বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম পয়েন্ট তিন পার্বত্য জেলা। ওখানে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষের বসবাস -যাদেরকে আমরা আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠী বলি। যদিও মানুষের গোষ্ঠী ভিত্তিক আলাদা নাম বিভাজনের অনুভূতি তৈরি করে। গেল দুইদিন পাহাড় খুব অশান্ত অবস্থায় আছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে মব ভায়োলেন্সে ৩০ বছর বয়সী মামুন মারা গেলে সেখানকার পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট তথা ইউপিডিএফ(মূল) সেনা টহলের ওপর হামলা করলে সেনাদের গুলিতে অপরপক্ষের বেশ কয়েকজন মারা যায়। এরই মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায় ও পাহাড়িদের বাড়িঘর, বাজার ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তিনি পার্বত্য জেলায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, 'চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের সনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।'
সমতলে যেমন পাহাড়িদের বসবাস করবার অধিকার আছে। তেমনি পাহাড়ের বাস্তুসংস্থান, ভাষা, সংস্কৃতি, লোককৃত্য, ধর্মাচার অক্ষুন্ন রেখে সমতলের যে কেউ পাহাড়ে বসবাসের অধিকার রাখে। দরকার হলো অন্যকে যথোচিত সম্মান দিয়ে সুন্দর সহাবস্থান। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেন আদিবাসীদের সংস্কৃতি বদল করতে উৎসাহ না দেখায়, তাদের নিজস্ব লোকজ ধর্মাচারে ভিন্ন ব্যঞ্জনায় দৃষ্টিপাত না করে। পাহাড়ে মঙ্গোলীয় শ্রেণিভুক্ত চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, কুকি, মুরং, মগসহ ১৩টি স্বতন্ত্র আদিবাসীই ভালো মানায়। আমরা যারা পাহাড়ে যাই ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে আমরা বেমানান না। কেউ আমাদেরকে সেখানে যেতে নাও করেনি। বসবাসের ক্ষেত্রে সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি আগে প্রাধান্য দেয়াটাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে আমাদের সমতলবাসীর কর্তব্য। পাহাড়ের স্বাভাবিকতায় সমতলের আবেশ ছড়িয়ে দিতে গেলে ঠোকাঠুকি লাগবেই।
মনে রাখতে হবে প্রতিবেশিরা ওৎ পেতে বসে আছে পাহাড়কে অশান্ত করে কিভাবে নিজেদের আধিপত্যবাদ এই দেশে কায়েম রাখা যায়। এমন বাস্তবতায় আমাদের নিজেদের ঐকতানে যদি ফাটল ধরে, বৈদেশি সুবিধাবাদীদের হাতকেই শক্তিশালী করা হবে। আমাদের সামগ্রিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা তেমনটা করতে পারি না। খেয়াল রাখা দরকার পাহাড়ের গোলমেলে রাজনীতি যেন দেশের harmonyতে কালিমা না লাগাতে পারে। প্রতিবেশীর hegemony'র পালে হাওয়া না দেয়।
আমরা চাই মামুনের খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। খতিয়ে দেখা হোক এই ঘটনার মাধ্যমে হিল ট্র্যাক্স অশান্ত করতে কেউ ফাঁদ হিসেবে পরিকল্পনা করেছে কিনা।
বাঙালি-অবাঙালি বলে কিছু নাই। সবাই আমরা বাংলাদেশি। সবার ওপরে আমরা মানুষে মানুষে মায়া, মমতা, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের কথা বলব। মব ভায়োলেন্সে কোনো সমস্যা ও সংকট কাটবে না। সব পক্ষেই আমরা যেন আলোচনার পথটা খোলা রাখি। আর কোনো দাঙ্গা নয়, আমাদের সাদা মেঘের নীল পাহাড় তোমরা ভালো থাকো। তোমাদের বৃক্ষরাজি সবাইকে আগলে রাখুক। তোমাদের উর্বর জমিন সবার পেটে অন্ন যোগাক। তোমাদের উদার আকাশে শান্তির মেঘ জমে সবার জন্য সমান ছায়াদান করুক।
লেখক: সাংবাদিক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