পোস্টস

গল্প

ভোকাট্টা তোমার ভালোবাসা

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সিয়াম আল জাকি


 

ভোকাট্টা তোমার ভালোবাসা 


 

সিয়াম আল জাকি 



 

এক.

সামনে সংবিধান খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। ধরবো তারপর পড়বো এমন অবস্থায় ঝুলে আছে সব। 


 

বাংলাদেশের নামে মামলাঃ ১৪৬। " বাংলাদেশ " — এই নামে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাইতে পারিবে।

টেবিলে বসে শুধু নাড়াচাড়া করি এসব। কয়েকদিন পরে টার্ম ফাইনাল। কিছু ধরা হয়নি। শীট মুখস্থ করা ছাড়া উপায় নাই আর। ভাবছিলাম এবার একটা থিসিস লিখে ফেলবো। থিসিসের বিষয় হবে বাংলাদেশের আইন ঔপনিবেশিক শাসনের কলকব্জা। মিরাজ ভাই বললেন ওকে আছে রে নিলয় বাট শুনতে একাডেমিক লাগেনা। বললাম না লাগুক। 

এখন ভাবছি রাষ্ট্র আর মিরাজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কিনা । দুইজনকেই আর ভালো লাগছে না। আচ্ছা রাষ্ট্রকে কি ' জন' হিসেবে বিচার করা যায়?  

না বোধহয়। তবে বললাম কেন?

উত্তর নাই, কারণ সবাই বলে সেজন্য!! 


 

না মামলা দায়ের করার কোন ইচ্ছা নাই। মামলা হামলা  সব বড়লোকি ব্যপার। অনেক কিছু বলার ইচ্ছা আছে। শব্দ সংকটে তাই আছে  তীব্র যন্ত্রণা, তবুও  কেউ কেউ খুনি হিসেবে মেনে নিলো!

সিনথিয়ার সাথে অনেকদিন পরে দেখা হলো আজ বারকোডে । ওকে সুন্দর লাগছিলো। কালো শাড়িতে লাস্ট এরকম কাউকে সুন্দর লাগছিলো বলে মনে পড়ে না। আইলাইনারের রেখা ধরে নিজের চোখ পিটপিট করা স্বভাবে সে নিজেরে বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতি প্রমাণ করতে চায়। পারে না যদিও। হাতের ব্রেসলেট ড্রেসের সাথে তারে কিছুটা থাগ ভাইব দেয় শুধু।  চেহারায় তেমন মেকাপ নাই। দিনে হালকা যেরকম করে সেরকম করে আসছে। বেস হালকা রাখছে দাগ গুলোও হাইড করে দিছে। হেভি মেকাপে অবশ্য ওরে জঘন্য লাগে! 

বললাম, তোমারে সুন্দর লাগতেছে। কালো শাড়িটা কইথেকে নিলা। 

বললো আফমি থেকে

আরে বাহ সেই দাম তো তাইলে! 

হ্যাঁ, তবে গিফট পাইছি। । 

চমকাইছিলাম কিছুটা, কে দিলো?

কাজিন আমার।

তবুও নিশ্চিত হওয়া গেল না। বললাম তোমরা চিটাইংগারা তো   কাজিনদেরও বিয়ে করো শুনছি। এরকম কোনো চক্কর চালাইতেছো নাতো। 

সিনথিয়া বিরক্তি নিয়ে তাকাইলো। 

হাত দুইটা জড়ো করে সামনে রাখলো। আমি বুঝতে পারতেছি এবার এক কঠিন ঝাড়ির সামনে আমি। কটকট শব্দ করবে ওর উত্তেজিত গলা। চশমা পড়ে নিবে আগে। ঐটা পড়লে একটা মাস্টারনি ভাইব আসে ওর। একবার বলছিলো। 


 

সে বইলা উঠলো, তোমারে এখন বিরক্ত লাগে। একটা মানুষ এতো ইতর কেমনে হয়। কীসব বইলা যাচ্ছ। স্টিক খাইয়া আসছো নাকি মিরাজ এর সাথে। সে তো পলিটিক্যাল বন্ধু তোমার। তার লগেই উঠাবসা। 

আমি বিরক্ত হলাম। কইলাম হ ওরেই লাগাই আসছি। তোমার থেকে ওরে লাগানো বেটার না? 


