গুপ্ত রাজনীতি কেমন? কেন গুপ্ত রাজনীতি করতে হয় রাজনৈতিক দল গুলোকে?
আপনারা নাটক সিনেমায় যেমন দেখেন গুপ্তচরকে' প্রতিপক্ষের কাছে ইনফরমেশন লিক করতে। গুপ্ত রাজনীতিতেও এমন ইনফরমেশন লিক হয় গুপ্ত রাজনৈতিক দলের কর্মী দ্বারা । তাহলে এই রাজনীতি নৈতিকতার দিক থেকে অবশ্যই খারাপ। রাজনৈতিক দলের যখন অস্তিত্ব সংকট সৃষ্টি হয় তখন একদল কর্মীরা এমন গুপ্তচর বৃত্তিক রাজনীতি করে দলকে সেইফ রাখার জন্য। এটা একটা কৌশল। তবে সবার কাছে এটা ভাল নাও হতে পারে। তবে রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে এটা জনপ্রিয়। দলের প্রয়োজনে কর্মীরা জীবনের রিস্ক নিয়ে এই রাজনীতিটা করে।
গুপ্ত রাজনীতি কেন করতে হয়?
গুপ্ত রাজনীতি তখনই করতে হয় যখন রাজনীতিতে ওপেন পলিটিক্যাল ফিল্ড থাকে না। চরম নিপিড়ীত হতে হয় রাজনৈতিক কর্মীদের। এক্ষেত্রে নিরিহ কর্মীদের জীবন বাঁচানোর জন্য রাজনৈতিক দল গোপন রাজনীতির আশ্রয় নেয়।
শুধু ইনফরমেশনের জন্যই গুপ্ত রাজনীতি না। গুপ্ত রাজনীতি করার আরও অনেক কারন আছে। রাজনীতিতে আদর্শের থেকেও বাস্তবতা বড় হয়ে যায় অনেকসময়। বাস্তবতাকে মানিয়ে নেয়ার জন্যও গুপ্ত রাজনীতি করতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে।
গুপ্ত রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে শিবিরের রাজনীতি চলে আসে। আচ্ছা হাসিনার বিপক্ষে শিবিরের গুপ্ত রাজনীতিতে কি জনগণের লাভবান হয়েছে?
শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির লাভটা হলো ২০২৪ এর জনঅভুত্থান। এই অভুত্থানের পেছনে শিবিরের গুপ্ত রাজনীতি কাজ করেছে। তাদের গুপ্ত রাজনীতিই ছাত্রজনতার আন্দোলনকে পলিটিক্যাল বানাইসে ও দীর্ঘ ৩৬ দিন টাইনা নিসে। পলিটিক্যাল লিয়াজু গুলোও গুপ্ত রাজনীতির মাধ্যমেই হইসে। তাই ফ্যাসিবাদের সময় গুপ্ত রাজনীতি অনেকের মতে জায়েজ ছিল। কারন হাসিনার পতনে জনগণের লাভ হইসে। শিবিরের এই গুপ্ত রাজনীতি ছাড়া শেখ হাসিনার পতন ঘটানো কঠিন ছিল। তাই বলে আন্দোলন শুধু গুপ্ত রাজনীতি করা শিবিরের একার না। এই আন্দোলন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের।
ফ্যাসিবাদী শাসনে ভিন্ন মতের রাজনীতি যখন অসম্ভবের পর্যায়ে ঠিক তখনই শিবিরের গুপ্ত রাজনীতি রাজনীতিতে স্পেস তৈরি করছে। অনেক রাজনৈতিক কর্মী জেল জুলুমের হাত থেকে বাঁচসে। একজন গুপ্ত রাজনীতি কইরা জীবনের রিস্ক নিয়া ১০ জনকে সেইভ দিসে। নইলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আরও অনেক গুম খুন হইতো।
তবে গুপ্ত রাজনীতি করতে যাইয়া যারা ফ্যাসিবাদের সমর্থন পেতে হুমকি ; ধামকি দিসে ; ট্যাগ ইউজ করছে। ফ্যাসিবাদের প্রতিপক্ষকে পিটাইছে। এখন তাঁরাই সবচেয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। গুপ্ত রাজনীতিতেও সততার ব্যাপার আছে ; গুপ্ত রাজনীতি করে ফ্যাসিবাদের সুবিধা ভোগ করে, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে কেউই যেন পার না পেয়ে যায়।
ফ্যাসিবাদের সময় প্রতিপক্ষ দলের রাজনীতিতে পার্টিসিপেশন ও অবজারভেশনের জন্য গুপ্ত রাজনীতির প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর তবে এখন গুপ্ত রাজনীতির দরকার নেই।
ফ্যাসিবাদী পরিয়ড রাজনীতিতে গুপ্ত রাজনীতির একটা রহস্য সৃষ্টি করছে, যা রাজনৈতিক ভাবে মীমাংসিত হলেও নৈতিকভাবে মিমাংসা করা সম্ভব নয়। তবে গুপ্ত রাজনীতি যেন দীর্ঘায়িত না হয়। তাহলে রাজপথের পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্টরাও গুপ্ত রাজনীতি করা শুরু করবে।
তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে পারিবারিক আদর্শ দেখে, ও রাজনৈতিক দর্শন বিবেচনা করে নিজের কর্মীদের পুনরায় রাজনীতি করতে দিতে হবে। তবে বিতর্ক এড়াতে গুপ্ত রাজনীতি করা কর্মীদের রাজনৈতিক পদ পদবী থেকে দূরে রাখতে হবে। তাদের দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে রাজনীতি করাতে হবে।
আর যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে গুপ্ত রাজনীতি করা কর্মীদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে দেন! পারবেন তো? রাজনীতি কারও কারও কাছে হাইপোথিসিস আবার কারও কাছে রুপকথা। রুপকথার রাজনীতিতে গুপ্ত রাজনীতি একটা বিতর্কিত বিষয় তবে অবাস্তব কিছু নয়।