পোস্টস

গল্প

সুখের স্বরলিপি

১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৌকির আজাদ

 

 

ফ্ল্যাট বাড়িটা ছিমছাম। সব মিলিয়ে পাঁচ জন মাত্র মানুষ রয়েছে। রুমের পাশের বারান্দায় বাসার কাজের খালা আর উনার দুই মেয়ে ঘুমায়। মোবাইল টেলিফোন হাতে বাস্তবতার বাইরের ভার্চ্যুয়াল জগতে রাফি প্রায় গুম হয়ে ছিল- বারান্দায় খালার মেয়েরা কি জানি কী নিয়ে অনেক শব্দ করে হেসে হেসে বোধহয় একজন অন্য জনের উপর পড়ছে। পড়া থেকে উঠে আবার হাসছে। কারণটা বোঝা যাচ্ছে না। প্রথমে মনে হলো, সে ওদের গিয়ে বলবে যেন এতো শব্দ করে না হাসে কিন্তু একই সাথে সে ভাবলো, মানুষ কি মেপে হাসতে পারে। ওর মনে হলো আজকালকার যুগে এটা  সম্ভব।

 

মানুষ বেশিরভাগ ভেতরে একরকম ভাবে হাসে আর বাইরে অন্য রকম। বিশেষ করে নতুন কোনো মানুষের সাথে কথা বলার সময়। ঐ সময়টা মানুষটাকে চিনে নেবার সময়। রাফির মনে হলো, সে বেশি ভাবছে। কোথায় যেন পড়েছিলো, হাসি দেখলে বা শুনলে নাকি মন ভালো হয়। তবে কি? নিজের বিষয়ে এমন ভাবনা ওর প্রায় প্রায় হয়। নিজেকে জানতে চাওয়ার এই এক অদ্ভুত কৌতূহল।

 

রাফি নিজে নিজে নিজের বিষয়ে কিছু মতবাদ তৈরি করে রেখেছে। সে কখন কোন সময়ে কেমন করে অভিব্যক্তি ব্যক্ত করবে। নিজ বিহেভিয়ার নিয়ন্ত্রণের মতো এক প্রকার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সে নিজেকে নিজের মতন করে সাজাতে চায়।

 

কিন্তু সেটা করতেই ওর যত বিপত্তি। মাঝে মাঝে ওর জানতে ইচ্ছে করে নিজে যেটা ভাবছে – সেটা ঠিক তো!

 

এই সময়গুলোতে নীলা থাকলে ভালো হতো। নীলাকে প্রশ্ন করে জানা যেতো আসলে ব্যাপারটা কী। আমাদের জীবনে আসল ব্যাপারটা কেউ কাউকে বলে দেয় না, সম্ভবত রাফির বাকি সব মানুষের উপর থেকে অন্তত এই বিষয়ে আর কোনো আস্থা বাকি নেই। সে দেখেছে, দরকারের সময়ের সিদ্ধান্ত বরাবর তাকে নিজের বিবেচনায় গ্রহণ করতে হয়েছে। সে কথা থাক।

 

এতক্ষণ অনবরত ফেসবুক নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে মনে হলো কিছু দেখছি না বা পড়ছি না কিন্তু স্ক্রল করে যাচ্ছি – এটার কোনো মানে হয়?

 

নিজের উপর বিরক্ত হয়েই হোয়াটসএ্যাপে ঢুকলো। প্রথমেই নীলার নাম। সে নীলার নাম্বারটা নিলি দিয়ে সেভ করে রেখেছে। নীলা যেহেতু ওর মনটা কেড়ে নিয়েছে সেখান থেকেই এই নিলি নামকরণের যথার্থতা।

 

"তুমি কই ?" লিখে ভাবলো, সে তো জানে নীলা বাসাতেই আছে। হয়ত ফোনটা সঙ্গে নেই। এরকমটা নীলার ক্ষেত্রে সম্ভব। রাফি যেমনটা সার্বক্ষণিক ফোন সঙ্গে নিয়ে ঘুরে নীলা সেরকম না।

 

একটা ছোটখাটো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরের দিকে খেয়াল করলো। এইতো মাত্র কয়েকঘণ্টা আগেও নীলা এই ঘরেই ছিল। নীলার কিছু স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঘরের এখানে ওখানে। ওইতো বারান্দা লাগোয়া জানালার পাশের চেয়ারটাতে বসে বলেছিলো, "জানো! মাঝে মাঝে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, ভাবি বলবো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত না! আর বলা হয়ে ওঠে না।" কথাগুলো শুনতে মিষ্টি লাগে রাফির।

 

সে এসবের অর্থ বুঝে না প্রায়ই। শুধু হাসে। রহস্যটা আসলে নীলার কথায় নাকি রাফির হাসিতে – সেটা দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে এক ফাঁকে ভেবে নেয়। পাল্টে যায় কথার প্রেক্ষাপট।