 

বাহ ভালো তো এমনেই সব করো তোমার। হলে লীডার হইতে হবে না তোমার লাগানোর প্র্যাকটিস করো এরকম। 


 

মেজাজ খারাপ হইতাছিলো, কেন যে এই মাইয়ার সাথে আইসা আজকের দিনটার মাটি করলাম। শালি এমুন ক্যান। সাড়ে পাঁচটার ট্রেইনে আইসাও এতো দেমাগ। 

বিরক্তি চাপা দিয়ে কইলাম আচ্ছা বাদ দাও এখন এইসব কথা। ভাবতেছি পেনিনসুলা পাশে চলো এক রাউন্ড মাইরা আসি। 

সিনথিয়ার ভ্রু আবার কুঁচকানো দেখতাছি। বড় ঝাড়ি লোডিং। 


 

নাহ ঐখানে কী দরকার পারলে এখনই করি আমরা!!  তোমার কোন চারুকলার বান্ধবি তো ইনটিমেট ছবি আঁকতে নাকি ওস্তাদ তারে আইনা এখন তার সামনে করো। কী করা যায় প্রথমে লিপস তারপর ডাইরেক্ট বুক এইডাই তো মুরোদ তোমার। 

পারো শুধু নিজের অর্গাজম অবধি। এরপর তো সব দেখো অন্ধকার। নেতায় থাকে তোমার, হা হা হা। 

তুমি তোমার ভাইরেই লাগাও ঐটাই জোস হবে কিন্তু। 


 

ধুর ঝাড়ি মারি, কিছুই হয় না। শুধু আঙুল থেকে চামচ পড়ে যায়। 


 

বিহেইভ ইউর স্যালফ ইডিয়ট। 


 

আমি চুপ আবার। 


 

বেশীক্ষণ থাকলাম না চলে এলাম। এর সাথে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। শুধুমাত্র বিছানার জন্য পারফেক্ট ও। সামনাসামনি ভালগার তবে বেডে গেলে একদম মোমের মতো গলে যায় সে। তবে তার সেক্স থেকে স্নেহতে আগ্রহ বেশী মনে হয়। কেমন যেন একটু আদর চায় বেশি। 

ঘাড়ে কিস তারপর আস্তে আস্তে লিপ কিস কানের পাশ দিয়ে ফু দেওয়া তারপর ন্যাভেলে হাল্কা করে কিস এরকম করেই তার পছন্দ মনে হয়। 

আমার এসব ভালো লাগে না। আমার ওয়াইল্ড টাইপ পছন্দ। হিংস্রতা থাকলে বেশী ইনজয় করি। 

এসব সুইটগিরি হয় না আমারে দিয়ে। 


 

ধুর বাল, এমনেই আসছি এর থেকে রিমির সাথে সময় কাটালে ভালো লাগতো। ও সেই। যখন তখন ধরা যায়। বিয়ে করছে তবুও যখন তখন বাসায় চলে যাওয়া যায়। প্যরা নাই তেমন  আমার মতো ওয়াইল্ড টাইপ। পজিশন এক্সপার্ট ও সে। কেন যে সিনথিয়ার সাথে দেখা করলাম আজাইররা৷ 

তবে রিমির হাসবেন্ড কুল। ফ্রেন্ড হিসেবে ট্রিট করে আমারে। 

কী একটা অবস্থা অথচ তার ওয়াইফ এর লগেই চক্কর চালাই আমি। যদিও তারও মনে হয় এফেয়ার টাইপ কিছু আছে। 

রিমিও কইলো একবার, আরে মন খারাপ এর কী আছে তোমার সাথে আমার আছে তার সাথেও আছে এমন। 

তবুও আমার দ্বারা ফ্রি হওয়া যায় না। 

কেমন ক্রিমিনাল ফিল দেয়। এমনে হইবো না। রিমি এতো ওয়াইল্ড যে আমারেই ক্যানসেল মাইরা দিতে পারে৷ 

আচ্ছা দিলে কী করবো আমি? 

উত্তর নাই। 

সিনথিয়া হলে বলতো,  কী আর করবা যে পারভার্ট তুমি আরেকজনের সাথে শুয়ে পড়াটা তোমার কাছে আর্ট। 


 

আচ্ছা রীমি আর সিনথিয়ার সাথে একসাথে কিছু করলে  কেমন হয়? 

মনে হচ্ছে খুব ইন্টারেস্ট পাবো না। 

সিনথিয়া গরম রীমি ঠান্ডা, দুইজন অতিষ্ঠ হয়ে আমার মাথায় মারবে ডান্ডা!  

