পোস্টস

চিন্তা

জাতীয় সংগীত, অসাম্প্রদায়িক বুলেট ও শত্রু পরিচিতি

৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শায়খ মোহাম্মদ আবু তাহের

স্বৈরাচার পতনের এক মাস হইলো। সত্যি বলতে গণহত্যার বিচার বিষয়ে তেমন কোনো  অগ্রগতি চোখে পড়ে নাই। প্রসাশনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গণহত্যাকারীর দোসর। আমলা পুলিশেরা হয়তো নির্বাচিত দীর্ঘিমেয়াদী সরকারের জন্য জিহ্বা সংরক্ষণ করতেছে। এই অবস্থায় বিচারের আশা সুদূর-পরাহত।


এদিকে এক অকিঞ্চনের কথার সূত্র ধরে দেশে হাজারটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা থাকার পরেও জাতীয় সংগীত নিয়ে নাড়াচাড়া দেওয়ার ফলাফল কী হইলো? জুলাই ম্যাসাকারের সময়ের অনেক নীরব দর্শক চেতনাবাজির চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়াল মাদ্রিদের মতো কামব্যাক করার সুযোগ পাইলো। অমি পিয়াল আর নিঝুম মজুমদারের মতো প্রভুহীন পথের কুকুরেরা পুনর্বাসনের প্রথম ধাপ সফলতার সাথে পার হইলো। এদের মতো লোকেরা স্বৈরাচারহীন দেশকে শহীদের রক্ত শুকানোর আগেই “বাংলাস্তান” বলে মক করতে পারলো অথচ হাজার খানেক লাশের উপর দিয়ে দেশের নাম মুজিবল্যান্ড বা মোদিল্যান্ড হইলে তারা ঠিকই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতো।


আমজনতাকে অবিরাম শোষণ-পীড়নের ন্যায্যতা হিসাবে শত্রু দেখাইতে হয়। আওয়ামী দেখায় বিএনপি জামাতকে। বিএনপি জামাত দেখায় আওয়ামীকে। মাঝখান থেকে মারা খায় জনগণ।


সবকিছুর একটা সময় থাকে, জাতীয় সংগীত নিয়ে রোমাঞ্চিত হওয়ার সময় এইটা না। আমাদের শত্রু চিনতে হবে। নদীতে বাঁধ, কুইক রেন্টাল, ক্যাপাসিটি চার্জ, রামপাল, ট্রানজিট, সীমান্ত হত্যা, তথ্য সন্ত্রাস এইসব আমাদের বড় শত্রু, এদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।ভিন্ন জাতীয় সংগীত চাইলেই কেউ আপনার শত্রু হয়ে যাবে না। তবে কি উদ্দেশ্যে চাইতেছে সেইটা মাথায় রাখতে হবে।সেকুলারিস্ট ইসলামিস্ট সনাতনী একে অপরের শত্রু না। আইডিওলজি নিয়ে ব্যবসা করা লোকেরা সবার শত্রু। মনে রাখবেন আপনি আমি  অসাম্প্রদায়িক না হইতে পারলেও প্রতিবেশীর বুলেট ঠিকই অসাম্প্রদায়িক, তার কাছে ফেলানী খাতুন আর স্বর্ণা দাস সবাই সমান। তাই আসল শত্রু চিনতে পারাটা জরুরী। নিজেরা মারামারি করে যতো দুর্বল হবেন শত্রুর সুযোগ ততো বাড়বে। দেখেন যা ভালো মনে করেন।


আর বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ২৪ এর গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বন্যার্তদের সহায়তা অব্যাহত রাখা, আইন শৃংখলা আর অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দেওয়া, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে DSA বা এই ধরনের আইন বাতিল করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে থাকতেই সংবিধান সংশোধন অথবা পুনর্লিখন সেই সাথে নির্বাচিত সরকার যাতে নানান অজুহাতে ইচ্ছা মতো সংবিধান সংস্কার না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি পাশের দেশে আশ্রয় নেওয়া পরাজিত শক্তির প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।