 

আচ্ছা। নীলা কি এভাবে রাফি কে নিয়ে ভাবে? রাফির মনে হয়, তাঁর এই বোধটা মনে হয় আবেগ। নিজেকে সে যন্ত্র মনে করে। ইদানীং অনেক বই পড়ছে রাফি। বই পড়ে পড়ে আবেগ বোঝার চেষ্টা করছে। বইতে কি আবেগ থাকে? লেখকেরা কি তবে আবেগ বিক্রেতা ? এরকম ভাবে ভেবে রাফি নিজেই অবাক হয়।

 

ফোন বেজে ওঠে। নীলা লিখেছে "এখন একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে।" রাফি প্রশ্ন করে না। প্রশ্ন করে অতীতে লাভ হয়নি। নীলা যেটা করেছে সে সেটা করবেই। এর ব্যতিক্রম হবে না।

 

পাশের রুমে বাবা সম্ভবত টকশো দেখছেন। উপস্থাপিকা খুব জোর দিয়েই অতিথির কথা থামিয়ে দিয়ে বারবার বলছেন, ‘ আমি আপনার কাছে ফিরছি’ – উনাকেও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। প্রোগ্রামের প্রডুউসার চুপচাপ মিউট করে দিয়েছেন সম্মানিত বক্তা সেটা বুঝতে পারেন না। রাফি বাবার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দেয়। বাবা ফিরে তাকিয়ে বলেন, "কী, ঘুমাসনি এখনো ?" রাফি বলে, "তুমি এখনো জেগে আছো সেটা দেখতে আসছি।" কথাবার্তা আর বেশি এগোয় না। বাবা ছেলে পরস্পরকে 'শুভ রাত্রি' বলে বিদায় নেয়।

 

ফ্ল্যাটে আরো দুটো রুম আছে। তার একটা গেস্ট রুম। অন্যটাতে রাফির বাবা অ্যাডভোকেট আমজাত সাহেব সন্ধ্যের পর বসেন। নিজস্ব চেম্বার। বেশিরভাগ দিনই মক্কেল থাকে আর তখন সঙ্গে থাকেন করিম চাচা। করিম চাচা বাবার সব কাজের সাথি, শুধু একসাথে ঘুমানো আর টয়লেট যাওয়া বাকি। রাফির মা ইন্তেকাল করেছেন ১০ বছর হয়েছে। পাঁচ বছর আগে তাঁর বড় ভাই, বউ-বাচ্চা নিয়ে অন্য জায়গায় থাকছে।

 

রাফি একা ড্রয়িংরুমের অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ দেখে কিছুক্ষণ। ফ্ল্যাট বাড়িতে সবরকম আয়োজন আছে তবু রাফি অদ্ভুত এক শূন্যতা অনুভব করে – রাফি ভাবে সুখ জিনিসটা আসলে কী ? 

 

পরিপূর্ণতা কি তবে সুখের প্রতিচ্ছবি না ...

 

 

নীলার মা-বাবা, নীলার জন্মের পরপর আলাদা হয়েছেন। নীলার বাবা আর একটা বিয়ে করেছেন। নীলার মা – নীলাকে বাবার বাসায় রেখে এসেছিলেন। পরে নীলার নানি গিয়ে নীলাকে নিয়ে এসেছে। নীলা তখনও জানতো না। যখন একটু বড় হয়েছে তখন মা’র কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারে ব্যাপারটা।

 

বোধ হওয়ার বোধ প্রথমবারের মতো করে তাঁর খারাপ লাগে। এই অদ্ভুত খারাপ লাগাটা বুকের কোথাও কেমন এক যন্ত্রণার অনুভূতি তৈরি করেছিলো সে সময়।

 

আমাদের যাবতীয় যন্ত্রণার অনুভূতিগুলোর নাম দেয়া সম্ভব হলে নীলা এই যন্ত্রণাকে “যন্ত্র না’র আবেগ” এমন নাম দিতো। কিন্তু সেদিন এমনটা মনে হয় নি তাঁর। মনে হতে হয় তখন সে ব্যাপারটা নীলা বুঝতে পারতো না।

 

যখন থেকে বুঝেছে তখন বুঝতে পেরেছে, বুঝতে পারাটাও কখনো কখনো আমাদের অবুঝ করে তোলে। “কেনো” এমনটা হলো, তাঁর সাথেই কেনো – এসব প্রশ্ন আজকাল হাসির উপাত্ত মনে করে নীলা। বুঝ হওয়া হয়ত এটাই।

 

মাঝে মাঝে নীলা রাফিকে অনেক কিছু বলতে চায়। আসলে ঠিক রাফিকে না।

 

সে বলতে চায় একটা মানুষকে। মানুষটা কে সেটা নীলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ না – গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে – মানুষটা তাঁর নিজের।