ইশশ এসব কী বলি আমি। জঘন্য ইতর প্রাণী হয়ে যাইতাছি দিনকে দিন। 



 

দুই.

নিলয় এর সাথে আজকে দেখা হওয়াটা ঠিক হয় নাই। 

ও একটা কাঠবলদ টাইপ মানুষ। 

এতো সহজে সেজে আসলাম বলদটা পাত্তাই দেয় নাই। 

শুধু কেমন কেমন করে তাকাইছিলো। আর কীসব আবোল তাবোল বলে বেড়ায়। 

সব দোষ ঐ শালা মিরাজ এর। 

বলদ নিলয় জানেও না যে সে একটা বাছুর মিরাজ এর সামনে। মিরাজ তারে গিইলা খাইতে পারবে। 

আসিফ শুধু পারে জানো সিনথিয়া, মিরাজ এমন করছে তেমন করছে ও একটা পুরাই থাগ প্যাকেজ এসব বলতে৷

গাধাটা জানেও না মিরাজ তার গার্ল ফ্রেন্ড এর পেছনে ঘুরঘুর করতেছে। 

আমার অবশ্য মজা লাগে। আবার বিরক্তও লাগে। 

ক্যাম্পাসের দুই তিনটা না ঘুরলে নিজেকে মেয়ে মেয়ে লাগে না।

তবে সবসময় ভালো লাগে না । 

যেমন গত শুক্রবার।

মিরাজ বলতেছিলো। 

তোমারে একটা কথা বলি? 

আমি এমনেই বললাম, বলেন। 

কিছুক্ষণ পরে জবাব এলো ,

দাড়ানো জাহাজ ঠান্ডা সাগরে বেশীক্ষণ থাকলে হাসফাস করে যাওয়ার জন্য। 

আমি একদম চুপ মেড়ে যায়। আসিফ গাধাটা আমাদের পার্সোনাল সেক্স লাইফ নিয়ে যে বাইরে কথা বলে এটা জানতে পাইরা কী যে মাথা ধরে গেছিলো। 

এই ছাগলের দন্ড অলওয়েজ গরম থাকে। আর আমার ন্যাচার যেহেতু ঠান্ডা সেজন্য সে আমার নাম দিছে ঠান্ডা সাগর। 

আমার প্রথমে কিউট লাগছিলো। 

মিরাজ থেকে শুনার পরে লাগতেছে ঘৃণা। বারবার ঐ জিনিস মাথায় ঘুরতেছে। 

আমি কিছু না বলে ব্লক মেরে দি মিরাজরে। আবার দুইদিন পরে আনব্লক করি। 

মিরাজ আবার রিকুয়েষ্ট পাঠায়। একসেপ্ট এর পরে সরি টরি বলে।

তারসাথে এতোবড় ম্যাসেজ দেয়। 

ওখানে ছিলো একটা কথা। দেখো আমার সেলফ রেসপেক্ট আছে অনেক। তবুও বন্ধুর বৌ দেখে ওহ না সরি গার্লফ্রেন্ড দেখে বলতেছি  আবার রিকুয়েষ্টও পাঠাইছি। আশা করি তুমি সস্তা মনে করবা না আমারে। 

মনে মনে কইলাম, বাহ!  

এই বেটার সেলফ রেসপেক্ট মনে হয় তার ডিক থেকেও বড়!  

যদিও এসব ব্যটারে ভরসা করি না আমি। কখন যে ঐসবেরও ছবি পাঠায় দিবে তার কোনো ঠিক নাই। 


 

মাঝে মধ্যে ভাবি এই মিরাজের সাথে নিলয়ের এতো খাতির এর ব্যপারটা ভালো না একদমই। মিরাজ শালা ড্রপ আউট। কার সাথে কী করে যেন ধরা খাইছে বহুত আগে। তারপর ডিপার্ট্মেন্টের এক ম্যাডামের কোন এক আত্মীয় এর মেয়েরে নাকি হ্যারাসও করছে। শুধুমাত্র বেঁচে গেছে পলিটিক্যাল পাওয়ার এর কারণে। 

মিরাজ এর ইমেজ নিয়ে ভাবি মাঝে মধ্যে। এতো চকচকে ভালো ইমেজ সে কেমনে পাইলো!

