হে ফজলুল হক মুসলিম হলবাসী,
আপনাদের অন্নসেবায় আলহামদুলিল্লাহ্ পড়েছিলেন তৃপ্ত তোফাজ্জল।
আপনাদের অসম্মান, অপমান, মারধর ও বিচিত্র উপায়ে শারীরিক নিগ্রহেও অখুশি ছিলেন না। যার জীবনটা নানান দুঃখ-জরায় তামা তামা তার আসলে বেদনাহত হওয়ার এতটুকু সুযোগ নাই।
তোফাজ্জল বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। জীবনের যাতাকলে পড়ে আইন অধ্যয়ন শেষ করতে পারেননি। হে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বাসী এলিটমহল আপনারা তাকে আইনের চরম রূপ দেখিয়ে দিয়েছেন।
বাবা আবদুর রহমান মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মারা গেলে তোফাজ্জল নিরাশ্রয় হন। সীমাহীন কষ্ট বয়ে বেড়ানো পিতৃহীন তোফাজ্জলকে আগলে রাখেন তার বড়ভাই নাসির, যিনি পুলিশ অফিসার ছিলেন। দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে বড়ভাই নাসিরও মারা যায়! পরম মমতা ও ভরসার আশ্রয়স্থল মাও প্রয়াত হলেন। তার প্রেম ছিল স্থানীয় চেয়ারম্যানের কন্যার সাথে,জীবনের শেষ ভরসা ওই প্রেমিকারও বিয়ে হয়ে গেল অন্যত্র। এত কষ্ট যিনি বুকে বয়ে বেড়াতেন তাকে আর কীসের কষ্ট দেবেন আপনারা?
জীবন্মৃত একজন অসহায় মানুষের প্রতি শেষ খাবার খাওয়ানোর করুণা দেখিয়েছেন।
পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসে দয়াবান আপনাদের নাম অঙ্কিত থাকবে।
অতঃপর তোফাজ্জলের জীবনের সমুদয় কষ্ট নিমিষে দূর করে দিয়েছেন। জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। বুকে বয়ে বেড়ানো বাংলাদেশের ভার থেকে চিরতরে মুক্ত করেছেন।
পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙেছেন, তাজা মাংসে লাইটার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়েছেন, রডে হাত বেঁধে ফ্লোরে পিষেছেন, জখমে জর্জরিত শরীরে ইচ্ছেমতো লাত্থি দিয়ে মানুষ নামের কলঙ্ক বাড়িয়েছেন। দিনমান ক্রমাগত নিপীড়নের কালে প্রশাসন নির্বিকার থেকেছে। তারপরও বিশ্বাস করি, জালিমের হাতে শত জুলুম সয়েও মজলুম তোফাজ্জল আপনাদেরকে অভিশাপ দিতেন না। অচলায়তনের স্বঘোষিত মাস্টার আপনাদের মতো এলিটদের সাথে প্রান্তজন তোফাজ্জলের পার্থক্য এটাই।
পাথরঘাটার মানুষ তোফাজ্জলের জন্য
আমরাও পড়লাম শোকর আলহামদুলিল্লাহ্!
লেখক: সাংবাদিক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