Posts

চিন্তা

চাঁদনী রাতের চাঁদের আলো

May 7, 2024

হাসান মন্ডল

669
View
সময়টা বেশী দিনের না। এই তো সেদিন। আমি নতুন নতুন প্রেমে পরেছি। প্রেমে যে এত্তো মজা, প্রেমে না পড়লে বুঝবেন না। বাস্তবতা বুঝতে হলে নিজে অনুভব করতে হবে। আমি ভংচং বুঝালাম আর আপনি মেনে নিলেন তাহলে আপনি বোকার সর্গে বসবাস করছেন। কারণ আমি এখন যে গল্পটা আপনাদের সামনে পেশ করতে যাচ্ছি,  তা আপনার কাছে সত্যি নাও মনে হতে পারে।

তা যা হোক এবার মূল কথায় ফিরি। একমিনিটের জন্য বসুন। আর কথাগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। শুধু রিডিং পড়ার জন্য এই গল্প নয়।

আমার নতুন প্রেম।  নাম তাহমিনা। দেখতে তেমন ফর্সা না হলেও,  আমার কাছে অনেক মায়াবি লাগে। ইউরোপ, আমেরিকার অনেক মেয়ে দেখেছি মুভিতে,  গানে অর্থাৎ মোবাইলে, কিন্তু তাদের মাঝে কোনো মায়া নাই বলে আমার কাছে মনে হয়। আসলে মায়া কোনো ফর্সাতে নির্ভর করে না, মায়া নির্ভর করে আপনার চোখে তাকে কেমন লাগছে। 

যখন আপনার কাউকে ভালো লাগে না, তখন তার অনেক দোষ বের করেন,  যেমন নাক বোচা, কালো, কথা বলতে পারে না ভালো মতো, অন্য ছেলের সাথে কথা বলে ইত্যাদি ইত্যাদি।  কিন্তু যখন কাউকে ভালো লাগে তখন যদি তাকে বলা হয় কেন ভালো লাগে? তখন সে উত্তর দিতে পারবেন না। আসলে ভালো লাগার কোনো কারণ হয় না। ভালো লাগা সৃষ্টি হয় হৃদয়ের সেই অন্তর্স্থাল থেকে, যেখানে কোনো কারণ জমা থাকে না।

তাহমিনাও ছিলো তেমনি একটা মেয়ে। যার মায়া আমাকে এমন ভাবে গ্রাস করেছিলো যে, সে যদি ৫-৬টা ছেলের সাথেও প্রেম করে তবুও আমি তাকে ভালোবাসবো। শুধু একটা সুযোগ চাই। শুধু একবার যদি সে বলে " আমি তোমাকে ভালোবাসি" তাহলে কল্পনারো অতিত সব জিনিসগুলো তার জন্য এনে দিব। কিন্তু সে কি বলবে?

সেই আশায় প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত কেটে যায়। আসবে কি সেই মূহুর্ত? আর যদি বলেও ফেলে তাহলে আমার অবস্থা কেমন হবে? সেসব যেন মাথা থেকে বেরোইয়ি না। আরো যদি কাজ না থাকে,  তাহলে তো মাথায় একবারে ঝেকে বসে। 

একবার ছাদে উঠে রাতের চাঁদ দেখিতেছিলাম। একটা মনোরম বাতাস। ভালোই লাগতেছিলো। প্রাণটা যেন একবারে জুরিয়ে যাচ্ছে। আমি চাঁদ দেখছি আর তারা গুণছি। তারা গোনা যেন শেষ হবার নয়। আমি চাঁদ দেখতেছি। কিন্তু একি? চাঁদে তাহমিনার মূখ যে, একি সত্যি? না এটা আমার মনের ভ্রম।  এ থেকেই বোঝা যায় আমি ওর জন্য কতটা পাগল।

এমনিভাবেই দিন যায়,  মাস যায়। কিন্তু তাকে আমি মনের কথা বলতে পারিনা। তাহলে কি এটা এইরকমই? যা ভাবার ভাবা শেষ। আমি কাল তো স্কুলে যাব।  তাহলে তখনি এবার তাকে বলবোই। এবার আর মাপ নাই। যা হবার হবে।  এভাবে আর কত দিন চলবো। এরকম করতে থাকলে আর বলাই হবে না। এবার বলতেই হবে যে করেই হোক। সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ। 

নতুন ভোর। একটু সাজুগুজু করে নেই। মেয়েদের সামনে গেলেই তো লজ্জা লাগে। ভালো ভালো জামা কাপড় পরিধান করে,  একদম আশিক বেশে চললাম পরিক্ষা দিতে। পরিক্ষা মানে প্রেমের প্রস্তাব দিতে। সেটাও এক প্রকার পরিক্ষাই বলা চলে। একদম রেডি। চললাম। 