পরে বুঝতে পারছি এক সংগঠন সে চালায় " আলো" নামে। গরীব ছেলেপেলে ও তার সাথে দূর্যোগে বিপদে পড়া মানুষজনের সে সাহায্য করে। 

তার ফ্যামিলি পলিটিক্যাল হওয়ায় সরকারি লোকদের ফান্ড আর সহযোগিতা দুইটাই সে পায় ভালো। তো এসব করে ভালো কাজ করার ইমেজ নিয়ে ঘুরে। এই ইমেজ তার পর্দা। 

যতো আকাম- কুকাম করে সে এই পর্দার আড়ালে, লুকাই থাকে। 

তার নামে কোনো অভিযোগ আসলেও তা কেউ বিশ্বাস করে না।

 পরিস্থিতি এমনে যে সে যদি নিজের ঐটার ছবি পাঠায়ও কাউকে হ্যরাস করতে চায়, লোকে বলবে নিশ্চয়ই যাকে পাঠানো হয়ছে সে হ্যাপি না ম্যারেজ বা প্রেম জীবনে তাই তাকে সাহায্য করার জন্য মিরাজ এটা করছে! 


 

নিলয়ের প্ল্যানও মনে হয় তেমন কিছু করার। কারণ সে অনেকদিন ধরেই বলতেছে কিছু টাকা দাও একটা সংগঠন এর মতো কিছু করবো তারপর ঐটা দিয়ে কেমনে ফায়দা নি তুমি শুধু দেখবা। 

আমি রাজি হই না। কারণ জানি মিরাজ তারে এসব আইডিয়া দেয়। 

আমার বুঝে আসে না নিলয়ের মতো কেউ কীভাবে এমন হয়ে গেলো!  প্রথম প্রথম কতো আদর্শ টাইপ কথা বলতো। 

বলতো যে, এদের মতো সুবিধাবাদী কুকুরদের সাথে কোনোদিন যাবো না। 

পরে দেখি কোনো এক ফেসবুক পোস্ট এর কারণে সে একটা  ধরা খায় মিরাজ এর বিপরীতে দলের কাছে, পরে তাদের থেকে বাঁচতে   মিরাজ এর গ্রুপ থেকে সে সুবিধা নেয়। 

এরপর এই সুবিধা নেওয়ার পরে সে একদম তার মিরাজ ভাইয়ের ক্লোজ পার্সন। 

একদিন যদিও সে বলতেছিলো যে মিরাজ ভাইদের থেকে সুবিধা নেওয়া ঠিক হয় নাই। 

এরথেকে ভালো মাইর খাইতাম তবুও এই গহ্বরে তলায়  যাইতাম না। 

আমার আফসোস লাগে শুধু এখন ওর জন্য। 

তার সাথে নিজের জন্যও! সব আশা এমনে এমনেই হারায় যাচ্ছে জীবন থেকে! 



 

তিন.


 

আমার বাসা থেকে সমুদ্র কাছেই। টুকটাক দেখাও যায় তার জলরাশি। পা ভিজিয়ে দেওয়া তরুণী ও তার দিকে মুগ্ধ হয়ে আসা অনেক চোখের একটা কল্পনা একে যায় মনে। 

ভাবতে থাকি সেই সময় পেরিয়ে এসেছি সেই কবে!  তখন সবকিছু ভালো লাগতো ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের ট্যুর প্ল্যান বলতে এই বীচের সমুদ্রই ছিলো একমাত্র ভরসা। 

এখন সব ফিকে লাগে। ভার্সিটির বন্ধু, ক্লাস, ট্যুর সবকিছু জাস্ট বোঝার মতো লাগে। সবার সাথে শুধু এখন আমার টুকটাক কথাবার্তার সম্পর্ক। 

সেই ফার্স্ট ইয়ারের বীচ ট্যুরের বন্ধুদের থেকেও আজ বহু দুরে বসবাস আমার। 

ক্লাসে একহাত দুরত্বে বসেও মনে হয় মাঝে আছে এভারেস্ট সমান উচু এক দেয়াল আর  মান - অভিমান- ভুলবোঝাবুঝির পরিমাণ   মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর থেকেও গভীর। 

দীর্ঘশ্বাস করি শুধু এখন। আবার করিও না জীবন যেখানে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে এসব হতাশার মানে নাই কোনো। সকল অভিযোগ এসবের কাছে ফেলনা কাগজ এর মতো। 


 

সন্ধার পরে মেসেজ দেয় নীলয়। 

" রীমি আজ খুব রাগ লাগতাছে, সিনথিয়ার সঙ্গে দেখা হইছিলো। সে একটা পিউর এলোন ফালতু। 

আই নিড ইউ নাও। প্লিজ টেল মি হোয়ার আর ইউ "। 


 

আজকাল নিলয়রেও ভালো লাগে না। শালা একটা ভোতা মাল। বারবার বলি ঐ মেয়েরে ফেইলা চইলা আয় আমার কাছে। তোরে সেই মতো সব দিবো। 

কিন্তু না। এ আসবে না। বলে আমি দুইটা একসাথে চালাইতে পারবো। 

আরেহ বলদ তোর তো একটাও ঠিকঠাক চালানোর ক্ষমতা নাই দুইটা কইথেকে চালাবি আর?

