পোস্টস

ফিকশন

একটা অধরা শহর

৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জেরিন সুলতানা

সোজা আকাশের দিকে দৃষ্টি ফেরালাম। ঘন কালো পর্দায় কেউ একজন নিখুঁত হাতে সাজিয়ে রেখেছে একের পর এক নক্ষত্র,তাদের তীব্র তেজী আলো ধরণীতে আসতে আসতে অস্ফুট -অস্পষ্টতায় হারিয়ে গিয়েছে। সব ধরনের অস্পষ্টতাই রহস্য বয়ে বেড়ায়, দূরে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা ঐ তারারা ঠিক কতটা রহস্য লুকাবার জন্য তাদের এতখানি আলো আড়াল করেছে তা ঠাহর করা ভার।
বেলীফুলের ঘ্রাণ আসছে কোথা থেকে যেন, যদিও বর্ষা না, পারফিউমের ঘ্রাণ হতে পারে,,হতে পারে। হতে তো পারে কতকিছুই, বাস্তবে 'হতে পারের' কোনো বাধা ধরা গন্ডি নেই। মানুষের উদ্ভট সব কল্পনা, স্বপ্ন, রচিত সব গল্প, কবিতা, কাগজে আর মগজে আঁকা ছবি সবকিছুই এই অনন্ত নক্ষত্র বিথীর কোথাও না কোথাও  , কোনো না কোনো সময়ের স্রোতে হয়তো জায়গা করে আছে, বাস্তবতার সীমানাটুকু পেরুলেই শুরু হয় অবাস্তব আর পরাবাস্তবের জগৎ, সেই অদৃশ্য দেয়াল ভাঙলেই সমস্ত অবাস্তব আর পরাবাস্তবকে ছোয়া যায়, ধরা যায়। 
বেলীফুলের ঘ্রাণ আবার নাকে এসে লাগছে, তীব্র। পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখলাম। রাত আটটা বেজে তেইশ মিনিট। ধানমন্ডির ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে হাঁটছি,  সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি চলছে, বাতাসে শরতের ছোয়া, যদিও ঝলমলে এই আলোয় তা ঢাকা পড়ে গেছে অনেকটা। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা আধফোটা রজনীগন্ধ্যা আর কিছু আলো আধারের মায়া নিয়ে রুমে ফিরলাম। ঘর অন্ধকার, সুইচ অন করে বাতি জ্বালালাম, টেবিলে স্বচ্ছ কাচের  বোতলে রাখা শুকনো গোলাপ সরিয়ে সেখানে রজনীগন্ধা রেখে দিলাম। 
হাতমুখ ধুয়ে, রাতের খাওয়া শেষ করে বিছানায় এসে আধশোয়া হয়ে বসে ফোন অন করতেই সারাদিনের সব টেক্সট একে একে আসতে শুরু করল। দরকারী সব টেক্সটের রিপ্লাই দিয়ে ফোন রেখে কাচের বোতলে আমার সদ্য কুড়িয়ে পাওয়া আধফোঁটা রজনীগন্ধার দিকে তাকালাম, একপাশে কিছু পুরোনো বই আর গলে জমে যাওয়া তিনটা সাদা মোম,,তীব্র ঘ্রাণও আসছে। কিন্তু রজনীগন্ধ্যার না, বেলীফুলের। আশ্চর্য,  রজনীগন্ধ্যা থেকে বেলীফুলের ঘ্রাণ কেন আসবে?আমার নাকের নার্ভাস সিস্টেম কি নষ্ট হয়ে গেছে নাকি? যে ঘ্রাণই পাচ্ছে তাকে বেলীফুলের ঘ্রাণে কনভার্ট করে চালায় দিচ্ছে। 
ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা,,। গাঢ় ঘুমে আমি তলিয়ে যাচ্ছি একটু একটু করে, ধানমন্ডির সেই ব্যস্ত রাস্তার কংক্রিটে,সমস্ত রাস্তার শক্ত কংক্রিট নরম চাদরের মতো আমাকে জড়িয়ে নিচ্ছে,কুয়াশার মতো আমি মিলিয়ে যাচ্ছি সেই চাঁদরে। আরো গভীরে,,,,।ট্রাফিকের শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে স্তব্ধতায়। সেই স্তব্ধতায়  আধখোলা চোখে আমি তাকিয়ে আছি আমার চারপাশের জমাট অন্ধকার ঠেলে আসা একছটা ম্লান আলোর দিকে, আঁধার মাখা সেই আলোতে কারো শাড়ির রুপালি আঁচল উড়ছে,, আচলের এক কোণায় ভেজা একটা পাতা। কাঁচের চুড়ির টুংটাং শব্দ,,,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের উপর একটা কালো টিপ,,আমার দৃষ্টি আরো আবছা হয়ে এলো, অস্পষ্ট আলোয় আর আবছা দৃষ্টিতে শুধু দেখা যাচ্ছে কালো খোপায় জড়ানো একটা বেলীফুলের মালা.......
বয়ে যাওয়া সময়ের জমিয়ে রাখা কোনো শহরের গল্প হয়তো,,।