 

নিজের মানুষ আমাদের নিজেদের জীবনে সচরাচর পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। নীলা তাই ভাবে না।

 

কিন্তু কী যেন আদিম বাঁচার তাড়না তাঁকে ভাবতে বলে আবার না ভেবে থাকাতে যে আনন্দ আছে সেটাও সে খুব বুঝতে পারে। বুঝতে পারাটাতে আনন্দ আছে - আবার কষ্টও আছে।

 

একই সাথে দুইরকম অনুভূতি সম্ভবত মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর হয় না। হয়ত হয় – মানুষ জানে না।

 

নীলার ভাবনার জগৎ অন্য রকম। রাফি কি নীলা কে বুঝতে পারে – এই বুঝতে পারা বা না পারার বোঝাবুঝি নীলাকে প্রায়ই বিষাদগ্রস্ত করে। একই সাথে নীলাকে অনুপ্রাণিত করে।

 

জগতে নিজের বলে যদি কেউ তাঁর থেকে থাকে তবে সেটা সে নিজেই নিজের আপন। মা’র সাথে সম্পর্কটা কেমন যেন। সেটা সে বুঝতে চায় না। নিজেকে সে বুঝিয়েছে, তার মা আসলে তাকে অপরাধ মনে করে – এটা মেনে নিতে নীলার অনেক সময় লেগেছে।

 

মানুষ জন্মায় মৃত্যুর প্রয়োজনে। তবে কি মৃত্যুটা কোনো সমাধান? যদি সেরকম হয়, সমাধানটা কীসের। আবার ধর্ম বলে মৃত্যু বিচারকার্য শুরুর যাত্রা। অন্য ধর্মে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু তাতে কী ? নীলার ধর্ম বেঁচে থাকা।

 

অনেক আগের প্রবাদ সে মনে মনে আওড়ায় – টিকিয়া থাকাই চরম সার্থকতা। এতসব আবোল তাবোল ভেবে নীলার ভাবনায় ক্লান্তি আসে না। তাঁর ভাবনা জুড়ে থাকে মুক্তির চেতনা।

 

আমাদের জন্ম আমাদের নিজেদের থেকে মুক্তির প্রয়োজনে। এই মুক্তির শেষ নেই। এই মুক্তি বাঁচার শুরুর প্রথম ধাপ।

 

নীলা নিজেকে কতটুকু ভালোবাসে সেটা সে জানে না। এভাবে না বলে বলা উচিত জানতে চায় না। সে শুধু জানে সম্ভব ...

 

এই সম্ভাবনা নীলাকে স্বপ্ন আঁকতে শেখায় – বলে, অর্ণবের কী একটা গান আছে না, ঐ যে 'অসম্ভবের কখন কবে মেঘের সাথে মিল হল ক্যান ?' এই চিন্তার মেঘের সাথে নীলার পরিচয় ১৯ বছরের।

 

বোধ হওয়ার সময় থেকে চিন্তার মেঘগুলোকে সে অতিক্রম করেছে। নীলা ভাবে সে তাঁর মা-কে খুব কাছে থেকে দেখেছে বলে ওর মা-কে সে খুব ভালো বুঝতে পারে।

 

নীলা বুঝতে পারে না – এমনটা না হলে ভাবনার এই মেঘ কাটতো না তাঁর। তখন সে আজকের নীলা হতো না।

 

মুঠোফোন বেজে ওঠে। আরম্ভের! এসব তাঁর ভালো লাগে না। ভালো না লাগা নিয়ে সে রীতিমতো গবেষণা করেছে। ভেবে ভেবে বের করেছে ভালো লাগার ব্যাপারটা বৈজ্ঞানিক। মস্তিষ্কের কিছু জৈব রস-এর ফলাফল ভালোলাগা – সেখান থেকে ভালোবাসা – তবে প্রেম!

 

নীলা প্রেম বুঝতে চেয়েছে। রাফির সাথে কিছু মুহূর্তের স্পর্শের শিহরণের কিছু ভেজা স্নিগ্ধ স্মৃতি তাকে প্রণয়ের আদলে আন্দোলিত করেছে। 

 

তবে কি এই ক্ষণিকের মুহূর্তটা কে আগলে রাখা সুখ?

 সুখ কি তবে স্মৃতির প্রতিচ্ছবি ?