তুই আসোস তো আমার দয়ায় এখনো। নইলে তোর ঐ মিরাজ তোরে কখনই সাফ করে দিতো। 

বলদটা জানেও না যে মিরাজ হইলো গিয়ে আমার দেবর। 

আসিফ এর কাজিন সে। তার উপর মিরাজ এর চোখ তার সিনথিয়ার দিকে। 

মিরাজ তো আমারে বলেই সিনথিয়ার সাথে টুকটাক তার কথাবার্তা হয়। একবার যদিও ব্লক করে দিছিলো বাট পরে আবার আনব্লক করছে। 

এখন সিনথিয়া একটু মিরাজ এর উপর ফল করলেই মিরাজ সরায় দিবে ওকে। 

যদিও আমার কারণে পারবে না। 

কিন্তু আমার সাথে যদি না থাকে নিলয় তখন কিন্তু আবার আমি তারে সেইফ করবো না। 

আহা, বেচারা গাধা জানেও না যে সে একটা রীতিমতো পুলসিরাত পার হতে যাচ্ছে নিজের অজান্তে। 

বলদটা ভাবে সেই সবাইরে চালাচ্ছে!!  

হা হা হা সবাই যে তারে চালাইতেছে এটা সে বুঝতেছে না। 


 

তবে ওরে আমার ভালো লাগে। আসিফের ক্রিজে ও ভালোই খেলে তো তাই আরকি! 

একটা বোকাসোকা ডিপ্রেসড মানুষ হিসেবে সে দারণ। যতোক্ষণ বেডে থাকে মনে হয় জীবনের সব ডিপ্রেশন সে কাটায় উঠতে চাচ্ছে আর আমি তার সেই কাটায়ে উঠতে চাওয়ার একমাত্র সিড়ি। আমার মনে হয় সে মনে করে যে আমারে প্লেজার দিলেই একমাত্র সে পৌঁছে যাইতে পারে ডিপ্রেশন আর চুড়ান্ত হতাশার ঐ পারে যেখানে এসব কিছু নাই। তার চুড়ান্ত পরিশ্রম আমারে এটা মনে করাইতে বাধ্য করে তারে নিয়ে। অদ্ভুত উদ্যমে সে সব কাজ করে। তখন আমি তারে মাঝে মধ্যে বলি

" ইউ আর ব্রুটুয়ালি বিউটিফুল ডাম্ব " 

সে তখনও শুধু মন খারাপ করা হাসি দেয়। 


 

ঠিক এই কারণেই ওরে আমার ভালো লাগে। তাই ওর কিছু হইতে দিবো না। 

মাঝে মাঝে এখন আসিফের কথা ভেবে মন খারাপ লাগে। ও একদমই এরকম না। 

আসিফ ইজ এ রাফ এন্ড টাফ পার্সন। বাট নট ইন বেড। 

আমি জানি ওর এফেয়ার আছে। আমার মনে হয় সেও জানে আমার কথা। তবুও দুইজন দুইজনকে এমনভাবে সামলাতে থাকি যে মনে হয় কিছু হয় নাই। সব আমাদের স্বাভাবিক। 

আসলে আমাদের ম্যরেজ একটা বিজনেস ডিল এর মতো হইছিলো। বাংলা সিনেমার দুই বিজনেস ম্যান বন্ধুর বিজনেস ডিল হিসেবে তাদের দুই সন্তানের বিয়ে করায় দেওয়ার মতো। 

তবুও একটা ভালো ব্যপার হলো যে আমাদের বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই আমরা বুঝতে পারি যে আমরা একজন আরেকজনের জন্য একেবারেই না।

তাই নীরবে মনে মনে কোনোপ্রকার কথাবার্তা ছাড়াই আমরা ডিলে চলে আসি। 

দুইজনের মিলিত স্বরে আমরা এফেয়ার  টু ফেয়ার রিলেশনে থাকি। 

নিলয় মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে। 

" এই আসিফ ভাই আমারে নিয়ে কিছু কয় না ক্যান? দিস ইজ উইয়ার্ড। ওনার তো সন্দেহ হওয়ার কথা। 

আই গেস উনি তোমারে কিছু বলে না কারণ সরি ফর সেয়িং দিস, ওনারও মনে হয় আমাদের মতো কিছু আছে " 

আমি একটু বিরক্ত স্বরে বলি, আমাদের মতো মানে কী?  

