লর্ড বায়রন উনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজ কবি ছিলেন। তাকে ইংল্যান্ডের সেরা কবিদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে তার একটি পোষা ভাল্লুক ছিল এবং মানুষের মাথার খুলি থেকে মদ্যপান করতে পছন্দ করতেন তিনি? রোমান্টিক আন্দোলনের এই কবি সম্বন্ধে বিচিত্র কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
১. লর্ড বায়রন মানুষের মাথার খুলিতে মদ খেতেন। তার পৈত্রিক বাড়িতে একজন মালি মাটি খুঁড়ে মানুষের মাথার খুলি খুঁজে পেয়েছিলেন। বায়রন মনে করতেন, এটি কোনো সন্যাসীর মাথার খুলি ছিল। তিনি এই খুলিকে একটি পানপাত্রে রূপান্তরিত করেছিলেন।
২. তিনি পশুপ্রেমী ছিলেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কুকুর পালতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কুকুর পালার নিয়ম না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে অনুমতি দেননি। ফলে তাদেরকে উপহাস করে তিনি ভাল্লুক পালা শুরু করেন।
৩. বায়রনের ব্যাপক জনপ্রিয় কবিতা চাইল্ড হ্যারল্ডস পিলগ্রিমেজ। ভ্রমণ, রোমান্স নিয়ে লেখা দীর্ঘ বর্ণনামূলক এই কবিতাটি ১৮১২ থেকে ১৮১৮ সালের মধ্যে চারটি অংশে প্রকাশিত হয়েছিল। তরুণ বয়সে কবির ইউরোপ ভ্রমণের উপর ভিত্তি করে কবিতাটি লেখা হয়েছিল। কবিতাটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে বায়রন বলেছিলেন, মনে হচ্ছে যেন একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজেকে বিখ্যাত হিসেবে আবিষ্কার করলাম।
৪. বায়রনের একটা পা বিকৃত ছিল। এজন্য তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। পায়ের বিকৃতি ঢাকার জন্য তিনি বিশেষভাবে তৈরি জুতা পরতেন। এই জুতার কারণে তিনি প্রচন্ড ব্যথা পেতেন। পায়ের জন্য সারাজীবন লজ্জা পেয়েছিলেন তিনি।
৫. মাত্র ১০ বছর বয়সে বায়রন লর্ডশিপ উপাধি পান। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্য ছিলেন। তার বাবা একজন জুয়াড়ি ছিলেন। বায়রনের তিন বছর বয়সে তিনি মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই চাচাও মারা যান। ফলে উত্তরাধিকারসূত্রে অল্পবয়সে তিনি এই উপাধি পেয়েছিলেন। পাশাপাশি বাবা-চাচার ঋণ পরিশোধের দায়িত্বও উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন তিনি।
৬. কুকুর, ভাল্লুক ছাড়াও বন্যপ্রাণীর বড় একটি সংগ্রহশালা ছিল লর্ড বায়রনের। বিখ্যাত ইংরেজ কবি শেলী তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, তিনি বায়রনের বাড়িতে ১০টি ঘোড়া, ৮টি বিশাল কুকুর, ৩টি বানর, ৫টি বিড়াল, ১টি ঈগল, কাক এবং বাজপাখি দেখেছিলেন। এছাড়া সিঁড়িতে ৫টি ময়ূর, ২টি গিনি হেন, ১টি মিশরীয় সারসও দেখেন।
৭. বায়রনের জীবন বৈচিত্র্যময় ছিল। অসংখ্য সুন্দরী নারীদের সঙ্গে তিনি চুটিয়ে প্রেম করেছেন। এমনকি নিজের সৎবোনের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান তিনি। ফলে তার নামে কুৎসা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েছিলেন। এজন্য ১৮১৬ সালে ব্রিটেন ছেড়ে ইউরোপে চলে যান। নির্বাসিত অবস্থায় গ্রিসে মারা গিয়েছিলেন রোমান্টিক এই কবি।
সূত্র: বিবিসি, ব্রিটানিকা, ক্র্যাকড.কম