Posts

গল্প

সাধের বউ

September 13, 2024

আব্দুল কুদ্দুস বিপ্লব

91
View

পীরিত কইরা ডজ খাইলাম। পাগল পাগল বাঊল বাঊল হইয়া গেলাম। মাথায় কাক দম্পতি বাসা বানাইল। চুলের সহিত  চিরুনির ডিভোর্স ঘটিল, ঊকূণের স্বৈরাচার কায়েম হল। শ্যাম্পু দিয়া মুড়ি খাই, নুন দিয়া পান খাই। এরকম তাল বেতালের স্রোতে গাঁ ভাসিতে লাগিল। গারজেনরা মৌলভী, ফকীর ফকরার পানিপড়া আনার জন্য জায়গায় জায়গায় দূত প্রেরণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু কিছুতেই আমার ভাল হওয়ার লক্ষ্মণ প্রকাশ পাইলো না। মৌলভী, ফকির গং পানি পড়া হইতে ইস্তফা দিলেন। বাড়ির লোকের এবং আত্মীয়-কুটুমের অধিবেশন বসিল, ‘সরুজকে লইয়া কি করা যায়?’ এ সেশন আমার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি মুলতবি রহিল। আগামী সেশনে এই সম্পর্কে বাতচিত হইবে।

পরবর্তী সেশনে মেজেরিটির ভোটে সিদ্ধান্ত হইল আমাকে বিবাহ করাইতে হইবে। মোক্ষম সিদ্ধান্ত। নরম হাতের পরম স্পর্শ পাইলেই সরুজ মেইন স্ট্রিমে ফিরিয়া আসিবেক। সবাই বলিল তা বটে, তা ঠিক। আমি প্রথমে বিবাহে রাজি হইলাম না কিন্তু ঠেলার নাম বাবাজি। চড়া ঘটকালির ফিসের বদৌলতে বাড়িতে ঘটক মহোদয়দের ভিড় পড়িয়া গেল, আমার বিয়ের বাগে ফুল ফোটিল। অবশেষে আমার শাদি মোবারাক সুসম্পন্ন হইল।

এক্ষনে আপনাদের সামনে আমার বউর পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। নইলে আপনারা অভিযোগ উত্থাপন করিবেন, সরুজ বউ লইয়া এত বকিল কেন? আমার প্রিয়া অতিশয় শাডা, ঘোড়ামূখী, ইন্ডিয়ান বলদের মত বড় বড় চোখ ও দাঁত এবং হেজা কাঁটার মত চুল। কপালে টাংগাইল জেলার সমান টিপ এবং রাজশাহীর মজা পুকুরের মত মূখ। সারা গতর কসমেটিক কারখানা। মোহরানার অতিরিক্ত আক্রায় শুভবিবাহ ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হইল। আগলা পাগলাদের বিশ্বাস কি? পাছে বউ ছাইরা দেই। তাই মোহরানার আধিক্যই বিবাহ টেকসই হইবার একমাত্র যুতসই গ্যারান্টি। তাহার পরও  আমি বউর জন্য শুকুর গুজারকরি। এহন ছেলেদের কপালে বউই জূটে না আমার নসিবে তাও জুতিয়াছে। বউ আমার বুদ্ধির ঢেঁকি। মাথা বুঝাই গোবর। গোবর  অতি উত্তম সার, এর গুণে  আমার সন্তানেরা হাইব্রিড উৎপাদনের মত লাফাইয়া লাফাইয়া  বাড়িয়া  উঠিবে।

আয়না যে লাত্থি প্রবন মহিলা তা বাসর রাতেই প্রমাণ হইয়া গেছে। জোর জবরদস্তি করিয়া কি দাম্পত্য জীবন  চলে?   নিজের আটকুইরা নাম ঘুচানোর জন্য জোর জবরদস্তি করিয়া আমার ছেলে মানিক জন্মিয়াছে। তার পরের ঘটনা আরও করুণ। বেয়ারা বউ কাউর কথা শুনে না, কাউর তোয়াক্কা করে না, সে যেটা করে সেটাই ফাইনাল। খালি উজান বাঁয়। বেশীর ভাগই রাত এগারটার পর বাড়ি ফিরে। অধিক রাতে তার পোষাকের এক্সক্লুসিভ আইটেম গুলো যেমন ব্রা, আন্ডারওয়ার, পেটিকোট ইত্যাদি ধুইয়া দেই। একটু গড়িমসি করলেই বলেন, বেকার সমস্যা বড়ই মারাত্মক। আদেশের অন্যথা কিছু যাবে না। ডিক্টেটরশীপ। হায়রে ঊলো খাইকা কপাল! আয়না স্বামী সেবা সংঘের কো-চেয়ারপার্সন। ঠোটে  ডাবল রেটে লিপিস্টিক মারিয়া ঘসিয়া সভা সমিতি ও সেমিনারে যায়। প্রায়ই আমাকে পান্তা ভাত কিংবা আটার চাপড়ি গড়িয়া খাইতে হয়। মার  খাওয়ার ভয়ে কোন কিছু প্রতিবাদ করি তে সাহস পাইনা। অনেক রাত পর্যন্ত প্রহর গুনতে হয়। 

বিছানায় তার গতর বানিয়ে, গতর টিপে, পা টিপে, চুল টেনে ও নানাভাবে আরাম ঊপাচার করিয়া দিতে হয়। তাহার বালিশ বালিশ গালের মশা মারিয়া দিতে হয়। মশারি টাঙাইয়া দেই। অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাঁথর। অনেক রাতে বিধির কাছে প্রার্থনা করি, “বিধি একরাতে আমাকে নারী আর উনাকে পুরুষ বানিয়ে দেন”। কিন্তু নিষ্ফল, বিধি বাম। ঐ গানের কথা মনে পরে, “তোমরা যারা ভাবছ আমরা মানুষ কিনা, বিধিও যাদের কান্না শুনে না……।”

কথায় বলে শ্বশুরবাড়ি মধুর হাড়ি। আমার শ্বশুরবাড়ি আমার জন্য বিষের হাড়ি। শ্বশুরবাড়ি গেলে আমাকে দিয়া দুনিয়ার পেন্ডিং কাজ করানো হয়। আমি শুইয়া বসিয়া শ্বশুর বাড়ির অন্ন ধ্বংস করিতেছি না? যেমন ধান, সরিষা, গম ভাঙ্গাইয়া আনা ইত্যাদি কাজ করি। আদরে জামাই সবার সামনে চাল ও আটার বস্তা এবং তিলের ভান্ডা মাথা করিয়া শ্বশুরবাড়ি অভিমুখে ছুটে। ইহাও সহ্য হয়, আমলকির বাপের সাথে যখন ঘণ্টার পর চুকা মিঠা  আলাপ করে তখন হৃদয়ের বত্রিশ নাড়ী ছিরিয়া যায়।

আপনারা মনে করিতেছেন আমি খুব দুঃখে আছি। আমার প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া কেহ সাজেশন দিতে পারেন। হ্যা, পারেন তাহা সাদরে গৃহীত হইবে। তবে সাবধান পাছে এর কিছু ম্যাডাম জানিয়া ফেলেন।

Comments

    Please login to post comment. Login