সে কাচুমাচু হয়ে থাকে। বলে, এফেয়ার অর লাভ টাইপ আরকি। 

আমি হাসতে থাকি আর সে অবাক কাচুমাচু আর ভয় নিয়ে শুধু তাকায় থাকে। 

আর আমি হাসতে হাসতে তারে বেশ কয়েকবার হাগ আর কিস দি। 

বলতে থাকি বেচারা ইউ নো নাথিং দ্যটস হোয়াই আই লাভ ইউ। 


 

চার.


 

টপোলজির খেলায় একজন এর কথা আরেকজনকে স্পেন এর থেকেও নিখুঁত পাসিং লেন ফলো করে ছড়ানো কাজকারবার মানুষ এর অন্যতম প্রধান কাজ। 

জেন জি এই কাজটাই ভিন্ন রকমের পারদর্শী। 


 

শিক্ষা ব্যবস্থার কোচিং সার্কিট প্লাস ফেসবুকের স্টকিং তার অন্যতম হাতিয়ার। 

একটা কথা হরহামেশাই শুনা যায় যে মফস্বলে কোনো কথা চাপা থাকে না। কারণ এখানে সবাই সবাইকে চেনে। 

তবে বড় শহরের জেন জি গ্রুপ এর মূল মিলনস্থল কোচিং সার্কিট কিন্তু এক একটা মফস্বল এর উদাহরণ।। 

কোচিং এর পরিবেশ তাদের সেই আবহ দেয় যেখানে একজনকে নিয়ে গুজব বা অর্ধ সত্যের লীলাখেলা বিচরণ করে। 

একজন আরেকজনের কথা চালাচালি আড্ডার মূল বিষয় হয়। 

তারপর একটা সময় সেই মানুষ গুলো ছড়িয়ে যায়। তবে সঙ্গে নিয়ে যায় একজন আরেকজনের অর্ধসত্য বা বিকৃত  সত্যকে। 

রিউমারস ছড়ায় তারপর। টপোলজির কানেকশনে অবিশ্বাস খোটা আর ফিসফিসানিতে জীবন হয়ে যায় অতিষ্ঠ। 

এ এমন এক লুপ যেখান থেকে বেরোনো যায় না। 

এজন্য সচেতন জেন জি পরিচিত গন্ডি ছাড়তে চায়। 

টপোলজির কানেকশন থেকে তবুও সে মুক্তি পায় না। কারণ কথা ফিসফাস হয়ে তার আশেপাশে ঠিকই ঘুরতে  থাকে। 


 

আর ভালো লাগে না!  হলের এক বড়ভাই বললো 

" দেখ মিরাজ, তোর দেখি কলেজ জীবনের কথাও ভার্সিটিতে ভাইরাল!  এমনে চললে তো পদ পাবি না কোনো। খড়কুটো হয়ে থাকতে হবে। 

তাও যেনতেন কিছু ভাইরাল হয় নাই। হইছে একেবারে রেপ থ্রেট যে দিসোছ সেটা। " 


 

মেজাজ বিগড়ে যায় আমার। পড়তাছি শালা থার্ড ইয়ারে এক কোচিং এর মাইয়ারে কলেজ লাইফে কী না কী থ্রেট দিছি রাগের মাথায় তা নিয়ে কথা হয় এখন। এজন্য বাল একই শহরে সবকিছু থাকা উচিত না। 

আর কোচিং ব্যপারটাও বন্ধ করা দরকার। পড়ানোর কিছু হয় না হয় শুধু এসব আকাম। 

মেজাজ তাই এই কোচিং কালচার এর উপর গরম।

পদ পাইলে এসব কোচিং এর বারোটা বাজায় দিতাম। এখন তো মনে হচ্ছে তাও পাবো না। 


 