 

 

হাসির কারণটা তেলাপোকা। টুম্পা শুইয়েছিল মায়ের এক পাশে আর শম্পা অন্য পাশে। কোথা থেকে একটা তেলাপোকা মায়ের মুখে এসে পড়ে – আর এই দৃশ্য দেখে দুই বোন হাসিতে গড়াগড়ি করে বারান্দা কাঁপিয়ে ফেলেছে। মা বার বার বারণ করে বলছেন, "রাফির আব্বা শুনলে রাগ করবো – আসতে হাসোতে পারিস না?" মায়ের প্রশ্ন শুনে দুই বোন আরো জোরে হাসে। হেসে ফেলেন মা নিজেও। সারাদিন ঘরের এটা ওটা করে দিনাতিক্রম করার ক্লান্তি কোথায় যেন হারিয়ে থাকে। ক্লান্তি বড়ই বিষাক্ত, সহজে পিছ ছাড়ে না। তবুও সময়ের দাপট বেশি – যা খুশি তাই করে। সময়ের কাছে ক্লান্তি কিংবা অবসাদের দাম নাই। হাজার হলেও, ক্লান্তিময় মুহূর্তও তো সময়ের অংশ।

 

ঠিক তখন। এই যান্ত্রিক অট্টালিকাময় কংক্রিটের শহর থেকে অনেক দূরের কোনো মহাসড়ক ধোরে নির্ঘুম চোখে রাতের ট্রাক চালাচ্ছেন শম্পার বাবা। আফজাল ড্রাইভার নির্ঘুম চোখের পাতার আড়ালে স্বপ্ন বুনছেন, ‘ছোট্ট মাইয়াডার পড়ার অনেক শখ, এই মাসে তিনটা ট্রিপ বেশি মারতে পারলে স্কুলের বেতনটা জোগাড় হইব – আবার ড্রেস কিনুনের ট্যাকা লাগবো আলগা’ – স্বপ্নগুলো চলতে থাকা ট্রাকের মতন বাতাসে ভাসতে থাকে।

 

ভেসে হয়ত পৌঁছে যায় স্বপ্ন গড়ার কারখানায়। কারখানার কর্তব্যরত খোদার কর্মচারীরা কি আফজাল ড্রাইভারের স্বপ্নের ফাইলে সই করে বাস্তবায়ন ডিপার্টমেন্টে চালান দিবে? স্বপ্নগুলো কি তারপর বাস্তব জগতে বাস্তবায়িত হবে ?

 

আফজাল ড্রাইভার এসব জানে না। সে জানে শুধু কল্পনাতে ভাবতে। ভাবনাগুলো তাঁর আকাশ ছুঁয়ে রয়। তবে কি ভেবে ভেবেই আমরা বাস্তব গড়ি? 

 

এই বাস্তব গড়ার জাগ্রত স্বপ্ন দেখাই কি তবে সুখ ? 

সুখ কি কল্পনাপ্রসূত কোনো অনুভূতি …

 

 

করিম মিয়া অ্যাডভোকেট আমজাতের কেরানি। দীর্ঘ ২০ বছর স্যারের সাথে আছেন। থেকে থেকে আইন বিষয়ে যতটা না জেনেছেন তার থেকে বেশি জেনেছেন দুনিয়াদারির কানুন। এই এক অদ্ভুত দুনিয়া। মানুষ বোঝে না এমন কিছু নেই কিন্তু মানুষ বুঝতে চায় না। চাইলে মানতে চায় না। মানতে চাইতে অন্যের পরামর্শ নিয়ে আশ্বস্ত হতে চায়। সব মক্কেল এমন হয় না অবশ্য। তবে বেশিরভাগই এরকম। করিম মিয়া বুঝতে পেরেছে, মানুষ বিপদ ভয় পায়। বিপদে মানুষ হুঁশের বেশকম হয় আর ঐটাই উপদেশ দেয়াড় ভালো সময়।

 

আমজাত সাহেব চেম্বারে ঢোকার আগে করিম মিয়াঁ মক্কেলদের নানা রকম শলাপরামর্শ দেয়। বিনিময়ে কেউ কেউ বখশিস দেয়। মক্কেল বেশি বোকা হলে করিম মিয়াঁর নাম্বার নিয়ে উকিলের আড়ালে ফোন করে – ঐ সব মক্কেল করিম মিয়াঁর সৌভাগ্যের চাবি। মাসে এরকম অন্তত ২/১ টা মক্কেল পেলে পকেট নিয়ে আর চিন্তা থাকে না।

 

আমজাত এডভোকেটের এসব অজানা না। তিনি, করিম মিয়াঁ থেকে জেনে নেন পরামর্শ কতদূর এগিয়েছে। সবটা বুঝে নিজের কথার চাল চালেন মক্কেলের সামনে। প্রায় মজা করে করিম মিয়াঁকে হেসে হেসে বলেন, "কিরে করিম, এইবারে তো বড় দান মারলি, তো কত ঢুকলো পকেটে?" করিম মিয়াঁর তখন গর্ব হয়। সে, "স্যার, আপনিও না, সব তো আপনার থেকেই শেকেছি" – বলে তার বিশেষ এক ভঙ্গিতে হাসে।

 

