পোস্টস

গল্প

জমসেদের জুতা ভাবনা

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আহসান স্মরণ

জমসেদ হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ বসিলা মোড়ে খাড়ায়। রাস্তার  ধারে বৃষ্টির জল জইমা রইছে। টলটলে জলে কয়েকটা মশা সম্ভবত খেলতাছে। জমসেদ নিজের পায়ের জুতার দিকে চাইয়া মনে মনে ভাবে, ছিড়াগেছে! ছোটকালে যখন মশার পালের মতো গ্রামের সব পোলাপান একসাথে মাগরিবের আজান পর্যন্ত গেরামের মাঠে খেইল্লা বেড়াইতো আর আজান শ্যাষে বাড়ি বড়ি চইলা যাইতো, সেই সময়ে একবার খেলার তালে নতুন জুতা কোথাও একটা রাইখা ভুইল্লা বাড়ি গেছিল জমসেদ। সেই রাইতে তার মায়ে তারে তিন দফা পিডাইছিল। তারপর থাইকা আর কোন দিন জুতা হারায় নাই কিন্তু ছিড়া গেছে অসংখ্য বার। বেকার জীবনের অসহায় সময়ে জুতা যখন পথচলার সঙ্গি হইয়া থাকে তখন মানুষ একজোড়া নতুন জুতার মর্ম বোঝে। যেমন টা আজ থেকে বিশ বছর আগে মা বুঝতো। জামসেদ এক লাফ দিয়ে রাস্তার পাশের সেই জমা জল পার হয়। সেদিন তারে একজন বলছে, 'ভদ্র জায়গায় যাইতে হলে ভালো জামা জুতা পইড়া যাইতে হয় নাইলে লোকে দাম দেয়না। আর এমনেই তোমার চেহারার যা অবস্থা একটু ভাব নিয়া না চললে লোকে পাত্তাই দিবো না।' সেদিন কোন কথা না বইলা জমসেদ শুধু হাসছিল। এই জুতা পইড়া গত দুই বছরে সে কতো যায়গায় গেছে তার হিসাব নাই আর আইজ ছিড়া গেছে তাই কোন দাম নাই। একবার কাশেমরে জব্বারের বৌ এর লগে প্রেম করার অপরাধে এলাকার লোজন ধইরা ছেড়া জুতা দিয়া মারছিল তারপর থাইকা কাশেম আর গ্রামে যায় নাই, সাভারে গার্মেন্সে চাকরি নিয়া বিয়া কইরা ঐখানেই থাকে। তারে ছেড়া জুতা দিয়া মারার কারন হইলো তাতে নাকি সম্মান থাকে না। কাশেমেরও বেধহয় সব সম্মান চইলা গেছিল কোথাও একটা। তয় পরে জব্বারের বৌ আর এক জনের লগে দুই বছরের বাচ্চা রাইখা পালাইছে। এতে কইরা এলাকায় কাশেমের ইজ্জত কিছুটা বাড়লেও ছেরা জুতার মাইর খুব সাঙ্ঘাতিক। হাঁটতে হাঁটতে জমসেদ বছিলা বিরিজের উপর খাড়ায়। বিরিজের নিচে নদী দিয়া ট্রলার যায়, নৌকা যায়, মাথার ভেতর দিয়া কতো স্মৃতি গড়গড়াইয়া অতিত থাইকা বর্তমান হইয়া ভবিষ্যৎ ঘুইড়া আবার অতিতে চইলা যায়। জমসেদ বিরিজের উপর দিয়া যাওয়া গাড়ির আলোয় আর একটা বার জুতার দিকে তাকায়। গত দুই বছরে এই জুতাটা পায়ের সাথে খাপ খাইয়া গেছে। এ যেন এক ভালোবাসা। তারপরেও জামসেদ ভাবে, নদী দিয়া তো কতো কিছু ভাইসা যায় একজোড়া নতুন জুতা ভাইসা গেলে কি এমন ক্ষতি হইতো!