এরমধ্যে এই সিনথিয়া একটু করে কথা বলে তাও আবার হুমমম টাইপ কথাবার্তা। 

এর দেমাগ দেখি বেশি। 

নির্বোধ জানেও না যে তার প্রচুর তেমন ছবি আমি সংগ্রহ করে রাখছি নিলয় থেকে৷ 

খালি ইচ্ছা হয় ছাইড়া দি ফেসবুকে। কিন্তু করা যাচ্ছে না এক বিশেষ কারণে৷ 


 

নিলয় একটা পারফেক্ট বলদ। স্টিকের কেরামতিতে মোবাইল এর পাসওয়ার্ড কইয়া ফেলে!  তারপর আবার কয়, ভাই যা ইচ্ছে করো তবুও আমারে সংগঠন এর জন্য ফান্ড যোগাড় করে দাও। 

কইলাম দেখতাছি। দেখতাছি বইলা তার গ্যলারিতে যে এতো জিনিস দেইখা ফেলছি এটা ভাবতেই মজা লাগতেছে। 

নিজের উপরে একজন একটা কাজ ভরসা কইরা দিছে এইটা এতো সহজে করতে পারার মজাও আলাদা। 


 

বাট সাথে রিমি ভাবীরও কিছু পিক দেখলাম। গা কাটা দিয়ে উঠছে। নিলয়ের সাথে সাথে ভাবিরেও জঘন্য লাগে এখন।

যদিও ভাবিরও দোষ দি কেমনে আর!  আসিফ ভাই যেমন ভাবিও হইছে তেমন। কিছু করার নাই। 

তবে ভাবি কিন্তু জোস। মাঝে মধ্যে ভাবি এই নিলয় হাদারে চুজ না কইরা আমারেও তো করতে পারতো। কম কী আমি!  

নজর তো আমার তার উপর ছিলোই প্রথম থেকেই। কিন্তু না, পারলাম না হাইড়া গেলাম ঐ বেটা নিলয়ের কাছে। কেন যে হারছি এটাই বুঝতেছি না। শালা এমন ভাবে বশ করছে যে ভাবি কিছু করতেই দেয় না ওরে। ভাবি না থাকলে কখন যে ওরে খতম কইরা দিতাম তার কোনো ঠিক নাই। 


 

তবে পোলা কিন্তু কাজের। এক স্যারের লগে ক্লোজ হয়ে স্যারদের ইনার পলিটিক্স এর খবর আমারে দেয়। 

তো আমি আবার এসব খবর লিডাররে দি। সে যখন স্যারগো লগে সেটেলমেন্ট এ বসে তখন সেই খবর হয় তার রেফারেন্স। 

স্যাররা ভেতরের এতো খবর শুইনা তব্দা খেয়ে যান। তারা তো জীবনে ভাবতেও পারে নাই যে সিন্ডিকেটের খবর এমনে বের হয়ে যাইতে পারে।

কয়দিন আগে যেমন জার্নালিজমের চেয়ারম্যান   মিশু স্যার তার এক জার্নালিস্ট স্টুডেন্ট রে দিয়ে হিস্টোরির মোজাম্মেল স্যারের নারী বিষয়ক খোঁজখবর নিলো। 

এইটা চলে আসছে নিলয়ের মাধ্যমে আমার কাছে। 

লিডার তারপর মিটিং এর একপর্যায়ে বললো যে, দেখেন স্যার আমাগো পোলাডারে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তবে কিন্তু আপনারা যে সিন্ডিকেটের মধ্যেই একজন আরেকজনের নারী বিষয়ক খোঁজখবর করেন তা ফাস কইরা দিবো। 


 

মিশু স্যারের মুখ হইয়া গেছিলো একেবারে পাংশু!  স্যার এরপর কোনো কথাই কইলো না। কারণ স্যার জানেন সামনে নতুন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। এবার নিজের সিন্ডিকেটের মধ্যেই কাউরে লাগবে তার। এখন এসব ফাস হইলে সিন্ডিকেটের নিজেদের মারামারিতে বিপরীত সিন্ডিকেট থেকে কেউ হয়ে গেলে দোষ হবে তার। তিনি হয়ে যাবেন একঘরে!  তাই চুপ থাকাতেই নিজের লাভ দেখলেন তিনি। 

লিডার তো সেই খুশি। কইলো, ঢাকার যাই তারপর তোর একটা ব্যবস্থা করতেছি আমি। 

আর তোর সংগঠন এর জন্য একদম উপর থেকে ফান্ড আসবে।

কইলাম, ভাই ফান্ড লাগবো না ঐডি আছে। আমারে শুধু আপনে দেশের সব ক্যাম্পাসে ঢুকার ব্যবস্থা কইরা দেন। 