করিম মিয়াঁর তখন গর্ব হয়। নিজের উপরই একপ্রকার ভাব জন্মায়। তাঁর মনে হয় এই না হয় জীবনটা সার্থক হয়েছে। নিজের সাফল্যে নিজের নজর লেগে যাবে বলে মনে মনে হাসতে থাকা করিম মিয়াঁ নিজের হাসি থামায়। সে জানে নিয়তি বড্ড কঠোর। কখন কীভাবে কার থেকে কি কেড়ে নিবে কিচ্ছু বলা যায় না। করিম মিয়াঁ থমকে থেকে আনন্দের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

 

তবে কি আবেগের নিয়ন্ত্রিত অনুভূতিতে সুখ থেকে থাকে ? সুখ কি তবে নিয়তির দেয়া দান মাত্র ?

 

 

শেফালি বুয়া। বাসা বাড়িতে কাজ করেছেন। জীবন যাত্রায় নানা রকম বাড়িতে কাজ করেছেন তিনি। প্রথম জীবনে বিষয়টা বুঝে উঠতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। মফস্বল না, পাড়াগাঁও না একেবারে গণ্ডগ্রাম থেকে উঠে এসে শহরের মানুষের জীবন ধারা বুঝতে শেফালির সময় লেগেছে। এক মাস এ বাড়ি কাজ করলো তো তারপরের মাস চাকরি নাই। আবার অন্য বাড়ি।

 

বড় ভাই আলতাফ মিস্ত্রি বোনকে ঢাকায় এনেছেন কারণ গ্রামে তাঁদের আর কিছু বাকি নাই। আলতাফ মিয়াঁর আক্ষেপ - বাপে সব জমি জমা বেইচ্চা জুয়া খেলসে আর হারসে, মাডারেও শেষ সময় ডাক্তারি চিকিস্যা দেওনের টেকা আসিলো না। মাডাও ঔষুদ-বড়ি না পায়া মরল। বাপের তখন হুঁশ ফিরলো। জুয়া ছাইরা স্ত্রী বিরহে ধরল মদ। বছর দুইয়ের মধ্যে তিনিও পার্থিব জীবন ছাড়লেন। আলতাফ রাজ মিস্ত্রির কাজ নিলো। কুদ্দুস মিয়াঁর দলে ঢুইকা তাঁর ঢাকায় আশা। যেটুকু কামায় তার অর্ধেকটা গেরামে পাঠায় বইনের জন্য। কিন্তু এভাবে চলে না।

 

তাঁর নিজেরও জীবন আছে। সেও চায় বিয়ে করতে। ঘর সংসার করতে। সে ঠিক করেছে বাপের মতো সে কখনো হবে না। ‘বাপকা বেটা’ – ধারণা আলতাফ মিস্ত্রির জন্য মিথ্যা। সে হবে, বাবার মতো বাবা। শহর তাকে, ‘আব্বা’ থেকে ‘বাবা’ শিখিয়েছে। আরো নানা রকম শহুরে চালচলন ব্যাপার-স্যাপার সে শিখে নিয়েছে। শেফালিকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে।

 

গতমাসে যেই তিনতলা বাড়ির ছাদ ঢালাই দিলো ঐ বাড়ির সাহেব খুব ভালো; কম কথা বলেন কিন্তু যখন বলেন, শুনে মনে কেমন কেমন জানি করে। কিন্তু আপাডা কেমন জানি। ফিররাও তাহায় না। শেফালিকে এই বাসায় প্রথম কাজে দিয়েছিলো। শেফালি এক মাসের বেশি টিকে নাই। ভাইরে সে বলে, ‘ ভাইজান, খালাম্মা বালা বেডি না, আমারে দিয়া কেমন কেমন কাম করাইতে চায়! স্যার বাড়িতে না থাকলে অন্য বেডা আহে ... – এর বেশি সে ভাইরে বল্যতে পারে না। আলতাফ শেফালিকে অন্য বাড়িতে কাজ জোগাড় করে দেয়। বইনটারে বিয়ে দিতে পারলে আলতাফের শান্তি হয় –

 

তবে কি, সুখ - শান্তির প্রতিচ্ছবি ?

 

শেফালি ২-৫ বাড়ি ঘুরে অ্যাডভোকেট আমজাতের বাড়িতে কাজ নেয়। এই বাড়ির খালাম্মা কী যে ভালা মানুষ।

 

শেফালির মনে হয় খালাম্মা অন্য মায়ের পেটে ধরা আপন বড় বইন। নাসিমা চৌধুরি শিক্ষিত মানুষ।

 

নববিবাহিত দম্পতির জীবন দেখে শেফালির হিংসা হয় মাঝে মাঝে। বিস্মিত হয়ে সে ভাবে - জীবন এমনও সুন্দর হয় মাইনশের! নাসিমা, শেফালিকে বই পড়া শেখাতে চায়। শেফালির ওদিকে মন কম।

