পোস্টস

চিন্তা

কনফেডারেশনঃ বিভক্ত মার্কিনীরা

৩১ আগস্ট ২০২৪

Md. Rezaul Islam

মূল লেখক Md. Rezaul Islam

কনফেডারেশন শব্দটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারও কাছে স্বর্গের মত আবার কারও কাছে নরকের চেয়েও খারাপ। এখন কথা হচ্ছে, কেন আমি কনফেডারেশন কথাটা বললাম? কি এমন বিষয় লুকায়িত রয়েছে যার জন্য দেশটির মানুষ আজও দুভাগে বিভক্ত। সেটা জানার জন্য চলুন প্রায় ১০০ বছর আগে ফিরে যাই। 

যুক্তরাষ্ট্র একটি সময় আমাদের মতই ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরের যুদ্ধের পর ১৭৮৩ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। এর প্রায় ১০০ বছর পর ১৮৬১ সালে দেশটির উত্তর ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ সংঘঠিত হয়। যুদ্ধের অন্যতম কারণটি ছিল ক্রীতদাস প্রথার বিলোপ। ১৮৫০ সালে তুলা চাষ করে দক্ষিণেররাজ্যগুলি  অর্থনীতিতে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠে। মানবপাচারকারিরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দাসদের নিয়ে আসত এবং ওইসকল এলাকায় বিক্রি করত। দাসদের সাথে দক্ষিনের রাজ্যগুলো এমন কোন জঘন্যতম কাজ নেই যে করত না। জোরপূর্বক ও বেশি সময় কাজ করানো, ধর্ষণ-নির্যাতন, এমনকি হত্যাও করত। অন্যদিকে উত্তরের রাজ্যগুলো এই দাসপ্রথার বিরোধী ছিল। তাঁরা চাচ্ছিল এটা যেন যুক্তরাষ্ট্র হতে উঠিয়ে নেয়া হয়। কারণ এটা সংবিধান ও মানবাধিকার বিরোধী। তখন দক্ষিনের রাজ্যগুলো এই দাসপ্রথা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। ফলে দাসপ্রথা প্রশ্নে উত্তর ও দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধিপেতে থাকে।এমনকি ব্যাপটিস্ট, মেথডিস্ট, এবং প্রেসবিটারিয়ান খিষ্ট্রানগির্জাগুলিও দাসপ্রথা প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৮৬০ সালে  আব্রাহাম লিংকন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিতহয়েই দাসপ্রথার বিস্তার রোধ করার ব্যবস্থা নেন।যার ফলে ১৮৬১ সালে দক্ষিণেরসাতটি রাজ্য সাউথ ক্যারোলিনা, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা, আলাবামা, জর্জিয়া, লুইজিয়ানা এবং টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর হয়ে কনফেডারেট স্টেটসঅফ আমেরিকা নামে নতুন একটা রাষ্ট্র গঠন করে। এর কিছুদিন পরেই ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল কনফেডেটের বাহিনী কর্তৃক সাউথ ক্যারোলিনার চার্লস্টনে অবস্থিত সামটার দুর্গ আক্রমণেরমাধ্যমে আমেরিকাতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরে আরো চারটিরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে কনফেডারেট স্টেটস অফ আমেরিকায় যোগ দিয়ে এই চারটি রাজ্য হলো, ভার্জিনিয়া, আরকানসাস, টেনেসি এবং নর্থ ক্যারোলিনা। অবশেষে দীর্ঘ চার বছর পর ১৯৬৫ সালের ৯ এপ্রিল গৃহযুদ্ধটি শেষ হয়। তবে হ্যাঁ গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস কর্তৃক ১৮৬১ সালে কনফিসক্যাশন এক্টস পাস হয় এবং ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক ইমানসিপেশন প্রক্লেমেশন ঘোষণা করার ফলে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর ১৮৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দাসপ্রথা চিরতরে বিদায় করা হয়।

১২ আগস্ট ২০১৭। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া শার্লোটসভিল শহর। এখানে বলে রাখা ভাল ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শহরের ৮৬ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে ভোট দেয়। অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এখানে খুবই নগন্য ছিল। ওইদিন শত শত শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে। কারণ দাস প্রথার পক্ষে লড়েছিলেন এমন এক কনফেডারেটপন্থী জেনারেল রবার্ট লির মূর্তি অপসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে যেটা ১৮৯০ সালে স্থাপন করা হয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সকল ভাস্কর্য ও কনফেডারেশনের পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাঁরা মিছিলে বলতে থাকে,"শ্বেতাঙ্গদের জীবনের মূল্য আছে।" অন্যদিকে বর্ণবাদবিরোধীরাও তাঁদের বিপক্ষে মিছিল করছিল। এক সময় মধ্যে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং এ সময় অন্তত তিনজন নিহত হয়। আহত হন আরো অন্তত ৩৫ জন। এক ব্যক্তি বর্ণবাদবিরোধী সমাবেশের ওপর চলন্ত গাড়ি তুলে দেয়। শার্লোটসভিল শহরের মেয়র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়বাদীদের এই মিছিলকে 'বর্ণবাদী' বলে আখ্যায়িত করেন। সর্বশেষ জরুরী অবস্থা জারির পর এখন শহর বেশ শান্ত। 

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কেন কারও কাছে স্বর্গ আর কারও কাছে নরকের মত। একবিংশ শতকে এসেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের অতীত অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তারা কনফেডারেশনের মত হীন চেন্তা-চেতনা এখনো লালন পালন করে আসছে। এমনকি সম্রাজ্যবাদের নীতিও আকড়ে ধরে রয়েছে। সুতরাং তাদের এসব পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। হীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মানব কল্যানে সময় ব্যয় করতে হবে।।

 

সবাইকে ধন্যবাদ।