 

আচ্ছা ঠিক আছে দিমু দিমু।


 

তো নিলয়রে এসব কারণে আবার ভালোও লাগে। বলদটা শুধু শুধু ট্র্যাপ এ পড়লো একটা। 

আবার বলে, ভাই তোমার সংগঠন এর মতো একটা সংগঠন করবো আমি সাজেশন দাও কিছু। 

মনে মনে হাসি আর বলি আরে বলদ আমার মতো ব্যাকগ্রাউন্ড লাগে এসবে। তেমন ইমেজ বানায়া চলতে হবে একদম ফার্স্ট ইয়ার থেকেই। 

নিজের জন্য কিছু জুনিয়র পালতে হবে। তারা নিয়মিত " মোস্ট ইন্সপায়ারিং সিনিয়র " বইলা ফেসবুকে পোস্ট করতে হবে। এভাবেই তার একটা বিউটিফুল ইমেজ তৈরি হবে। যেটা কাজে লাগাবে সংগঠন। 

প্রচুর খরচার ব্যপার। জুনিয়র পালাটাও খুব সহজ কোনো বিষয় না।

তাদের সব হ্যাপা আইসা পড়ে নিজের উপরে। ঐসব মিটাইতে গিয়ে আবার ইমেজেরও কিছুটা ক্ষতি হয়। সেইটা আবার পোষায়ও নিতে হয়। বহুত ঝক্কি সামলানোর কাজ এসব। 

আমি জানি নিলয়রে দিয়ে এসব হবে না। 

সে অনেক   ছোটো একটা গুটি। 



 

***


 

ঘুম ঘুম চোখ পিটপিট করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভ্রম আর ঝাপসার একটা সময়ে কিন্তু ঠিকঠাক বুঝতে পারাও যায় না। 

চোখে নাই আরও চশমা!  

স্ক্রিনে শুধু  01865..... নজরে আসে আর কিছু না। কোনোমতে উঠে কলটা ধরি। 

হ্যালো কে? 

ঐপাশে শুধু শো শো আওয়াজ হয় কিছুক্ষণ। 

তারপরে গমগমে গলায়,  কাজ হয়েছে মিরাজ? 

শুনে ঘুম উড়ে যায়। তাড়াতাড়ি দুই পা বিছনা থেকে নীচে নেমে আসে। পানির জন্য ও হাসফাস লাগে। 

বলি, জ্বি ভাই কমপ্লিট কাজ। 

আবার কিছুক্ষণ পরে, ওকে দ্যান সেন্ড মি দোজ পিক। ইউ উইলবি রিওয়ার্ডেড ব্রো। 

এটাতে একটু ভরসা পাই। 

বলি, আচ্ছা ঠিক আছে আসিফ ভাই। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

কল কেটে যায়। 


 

চারদিকে সুনসান অবস্থা। অনেকদূরে কোথাও ট্রেন যাচ্ছে বা হতে পারে সেটা জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার শব্দ। 

সিনথিয়ার ছবি গুলোও হর্ন না দিয়ে ট্রেন বা জাহাজ থেকেও দ্রুত চলে যাচ্ছে আসিফ ভাইয়ের কাছে। আসিফ ভাই এসব দিয়ে কীভাবে কী করবে জানি না। শুধু জানি সবকিছুতে ভয়ানক গতি তার। 

আমি বসে থাকি আর ভাবি বোকা সিনথিয়া শুধু ভেবে গেলো আমি তার পেছনে ঘুরঘুর করছি। 

বোকারা জানে না সুতা রেডি থাকে শুধুমাত্র একজনের হাতে। তিনি যেভাবে চালান সব চলে ঠিক সেইভাবেই। 

মূল খেলোয়াড় এর কাছে সব ফেলনা কাগজ। 

যা শুধু থাকে উড়ে যাওয়ার বা জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে  যাওয়ার অপেক্ষায়। 


 

পাশের ফ্ল্যাটে বোধহয় কাল কোনো অনুষ্ঠান ছিলো। এখনো বাজছে গান,

" ভোকাট্টা তোমার ভালোবাসা " । 


 

আমি হাসতে থাকি নিজের কান নিজের হাসিতে তালা লেগে যায়। 

দূরে আবার সেই চলে যাওয়ার শব্দ এরপর সব চুপচাপ শান্ত।