 

শুধু বিকাল হইলে টিভিতে ফিলিম হয় – তাঁর আগ্রহ সেটা দেখাতে। শেফালি এর আগে এই রকম বাক্স যন্ত্র দেখে নাই তবে এর কথা শুনেছিলো।

 

এ বাড়িতেই শেফালির অনেক সময় কাটতে থাকে। একসময় স্যারের ড্রাইভার আফজালের সাথে শেফালির বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে যমজ মেয়ের জন্ম হয়।

 

দুজনই সমান কিন্তু ঘড়ির কাঁটার হিসেবে প্রথমে শম্পা তাঁর দুই মিনিট পর টুম্পা। জীবন ও জীবনের যাপিত সময় চলতে থাকে।

 

অ্যাডভোকেট সাহেবের চারটা পিকআপ ট্রাকের একটা আফজাল চালায়। বাকিগুলোর তদারকিও সে করে। এটাই তাঁর চাকরি। স্যার বলেছেন, ‘একটা পিকআপ আমি তোমারে দিয়া দিমু’ – স্যারের আশ্বাসে আফজাল খুশি হয়। শেফালিরে গিয়ে কানে কানে অনেক মিষ্টি কথার ফাঁকে ফাঁকে এ কথাও জানাতে সে ভুলে না। শেফালি তখন "আফনে সরেন তো" বলে আফজালের আরো কাছে আসে।

 

শেফালির জীবন কাটতে থাকে সুন্দরভাবেই। শেফালির ইচ্ছা হয়, নাসিমা আপার মতো যদি তার জীবন হতো। কিন্তু তার জীবনেও প্রায় সবই আপা করে দিয়েছেন। এমনকি, এই বাসায় তারে কেউ বুয়া বলে ডাকে না – রাফি তাকে খালা বলে এটা ওটা করতে বলে। আপার বড়ো পোলাডা একটু অন্যরকম ভালো। কোনো কথা কয় না। শেফালি জানে যারা কম কথা বলে তাদের ভেতরে গোলমাল থাকে। মনডা বালা হয় না ওদের। তবুও কয়ন যায় না – কার মনে কী।

 

এসব ভাবনা ভেবে শেফালি নিজেকে কুটুল ভাবে। তখন আর তাঁর ভাবতে ভালো লাগে না কিন্তু ভাবনাগুলো মাথা থেকে সরাতে পারে না।

 

দশ বছর আগে একদিন দুপুরে খালাম্মা ইন্তেকাল করেন। রাফির বয়স তখন খুব বেশি না। শেফালি কেমন জানি নীরব হয়ে যায় ঐ ঘটনায়। এ বাড়ির চার দেয়ালের এক দেয়াল যেন ভেঙে পড়ে গেছে এমনটা মনে হয়।

 

সব আছে কিন্তু যার জন্য এই সব শুধু সে নেই। শেফালি অনুতপ্ত বোধ করে। তার মনে হয়, খালাম্মার মরার কারণে তার হাত আছে। সে হিংসা করসে দেইখা খালাম্মা এত অল্প বয়সে আমগো ছাইড়া গেসেগা।

 

এই ভাবনার বীজ শেফালির মনে বড় গাছের মতো শাখাপ্রশাখা গজাতে থাকে। শেফালির আর ভালো লাগে না। নিজের লালসার কল্পনার দায়ে সে নিজেকে খুনি ভাবে। সুখ দেখে সে সুখী কেনো হলো না? কেনো সুখের মধ্যে সে কুভাবনার দৃষ্টি দিলো ?

 

এই ভাবনাগুলো শেফালিকে অন্যরকম চুপচাপ করে ফেলে। শুধু শেফালি না, এ বাড়ির হালচাল আজকাল অন্যরকম – কী রকম সেটা শেফালি বলতে পারে না। তবে জানে যেমনই হোক না কেন – আগের মতো সুখের না।

 

সুখ কি তবে, অ-সুখের জায়গা দখল করে ছিল ? 

 

এখন কি অসুখ, সুখের স্থানে স্থান করে নিয়েছে? সুখ কি অ-সুখের প্রতিচ্ছবি ?

