হীরক রাজা অত্যাচারী এক রাজা। সে তার তোষামোদকারীদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করে। ভিন্নমত পছন্দ করেনা। নিজের রাজ্যে হীরের খনি থাকা সত্ত্বেও প্রজাদের দারিদ্রের মধ্যে রাখে। চাষিদের দিন কাটে অনাহারে। চাবুক মেরে শ্রমিকদের বেগার খাটায়। প্রজারা খাজনা দিতে না পারলে তাদের ওপর অত্যাচার করে।
হীরক রাজা সবার ‘ব্রেন ওয়াশ’ বা মগজ ধোলাই করে ছাড়ে। তার জন্য সাহায্য নেয় নিজের পোষা বিজ্ঞানীর তৈরি ‘যন্তর-মন্তর’ ঘরের। প্রতিবাদী প্রজাদের ‘যন্তর-মন্তর’ ঘরে পুরে রাজার গুণগান গাওয়া কোনো মন্ত্র দিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করে ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতে সারা জীবন তারা রাজার সব অত্যাচার-অনাচার ভুলে গিয়ে কেবল তার গুণগান করে বেড়ায় । সত্যবাদী স্পষ্টবক্তা মানুষদের মগজ ধোলাই করে, তার বিচার করার ক্ষমতা নষ্ট করে, শুধু ভুল তথ্য দিয়ে নিজের গুণগান গাইবার জন্য তাদের বাঁচিয়ে রাখত।
এই রাজার শিক্ষাকে ছিল খুব ভয়। রাজা মনে করে মানুষ ‘যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে’। বেশি জানলে অত্যাচারী রাজার মুখোশ খুলে যাবে। তাই হীরক রাজা তার রাজ্যে শিক্ষা চায় না। মাইনে করা কবিকে দিয়ে নিজের মনের মতো মগজ ধোলাই করার বিভিন্ন ছড়া শিখিয়ে আজীবনের জন্য পাঠশালা বন্ধ করে দেয় সে। শিক্ষক উদয়ন পণ্ডিতকে পালিয়ে বেড়াতে হয় রাজার পেয়াদাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
অন্যদিকে রাজা প্রজাদের নানা অনাচার করেও বাইরের রাজাদের হীরক রাজত্বের বর্ষপূর্তি উৎসবে নিমন্ত্রণ করে আনে নিজের প্রাচুর্য দেখাতে। পাছে বাইরের লোকের চোখে প্রজাদের দুঃখ দারিদ্র চোখে পড়ে যায় তাই একটা তাঁবুতে জোর করে সব গরিব-দুঃখী মানুষদের জন্তু জানোয়ারের মতো বন্দি করে রেখে দেয়। হীরক রাজার দম্ভ এতটাই যে নিজেরই একটা বিশাল মূর্তি গড়ে সব নিমন্ত্রিতদের কাছে নিজের অহমিকা প্রচার করতে চায়।
একদিন হীরক রাজ্যে রাজার নিমন্ত্রণে গুপী-বাঘা আসে। ঘটনাচক্রে তাদের দেখা হয়ে যায় পালিয়ে বেড়ানো উদয়ন পণ্ডিতের সঙ্গে। হীরক রাজার দেশে চলচিত্রে রূপকথার আদলে প্রতিবাদ, আন্দোলনের মাধ্যমে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণজাগরণ তৈরি ও স্বৈরাচারী শাসকের পতন দেখানো হয়েছে।