলেছেন, ‘শেক্সপিয়ারের সাহিত্য সার্বজনীন, এই ধারণাকে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ জানানো উচিত।’   

ওয়াশিংটন স্টেট পাবলিক স্কুলের সাবেক শিক্ষক ক্লেয়ার ব্রাঙ্ক এসএলজেকে জানিয়েছিলেন, তিনি তার ক্লাসরুমে শেক্সপিয়ার পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, শেক্সপিয়ারের সাহিত্য শ্বেতাঙ্গ, সিসজেন্ডার এবং হেটারোসেক্সুয়াল কেন্দ্রিক। ফলে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের তাতে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। শেক্সপিয়ারকে বাদ দেয়ার বিষয়ে তার স্কুল থেকে কোন আপত্তি জানানো হয়নি। আর এটি তার শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর বলেও প্রমাণিত হয়েছিল।

কানেক্টিকাটের হার্টফোর্ড পাবলিক হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ইংরেজি শিক্ষক লিজ ম্যাথুজ জানান, তার স্কুলের শতকরা ৯৫ ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা হিস্পানিক শিক্ষার্থী। সেজন্য তিনি শেক্সপিয়ারের পরিবর্তে এমন একজন লেখককে বেছে নিয়েছেন যিনি কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিকদের নিয়ে লিখেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি গত বছর রোমিও এন্ড জুলিয়েটের পরিবর্তে স্যান্ড্রা সিজন্যারোস এর দ্য হাউজ অন ম্যাঙ্গো স্ট্রিট বেছে নিয়েছি। এছাড়া চলতি বছর জ্যাসন রেনল্ডসের লং ওয়ে ডাউন পড়াচ্ছি।'    

তিনি উল্লেখ করেছেন, নতুন এই দুটি বইয়ের লেখক এবং চরিত্রগুলোর সঙ্গে তার শিক্ষার্থীদের সাদৃশ্য রয়েছে। ফলে তারা সহজেই এগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। প্রসঙ্গত, দ্য হাউজ অন ম্যাঙ্গো স্ট্রিট ১৯৮৪ সালে এবং লং ওয়ে ডাউন ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। অপরদিকে রোমিও এন্ড জুলিয়েট ১৫৯৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।  

এদিকে ওয়োক টিচারদের বাইরে অন্যান্য শিক্ষকরা জানান, তারা এখনো শেক্সপিয়ারের সঙ্গেই আছেন। তবে আধুনিকতার দৃষ্টিতে তার সাহিত্যকর্মকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছেন।

নিউজার্সির লিনক্রফট এলাকার হাই টেকনোলজি হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সারাহ মুলহের্ন গ্রস জানিয়েছেন, তিনি রোমিও এন্ড জুলিয়েট নাটকটি পড়ানোর সময় পৌরুষের বিষাক্ত দিকটি বিশ্লেষণ করেন তার শিক্ষার্থীদের কাছে। 

টেক্সাসের ইংরেজির শিক্ষক আদ্রিয়ানা অ্যাডাম জানান, শোকের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলতে হয় তা বুঝানোর জন্য তিনি হ্যামলেট নিয়ে আলোচনা করেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।  

‘টু টিচ অর নট টু টিচ’ শিরোনামে এসএলজেতে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন মিনেসোটাভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, লাইব্রেরিয়ান, বই বিক্রেতা আমান্ডা ম্যাকগ্রেগর। তিনি স্বীকার করেছেন, শেক্সপিয়ার একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক। বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ, ভাষার সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি অসাধারণ সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। তারপরেও এত বেশি সংখ্যক শিক্ষক কেন শেক্সপিয়ারের বিরোধিতা করছেন তা উপলব্ধি করতে পারছেন বলে জানান ম্যাকগ্রেগর। 

তিনি লিখেছেন, 'শেক্সপিয়ারের লেখায় অনেক সমস্যা রয়েছে। প্রাচীন ধারণা, প্রচুর নারীবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, সমকামীবিদ্বেষ, শ্রেণীবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষের পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের প্রতি বিদ্বেষ দেখা যায় তার সাহিত্যে।’   

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলিং লেখক জিম রিকার্ডস ওয়োক টিচারদের এ ধরনের কর্মকান্ডকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তারা অসাধারণ সাহিত্যকে নর্দমায় ফেলে দেয়ার চেষ্টা করছেন।  

সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, মেইল অনলাইন