 

 

অ্যাডভোকেট আমজাত চৌধুরীর জীবনটাই অন্যরকম। দৃষ্টান্ত তৈরি করার মতো যেমন ব্যক্তিত্ব তেমনই জন্মটাও হয়েছে বনেদি পরিবারে। শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবার বলতে যেটা বোঝায় তিনি সেটার প্রতিনিধিত্ব করেন।

 

সময় মতো দেশে পড়াশোনা শেষ করে বিলেতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে নাসিমার সাথে বিয়ে করে বেশ ভাল জীবন চলছিলো। উকিলির সাথে সাথে রাজনীতি আর সেই সূত্রধরে বেশ কিছু ব্যাবসা করে বেশ উন্নতি করেছেন। এইতো কদিন হোল নিজেদের নতুন বাড়িতে উঠেছেন। রাফি তখন নাসিমার গর্ভে। রাফির জন্ম যেন নতুন বাড়িতে হয় সেজন্য তড়িঘড়ি করে রাজমিস্ত্রিদের পেছনে একটু বেশি খরচ করছেন। কুদ্দুস মিয়াঁর দলটা ভালো। দলের মধ্যে অন্যতম আলতাফ মিস্ত্রি বেশ কাজের লোক। করিম মিয়াঁ উকিল বাবুর কানে এ কথা পৌঁছাতে ভোলেননি।

 

আমজাত জাত উকিল। করিমকে দিয়ে আলতাফ মিস্ত্রিকে নিজের কন্সট্রাকশন সাইটের কাজে লাগাবে এমন পরিকল্পনা করে রেখেছে। করিমকেও সেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাততলা বাড়ির কাজ শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যে। কুদ্দুস মিস্ত্রির বয়স হয়েছে। ওকে দিয়ে আর আগের মতো কাজ হয় না। আলতাফের মতো কর্মক্ষম লোক থাকলে কাজের গতি বাড়ে সেটা আমজাতের জানা আছে।

 

হিসেবের হিসেব মিলে। রাফির জন্ম হয়। ওরা নতুন বাড়িতে ওঠে। নাসিমার সাথে আমজাতের স্বপময় সুখের দিন কাটতে থাকে। যেন পৃথিবীটা তৈরি হয়েছে তাঁদের জন্য – বাইরে থেকে দেখে তাই মনে হবে।

 

দেশের বর্তমান সরকার দলীয় উকিলদের তালিকায় আমজাত আছেন। আগামীবার হয়তোবা এমপি পদের নমিনেশন পাবেন। আদালতপাড়ায় এমন কানাঘুষা চলছে এসব খবর করিম থেকে সময়মতো আমজাত জেনে নিয়ে নিজেকে গোছাতে থাকে।

 

সময়ের পালাক্রমে অ্যাডভোকেট আমজাত থেকে এমপি আমজাত অ্যাডভোকেট হয়। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। অনেক কিছুই সে না চাইতে পেয়েছে সেটা সে অস্বীকার করে না কখনো।

 

তবুও সংসার জীবনে যে সে সময় কম দিচ্ছে সেটা বুঝতে পারে না। নাসিমা এমন মেয়ে যে সবটা সামলে রাখে - কোনো কিছুর কখনো কমতি হয় না। আমজাত কখনো বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে সেরকম খবরই পায় না। সে মেতে থাকে তাঁর কর্মময় জীবন সংগ্রামের কর্মকাণ্ডে। এটা তাঁর জন্য খেলা মাত্র। আমজাত এই খেলায় ভালো প্লেয়ার। সে রীতিমতো নেশার মতো রাজনীতি করছে বা রাজনীতির নেশা তাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিচ্ছে। সেটা আমজাত ধরতে পারছে না।

 

তাঁর স্বপ্ন আগামী টার্মে দল ক্ষমতায় আসলে – মন্ত্রিত্ব নিশ্চিত। সেই স্বপ্ন ঘোর কাটে হঠাৎ একদিন দুপুরে ...

 

নাসিমার অনুপস্থিতি আমজাতকে সংসার করতে শেখায়। যে সংসার ধর্ম তাঁর আরো ১৫ বছর আগে, অর্থাৎ বিয়ের পর থেকে করার কথা – এরপর আমজাত নিজের জীবন কল্পনায় ভেবে দেখে। সব কিছু এত গতিময়তার সাথে কখন কেটে গেলো আর সে তার কিছুই তো উপভোগ করলো না। শুধু ভোগ করবে বলে সবটার আয়োজনের প্রয়োজন মেটাচ্ছিল তবে ?

 

নাসিমা আছে, এই ভরসা তাকে জীবনের এই প্রান্ত যে এমন - সেটা বুঝতে দেয় নি। এই এমনটা, নাসিমা থাকলে যে আরো সুন্দর হতে পারতো সেটার আক্ষেপ আমজাত উপেক্ষা করতে পারে না। নাসিমার না থাকাটার কারণ - কেননা, কিন্তু, আমিতো, তার অর্থ, যদি, আল্লাহ ...

 

তুখোড় অ্যাডভোকেট আমজাত জীবনে প্রথমবারের মতো ভাবতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় ভাবনাতে। প্রশ্নগুলোর উত্তর কে দেবে তাকে ?

