তুমি পাবে মাত্র এক টাকা । সুতরাং এবার তোমাকে এক টাকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে । নতুন ফায়সালা শুনে তিন রুটিওয়ালা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল। মনে মনে বলল, এর নাম কি ইনসাফী বিচার? এর নামই কি সুশাসন প্রতিষ্ঠা? খানিকপর সে রাগ সংবরণ করে বিস্মিত কণ্ঠে খলীফাকে সম্বোধন করে বলল, হযরত! এ কি বলছেন আপনি। সে আমাকে তিন টাকা দিতে চায় আমি নিতে চাইনি। আপনিও অনুরোধ করেছেন তিন টাকা নিতে। তাতেও আমি সম্মত হইনি। আর এখন আপনি বলছেন, আমাকে এক টাকা নিতে। এটা কি করে সম্ভব? খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত আলী (রা.) একটু নড়ে চড়ে বসলেন। বললেন, তিন টাকার কথা ছিল আপোষ-মিমাংসার কথা। কিন্তু তুমি তো আপোষ-মিমাংসায় যেতে রাযী নও। তুমি চাও ইনসাফ। তুমি চাও সুবিচার। আর ইনসাফ ও সুবিচারের দৃষ্টিতে তুমি এক টাকার বেশী কিছুতেই পেতে পার না। যদি বল কিভাবে? তাহলে আমি একবার নয় একশ বার বুঝিয়ে দিতেও রাযী আছি ।আলী (রা.) এর দৃঢ়তায় লোকটি নরম হয়ে এল। এবার সে তার গলার স্বর নীচু করে ভদ্রতার সাথে বলল, হযরত! অনুগ্রহ করে আমাকে বুঝিয়ে দিন, কিভাবে আমি এক টাকা পাওয়ার যোগ্য। যদি বুঝাতে পারেন, তবে আমি এক টাকাই নেব। এর বেশী দাবী করব না। হযরত আলী (রা.) আপন ফায়সালার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বললেন- সর্বমোট রুটি ছিল আটটি। খেয়েছ তোমরা তিনজন। প্রত্যেকটি রুটি ভাগ করলে তাতে মোট চব্বিশ টুকরো রুটি হয়। তোমার রুটি ছিল তিনটি। তিন রুটির প্রত্যেকটির তিনভাগ করলে টুকরো হয় মোট নয়টি । আর তোমার সঙ্গীর রুটি ছিল পাঁচটি। পাঁচ রুটির প্রত্যেকটির তিন ভাগ করলে টুকরো হয় মোট পনেরটি । কে কম খেয়েছে, কে বেশী খেয়েছে, সম্মিলিত খাওয়ায় এ তারতম্য করা হয় না। সুতরাং ধরা হবে যে, তোমরা প্রত্যেকেই সমান খেয়েছ। অর্থাৎ চব্বিশ টুকরো রুটি থেকে প্রত্যেকেই আট টুকরো করে খেয়েছ। এবার লক্ষ্য কর। তোমার রুটি ছিল নয় টুকরো। তন্মধ্যে তুমি নিজেই খেয়ে নিয়েছ আট টুকরো। বাকী থাকল এক টুকরো । সুতরাং আগন্তুক তৃতীয় ব্যক্তি তোমার ভাগ থেকে কেবল এক টুকরো রুটিই খেয়েছে। অপরদিকে তোমার সাথীর ছিল পনের টুকরো। তন্মধ্যে সে নিজে খেয়েছে আট টুকরো । বাকী রইল সাত টুকরো। সুতরাং তৃতীয় ব্যক্তি তার ভাগ থেকে খেয়েছে সাত টুকরো । লোকটি আট টুকরোর বিনিময়ে আট টাকা দিয়েছে। সুতরাং একথা খুবই পরিস্কার যে, সাত টুকরোর বিনিময়ে তোমার সাথী পাবে সাত টাকা, আর এক টুকরোর বিনিময়ে তুমি পাবে এক টাকা ।ফায়সালার চমৎকার বিশ্লেষণ শুনে শুধু তিন রুটিওয়ালাই নয়। উপস্থিত সকলেই হতভম্ব হয়ে গেল। সকলেই খলীফার প্রখর বুদ্ধিমত্তার ভূয়সী প্রশংসা করল। অবশেষে তিন রুটিওয়ালা বলতে বাধ্য হল- হ্যাঁ, আমি এক টাকাই পাওয়ার উপযুক্ত। এর বেশী নয়। খামাখা না বুঝে এতক্ষণ পাগলের মত প্রলাপ বকলাম। এতটুকু বলে মনে মনে খলীফাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক টাকা নিয়েই দরবার থেকে বেরিয়ে গেল। প্রিয় পাঠক, আলোচ্য ঘটনায় হযরত আলী (রা.) এর জ্ঞানের গভীরতা ও বিস্ময়কর বিচার বুদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হযরত সাহাবায়ে কেরামের পদাংক অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। (সূত্রঃ তারীখে খুলাফা)