পোস্টস

চিন্তা

সংবেদনশীল হও জাহাঙ্গীরনগর

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফারদিন ফেরদৌস

প্রথম আলো 'মব জাস্টিসে'র বাংলা করেছে বিশৃঙ্খল জনতার বিচার। আমাদের ডিএনএ'তে সুদূর অতীত থেকেই বিশৃঙ্খলপনার বীজ রোপিত আছে এতে সন্দেহ নাই। যুগে যুগে যেসব গ্লোবাল রোবাররা আমাদেরকে শাসন ও শোষণ করেছে আমাদের কোমল জমিনে তাদের বুনা বীজ আমরা অস্বীকার করতে পারব না। ওই দোষ কাটানোর জন্যই তো এখনকার সভ্য সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়, ইশকুল-কলেজ, মাদ্রাসা খোলা হয়েছে। যাতে আমরা সভ্য মানুষ হয়ে হিতবাদী সভ্যতার মশাল জ্বালিয়ে রাখতে পারি।

কিন্তু আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের   অনুজেরা তোমরা কেন উল্টাটা করবে?

'জেনেভা কনভেনশন' বলে বিশ্বস্বীকৃত রুলস আছে। জেনেভা কনভেনশনে ব্যাপকভাবে যুদ্ধকালীন বন্দী, বেসামরিক এবং সামরিক কর্মীদের মৌলিক অধিকার সংজ্ঞায়িত করে; আহত এবং অসুস্থদের জন্য সুরক্ষা স্থাপন; এবং যুদ্ধক্ষেত্রে এবং তার আশেপাশে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান করে।

যুদ্ধের ফলাফল ডিসাইডেড হওয়ার পর যুদ্ধে পরাজিত শক্তিকে মেরে ফেলবার রীতি কোনো সভ্য সমাজেই নেই।

লাস্ট রেজিমের অংশীদার হিসেবে জুলাই জেনোসাইডের দায় ছাত্রলীগ এড়াতে পারবে না। তাদের অনেকেই ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেছে, ক্ষেত্রবিশেষে বেপরোয়া পুলিশের সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছে। দোষ প্রমাণিত হলে তাদেরকে বিচারিক সাজা দেয়ার যথার্থ আইন দেশে আছে।

তা সত্ত্বেও সব ছাত্রলীগ ধরে ধরে 'মব কিলিং' শুরু করলে জুলাইয়ে দেখানো আওয়ামী লীগের কুৎসিত রূপের সাথে তোমাদের পার্থক্য কিভাবে নিরূপণ করবে? বিচারবহির্ভূত হ'ত্যাকাণ্ড তোমাদের জন্য কোনো সুনাম বয়ে আনবে না। আইন হাতে তুলে নিয়ে খামোখা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন বদনামের ভাগিদার করবে?

জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র খুনের এক বর্বরোচিত লিগ্যাসি আছে। শাহ বোরহান উদ্দীন রোকন, মোজাম্মেল হক, হাবীবুর রহমান কবির, কামরুল, শওকত কবীর দীপু, আনন্দ কুমার ঘোষ, জুবায়ের আহমেদ। এবং সর্বশেষ ওই তালিকায় সংযুক্ত হলো শামিম মোল্লা!

ভাইয়েরা আমার, তোমাদের প্রতি অনুরোধ এই তালিকা আর দীর্ঘায়িত করো না। ক্ষোভ, রাগ, জিঘাংসা; সব অনুভূতি হজম করবার সামর্থ্য ও শক্তি তোমাদের আছে। কারণ তোমরাই বিজয়ী। যুদ্ধে বিজয়ীরা খুব বেশি সংবেদনশীল ও ক্ষমাশীল হয়।

সার্বিয়ান একটা প্রবাদ আছে, 'যুদ্ধ শুরু হলে রাজনীতিবিদেরা অস্ত্র দেয়, ধনীরা রুটি দেয় আর গরিবেরা তাদের ছেলেদের দেয়। যুদ্ধ শেষ হলে রাজনীতিবিদেরা হাত মেলায়, ধনীরা রুটির দাম বাড়ায় আর গরিবেরা তাদের ছেলেদের কবর খুঁজে বেড়ায়।'

মনে রেখো সাধারণের আর কেউ নাই, ঘুরেফিরে ওই সাধারণ ছাড়া। রক্তক্ষয়ী গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নাগাল যারা পায় তারা খুব বেশি কিছু হারায় না। সর্বকালে সবখানে হার সব আমজনতার।

লেখক: সাংবাদিক 
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