পোস্টস

সমালোচনা

ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনমত ও বাংলাদেশ

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Rocky Meraz

মূল লেখক রকি মেরাজ

 

বাংলাদেশে ফ্যাসিজম শব্দটিকে অমরত্ব দিয়েছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিব। নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, জনগণের অধিকার সংকুচিত করা, ভোটাধিকার রহিত করা, বাক্‌স্বাধীনতা হরণ, যখন-তখন জেলে পোরা, রাষ্ট্রীয় মদদে গুম, খুন, অপহরণ—এসব তাদের  শাসনের নিত্যঘটনা।

১৯৭১ সালে গণযুদ্ধের মাধ্যমে উপমহাদেশে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখন্ডের জন্ম হয়। শেখ মুজিব এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এসময় তিনি সকল রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরন করেন।
মুজিব ও তার পরিবার ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে শোষণ করতে থাকে। তখন থেকেই সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনমতকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। ফলাফল ফ্যাসিস্ট মুজিবের নির্মম মৃত্যু।

মুজিবের মৃত্যুতে গণতন্ত্র মুক্ত হলেও তা দীর্ঘায়িত হয়নি। মুজিব পরবর্তী বাংলাদেশে মেজর জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন; তবে তা ভারতীয় আগ্রাসনের কারনে বেশিদিন টেকেনি। ১৯৮১ সালে ভারতীয় মদদে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মেজর জিয়াউর রহমানকে একসাথে হত্যা করা হয়। ক্ষমতায় আসেন  স্বৈরাচার এরশাদ। তিনিও ফ্যাসিবাদের সিম্বল বহনকারী শাসক।

৯০ এর জনঅভুত্থান ও স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পর বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে আবারও বাংলাদেশে গনতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী তে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র এগিয়ে যেতে শুরু করে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ভারতীয় সহয়তায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় ফিরে আসেন মুজিবের কন্যা হাসিনা এরপর থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় ফ্যাসিবাদের নতুন অধ্যায়।

লরেন্স ব্রিট ফ্যাসিজমের ১৪টি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে আলোচনা করেছেন। ব্রিটের আলোচনাকে বিবেচনায় নিলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এমন এক চরিত্র যার মধ্যে  প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল ফ্যাসিস্টদের মিল রয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের শক্তি অর্জন, দখলকে কেন্দ্র করা রাজনীতিতে  সক্রিয় ছিলেন। হাসিনা ২০০৯ থেকে ২০২৪ ফ্যাসিজম ভিন্ন ধারণা নিয়ে আবির্ভূত হয়। এসময় ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ পরিচালনা করেন ; শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা করেন। এছাড়া ভিন্ন মতের রাজনৈতিক কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করতে শুরু করেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা এতটাই নির্মম ছিল যে, কারাগারে ঢুকে মেজর বজলুল হুদাকে নিজ হাতে জবাই করেছিলেন।

নির্বিচারে গুম, খুন - হত্যা ও দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা  ফ্যাসিস্ট হাসিনা মিডিয়াতে বলতে শুরু করেন, উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি সমালোচকদের দেশবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, উন্নয়নবিরোধী বলে দমন–নিপীড়ন করেন শক্ত হাতে। তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের চেয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিভাজনকে উসকে দিতেন  কারণ, বিভাজিত সমাজকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ক্রমশই তিনি বাংলাদেশের সকল সেক্টরে একনায়ক হয়ে ওঠতে শুরু করেন। যে কোন ইস্যুতে নিজের খেয়াল খুশিমতো আচরণ করতেন। দিনের ভোট রাতে করতেন। হাসিনার রাষ্ট্রে জনগণের বাক স্বাধীনতা ছিল না। মুক্ত চিন্তা যারা করতে চাইতো তাদের ছুঁড়ে ফেলা হতো আয়নাঘরে। সেখানে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো। বাংলাদেশের পুলিশকে হাসিনা ফ্যাসিবাদের রক্ষাকারী হিসেবে ব্যাবহার করতেন।

২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট  হাসিনার বিরুদ্ধে যে জনমত তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ রয়েছে। এদের একত্রিত করেছে ছাত্ররা। ছাত্ররা কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে ২০১৮ থেকেই হাসিনা বিরোধী হওয়া শুরু করেছিলো। এর আগে ২০১৪-১৫ সাল থেকে  হাসিনা বিরোধী জনমতকে প্রভাবিত করেছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। যারা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে।

বর্তমান বাংলাদেশ দুইটি শিবিরে বিভক্ত। ১.
ছদ্মবেশী নব্য ফ্যাসিস্ট, এরা রুপ বদলে আবারও ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, এদের মধ্যে কেউ ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে আবার কেউ ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে কাজ করছে । ২. ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো। এরা বহুদলীয় গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে। জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করে। সেই সাথে ফ্যাসিবাদ যাতে আর কখনো ফিরে আসতে না পারে সে অনুযায়ী বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সহয়তা করে।

আচ্ছা আপনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনমতের পক্ষে না বিপক্ষে?

লেখক : মোহাম্মদ রকি মেরাজ 
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়