Posts

নন ফিকশন

বিশ্ব চিঠি দিবস

September 2, 2024

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

Original Author ‌ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

87
View

চিঠির প্রকৃত উপযোগিতা আমার মতো মিলেনিয়াল কতটুকু বুঝে উঠতে পেরেছে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আপনি যা অনুভব করতে পারবেন না তা লিখবেন কিভাবে? 

মিলেনিয়াল বলতে ৮০ থেকে ৯০ এর দশকে বেড়ে ওঠাদের কথা বলছি। আমার মনে হয় আরো আগের প্রজন্মের মানুষজন চিঠি সংক্রান্ত আবেগ-অনুভূতি নিয়ে আমাদের চেয়ে অনেক ভালো বলতে পারবেন। তবে চিঠি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা আছে। বলছি। 

১) এক বন্ধুর চিঠি আসতো আমার ঠিকানায়। তাঁর ভালোবাসার মানুষের। তখনো গার্লফ্রেন্ড শব্দের ব্যবহার শুরু করতে পারি নি। নৈতিকভাবে বড় ভালো মানুষ ছিলাম। বন্ধুর চিঠি বন্ধুকেই দিয়ে দিতাম কখনো না পড়েই। এখন ঐ দুজন স্বামী-স্ত্রী। 

২) আমাদের বয়স যখন অনেক অল্প, সেই সময় পাড়ার বড়ভাই-আপুদের জিমেইল, ওয়াটস‌অ্যাপ আমরাই ছিলাম। আমি নিশ্চিত আমার জেনারেশনের অনেকেই এ মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন। ঘুষ হিসেবে চকলেট-টাকাপয়সা মিলতো। তখন প্রেমের ঢাকঢাক-গুড়গুড় পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিলো। বেশ রিস্কি ছিলো তাদের মিডিয়া হ‌ওয়াটা। এরকম কাজকর্মে অনেকের মতো আমি নিজে মিডিয়ার কাজ করেছি। 

৩) রিনি নামের এক মেয়ে আমার পত্রমিতালি বন্ধু ছিলো। না। হৃদয়ঘটিত কোন বিষয় ছিলো না। আমাদের মধ্যে কয়েকবার ব‌ইয়ের আদান-প্রদান ঘটেছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ ক্ষেত্রে জিমেইলের কাজ করতেন একজন কমন প্রাইভেট শিক্ষক। রিনি একবার আমার টিএন্ডটি নাম্বারে কল‌ও করেছিলো। কখনো দেখা হয় নি। আমি নিশ্চিত এখন রিনির কোন মেয়ে থাকলে তাঁর বয়স‌ই সেই রিনির সমান হবে। 

৪) উড়ো চিঠি ব্যাপারটা তখন কমন ছিলো। নাম অজ্ঞাত রেখে কাউকে কিছু বলতে, বিয়ের ভাঙানি দিতে অথবা হুমকি দিতে এ ধরণের চিঠি ব্যবহৃত হতো। আমি নিজে এরকম চিঠি দেখেছি। উড়ো চিঠি ছিলো মানুষজনের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলের ফিজিক্যাল ফর্ম। এখন ইন্টারনেটে নাম-পরিচয় অজ্ঞাত রেখে হাস-আপ টাইপ অনেক অ্যাপে ম্যাসেজ দেয়া হয়। 

৫) আমি নিজে ব‌ই আদান-প্রদান সংক্রান্ত কিছু চিঠি লিখেছি। শর্ট ফর্মে। অল্পকিছু রোমান্টিক চিঠি নাকি ভালোই লিখেছিলাম। সেসব নিয়ে আরেকদিন বলবো। অথবা হয়তো কখনো বলবো না। কলেজ জীবনে আমার খাতার উপর খুব সংক্ষেপে একজন একটি বার্তা পাঠিয়েছিলো। কোন কিছু এক‌ইসাথে বেদনাদায়ক এবং হাস্যকর হ‌ওয়ার ভালোই উদাহরণ ছিলো সেটি। 

ই-মেইল, ওয়াটস‌অ্যাপ, টেলিগ্রাম‌, মেসেঞ্জার‌ই বর্তমান সময়ের চিঠির সাম‌হোয়াট স্বরূপ। তবে হাতে লিখা চিঠির মাঝে তো অন্য একটা ব্যাপার ছিলো। বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকের হাতে এসব চিঠি দিলে হ্যান্ডরাইটিং অ্যানালাইসিস করে অনেক ভিতরের না বলা কথা কিংবা চিঠি লিখার সময় পত্রলেখকের মানসিক অবস্থার সারকথা জানা হয়ে যেতে পারে। 

আজ বিশ্ব চিঠি দিবসে অনেকেই হয়তো নস্টালজিক হয়ে যেতে পারেন। কেউ কেউ দেখছি তাদের ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে চিঠির অপেক্ষায় আছেন। এ অপেক্ষার বোধটা মনে হয় সেই কাগজের চিঠিতে আরো তীব্র ছিলো। সেসময় এতো অপশন তো ছিলো না। 

আমি আমার জিমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে চিঠি খুঁজতে যাবো না। নাম-পরিচয় অজ্ঞাত রেখে হাশ-আপে যে যোগাযোগ তা আমাকে আকর্ষণ করে না। কারণ ঐ ম্যাসেজদাতা মনে যা আসে তা হয়তো লিখেন কিন্তু প্রকৃত পরিচয় এবং ম্যাসেজে তাঁর স্কিন না থাকায় এ ধরণের লুকোচুরি করা পিপলদের অনস্তিত্ত্ব‌ই মনে হয় আমার। অনেকটা ফেসবুকের ফেইক আইডিগুলোর মতোই। বন্ধুত্ব স্পষ্ট হ‌ওয়া দরকার। ঠিক তেমনি প্রায় যেকোন ইন্ট্যারেকশনের সময় আইডেন্টিটিও।

Comments

    Please login to post comment. Login