 

সরকার বদলায়। নতুন দল ক্ষমতায় আসে। আমজাতদের শীর্ষ নেতাদের পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমজাত আইনের লোক বলে নতুন প্রশাসন খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। তবুও, একটু সুযোগ পাইলেই আমজাতকেও ধরবে এরকম খবর শহরের চায়ের দোকানের গল্প। চা দোকানদার করিম মিয়াঁকে টিটকারি দিয়ে জানতে চায়, ‘কি করিম মিয়াঁ, তুমার স্যাররে ভিতরে নিবো কবে?’ করিম উত্তর দেয় না। মনে মনে ইচ্ছা করে গরম চা শালার মুখের মধ্যে ডাইলা দেই!

 

আমজাত উকিল। রাজনীতি থেকে সরে আসেন। ঠিক সরে আসেন সেটা না। তাঁর অনুপস্থিতি, অমনোযোগ কিংবা অনিচ্ছা তাকে ওসব থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। স্ত্রী মৃত্যুর শোক বিষয়টা অন্যরাও স্বাভাবিক ভাবেই দেখে সহমর্মিতা জানায়।

 

কেউ কেউ তাও বলে ফেলেন, ‘আমজাত ভাইয়ের মতো মানুষ এমন বদলায় যাবেন সেটা ভাবা কঠিন বা আমরা আমজাত ভাইয়ের মতো অ্যাকটিভ সদস্য আবার কবে পাবো কে জানে ইত্যাদি ইত্যাদি’। করিম এসব কথা শুনে কিন্তু স্যারকে সে কী করে, কোন বাক্য শব্দে বলবে সেসব ভাবতে থাকে। কিন্তু তথ্যগুলোর বলার অপেক্ষা বাড়তে থাকে।

 

আমজাত সাহেব উপেক্ষা করতে শিখেছেন। সময় লেগেছে তবে শিখেছেন। অপেক্ষায় সময়ের অপচয় – সময় অপচয় না করে যুক্তি কাজে লাগিয়ে যেকোনো কিছু উপেক্ষা করাটাই যে জীবন – সেটা ধরতে কিঞ্চিৎ সময় লাগলে তিনি পেরেছেন। তবে তাঁর জীবন যাপনের ধারা বদলেছে। তিনি আজকাল কোর্টে প্রায়ই এমন সব মক্কেলের মামলা নেন যাদের মামলা কেউ নেয় না কিংবা যাদের মামলা চালানোর টাকা নাই। তিনি তাঁদের মামলা নিজে কাজ করেন।

 

এই কাজ করাতে আমজাত উকিলের নতুন টাইটেল হয়েছে – ‘মাগনা উকিল’। আদালতপাড়ার সিনিয়র আইনজীবীরা নতুনদের বলেন, ‘ তোমরা আমজাত স্যারকে দেখো! - দেখে কিছু শেখার চেষ্টা করো’।

 

এসব কথা আমজাতের কানে আসে। করিমই বলে – শুধু এটুকু বোঝে না – স্যার এই কাজটা কেনো করেন। মাঝে মাঝে ভেবে প্রশ্ন করবে – কিন্তু সে সাহস হয় না আর শেষ পর্যন্ত।

 

আমজাত সাহেব নিজে জানেন না তিনি কেন এই কাজ করেন। তিনি শুধু জানেন তাকে ব্যস্ত থাকতে হবে। এটা তাঁর সংসারধর্ম থেকে দূরে থাকার একটা ছুতো মাত্র।

 

তিনি কখনো নাসিমাকে ভালোবেসেছেন কিনা সেটা নিয়ে তাঁর সন্দেহ হয়। বড় ছেলে সাফির বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু রাফির কি হবে এসব চিন্তা থেকে দূরে থাকতে তিনি কাজে মগ্ন থাকেন। ব্যাস্ততায় টুকে রাখেন অস্থির করে রাখা ভাবনার বীজগুলো। তিনি কাজ করেন। কর্মের মাঝে তিনি স্বস্তি পান। তাঁর জন্য কাজটাই সুখে। 

 

তিনি কি জানেন – কর্ম নয়, কর্মফল আসল সুখের প্রতিচ্ছবি ...

 

 

সুখের স্বরলিপি এখানেই শেষ হয় না – রাফি, নীলা, শম্পা, টুম্পাসহ বাকি সব ক'টা চরিত্রই আসলে স্বরলিপির নতুন লেখা অক্ষর। ওদের দিয়ে গঠিত হবে শব্দ। তাঁর থেকে বাক্য – সে বাক্যে যে ব্যক্ত হবে অন্য অনেক সুখময় মুহূর্তের সুখের কিংবা অ-সুখের অবিচ্ছেদ্য লিপিমালার গল্প। চলতে থাকা সময়ে সুখ খুঁজে নিতে পারা কিংবা না পারার গল্পটাই তাঁদের গল্পের সুখের নতুন স্বরলিপি রচিত হবে।

 

সুখ – কেবল আমাদের ভাবনায়, অসুখ থাকে পরিপূর্ণভাবে না ভাবতে পারাতে।