পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

কাজী নজরুল ইসলাম এবং চলচ্চিত্র।

২৯ আগস্ট ২০২৪

মুহাম্মদ আল ইমরান

কাজী নজরুল ইসলাম

"আমি চিরতরে দূরে চলে যাব

তবু আমারে দেব না ভুলিতে

আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ

বেণী যাবে যবে খুলিতে।"

 

উল্লিখিত গানের গীতিকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম গানে বলেছেন, "...আমারে দেব না ভুলিতে...।" সত্যি কথা বলতে আমরা চাইলেও তাকে ভুলতে পারবো না! আর আমরা তাকে ভুলতেও চাই না।

 

সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ কাজী নজরুল ইসলামের। নাটক, সিনেমা, গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস সাহিত্যের সকল মাধ্যমেই নিজেকে বিকশিত করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী নজরুল ইসলামের গল্প উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশকিছু চলচ্চিত্র। তিনি নিজে অভিনয় করেছেন সিনেমায়। এমনকি পরিচালক হিসেবেও কাজী নজরুল ইসলাম কে আমরা পাই। যদি বলা হয় নজরুলের পেশা কি? তবে ঠিক এমন ভাবে বলা যাবে তালিকা সমূহ- কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সম্পাদক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, অভিনেতা, অনুবাদক, রাজনৈতিক কর্মী।

 

কাজী নজরুল ইসলাম পরিচালিত চলচ্চিত্রের নাম "ধূপছায়া"। যাতে তিনি দেবতা বিষ্ণুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৩৩ সালে পায়োনিয়ার ফিল্মস কোম্পানি থেকে গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা ‘ধ্রুব চরিত’ অবলম্বনে নির্মিত 'ধ্রুব' চলচ্চিত্রে দেবর্ষি নারদের চরিত্রে অভিনয় করেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি এই চলচ্চিত্রে গান লেখা ও সংগীত পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন। কণ্ঠ দিয়েছিলেন একটি গানেও। বাঙালি কবি, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৩৮ সালে নির্মিত ‘গোরা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। চলচ্চিত্রে সুরকার হিসেবে তিনি ১৯৩১ সালে সবাক চলচ্চিত্র 'জামাই ষষ্ঠী' এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত 'গৃহদাহ' চলচ্চিত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'সাপুড়ে' চলচ্চিত্রের কাহিনিকার ও সুরকার ছিলেন। 'চৌরঙ্গী' চলচ্চিত্রের জন্য ৭টি হিন্দি গান লেখেন। এছাড়াও কাজী নজরুল ইসলাম রজত জয়ন্তী, নন্দিনী, অভিনয়, দিকশূল চলচ্চিত্রের গীতিকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। উল্লিখিত চলচ্চিত্রের বাহিরেও নজরুল বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। অর্থাৎ সাহিত্যের অন্য শাখায় কাজী নজরুল ইসলাম যেমন সমাদৃত তেমনি সিনেমা বা চলচ্চিত্রের তাৎপর্যপূর্ণ। তার লেখা পদ্মগোখরা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে 'সুখ-দুঃখ' ও 'মায়ার বাঁধন' নামে দুটি সিনেমা নির্মিত হয়। ২০০৫ সালে পরিচালক মতিন রহমান কাজী নজরুল ইসলামের গল্প 'রাক্ষুসী' অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করের। এতে অভিনয় করেন পূর্ণিমা, ফেরদৌস ও রোজিনা সহ আরো অনেকে। ২০০৬ সালে কাজী নজরুল ইসলামের নাটক 'মেহেরনেগার' অবলম্বনে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র। যা যৌথভাবে পরিচালনা করেন মুশফিকুর রহমান গুলজার ও চিত্রনায়িকা মৌসুমী। কেন্দ্রীয় চরিত্র কাশ্মিরের তরুণী মেহেরনেগারে অভিনয় করেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী এবং আফগান যুবক ইউসুফের ভূমিকায় ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ২০১৪ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্মসের ব্যানারে গীতালী হাসান কাজী নজরুল ইসলামের 'অতৃপ্ত কামনা' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত করেন 'প্রিয়া তুমি সুখী হও' চলচ্চিত্র। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফেরদৌসের সঙ্গে ছিলরর হন সায়লা সাবি।

 

তার দাম্পত্য সঙ্গী নার্গিস আসার খানম(বিবাহ: ১৯২১, বিচ্ছেদ: ১৯৩৭), আশালতা সেনগুপ্ত(প্রমীলা দেবী) (বিবাহ: ১৯২৪, মৃত: ১৯৬২)। তাদের সন্তান কৃষ্ণ মুহম্মদ, অরিন্দম খালেদ(বুলবুল), কাজী সব্যসাচী, কাজী অনিরুদ্ধ। তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র কাজী সব্যসাচী ছিলেন একজন বাঙালি আবৃত্তিকার, আর কাজী অনিরুদ্ধ ছিলেন বাঙালি গিটারবাদক।

 

তিনি ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে(২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) ভারতের বর্তমান পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গে(চুরুলিয়া, বর্ধমান, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত) জন্মগ্রহণ করেন।

৭৭ বছর বয়সে ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে(২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কাজী নজরুল ইসলাম তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

মুহাম্মদ আল ইমরান

১২ই ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে আগস্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।