স্কুলে পৌছালাম। রেডি তো? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করছিলাম। ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই বলতে হবে। যাই, এবার বলেই ফেলি। আবার নিজেই ভাবি,,, না এখন বলা ঠিক হবে না।  সবাই আছে সাথে। আর খুব বেস্ত। ক্লাস শেষে যখন ফ্রি থাকবে তখন বলবো। 

এই বলে ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাস শুরু হলো। আমি শুধু ওকেই দেখছি। ক্লাসের অন্যান্য মেয়েরাও যেন ওর মতোই দেখতে। এ দেখি সবাই তাহমিনা। আমার কিছুই ভালো লাগছে না।  এই মনে পড়া বসবে না।  আমার হুস নাই। আমি যেন এক অন্য জগতে হাড়িয়ে গিয়েছি। শুধু ভাবছি ক্লাস শেষ হলে তাকে কিভাবে বলবো। মনের মাঝে একটা ছক একে নিচ্ছি। শুধু ক্লাস শেষ হবে, আর আমি ওকে সাইটে ডেকে নিয়ে সব বলবো।

এভাবে চলে গেলো ৫টা ঘন্টা। কোন কোন ক্লাস হলো,  কি পড়ালো? আমার কিছুই মনে নাই। আমি যেন এক মনভূলা মানুষ। শুধু একটা চিন্তাই মনের ভিতর। সবাই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি। আমিও বই খাতা গুছিয়ে নিলাম।  এবার বলতে হবে। ঐ দেখি তাহমিনা যাচ্ছে। আমি পিছন থেকে দেখছি। আমি ওর দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছি। এবারতো বলতে হবে। মনের মধ্যে অনেক চিন্তা ঘোরাফেরা করছে। আমি তবুও সাহস করে এগিয়ে যাচ্ছি......

আমি সাহস করেই একরকম এগিয়ে যাচ্ছি। আর ভাবতেছি। বলব নাকি বলবো না? এত্তো চিন্তা মাথার ভিতর। হঠাৎ কি যেন মনে হলো। না,  বলা ঠিক হবে না। যদি অন্য কাউক ভালোবেসে থাকে, তাহলে তো আমাকে না বলে দিবে। আর এমন অবস্থা হলে আমাদের ২জনের মধ্যে একটা মন মালিন্য সৃষ্টি হবে। যা আমি কখনোই চাই না। এখন যেমন বন্ধু আছি, বন্ধু হয়েই থাকি। এমনিতেই পরে বলবো।

আরো প্রশ্ন জাগলো, আমার যোগ্যতা কি তাহমিনাকে প্রপস বা প্রস্তাব দেওয়ার? আমার কোনো যোগ্যতা আছে? আমি কি চাকরি করি? দেখতে সুন্দর? পড়াশুনা ভালো পাই? কোনোটাই না। তাহলে কোন মূখ নিয়ে বলবো? 

যেতে যেতে এত্তো প্রশ্ন জাগলো, যা বলে শেষ হবার নয়। আমি আর পা তুলতে পারছি না। আমার আর এগোনো ঠিক হবে না। আমি বলতে পারবো না। আমি ফিরে আসলাম। অন্যদিন নিজের যোগ্যতা হলে তখন বলবো। 

এভাবে মনের দূঃখ নিয়ে ফিরে আসলাম। মনের মধ্যে অজস্র দুঃখ, কান্না, ।  "বিরাট রাজা"র গাভীর পাল যেন আমার বুকের উপর দিয়ে যাচ্ছে। এই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম বন্ধুদেরতো কত জনের কত কথা। আমার সাহস নাই, ভয় পাই। যে যাই বলে বলুক। আমি আমার মতো।

বাড়িতে এসে একটা ছক আঁকলাম। কিভাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়বো,  কিভাবে ফিউচার রেডি করবো। কতো সালের মধ্যে কি করবো। কিভাবে তাহমিনাকে বিয়ে করবো। ভালোবাসায় সময় নষ্ট করার চাইতে, নিজের একটা ভালো ক্যারিয়ার গঠন করে তারপর ওর বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেব। 

অনেক দেখেছি, অনেকে অনেক প্রেম করে, কিন্তু সেই প্রেম বিয়েতে আর পরিনত হতে পারে না। প্রেম করে একজন,  জন্ম-জন্মান্তরের সাথি হয় আরেকজন। তাই প্রেমে সময় নষ্ট না করে, বিয়ের জন্য নিজেকে রেডি করুন। নিজের এমন একটা যোগ্যতা তৈরি করুন, যার জন্য মেয়ের পরিবার আপনার সাথেই বিয়ে দিতে চায়। নষ্ট করার মতো কোনো সময় আপনার বা আমার হাতে নেই।

আর আপনার ফিউচার যদি উজ্জ্বল করতে চান, তাহলে একটির উপর ভরসা করে থাকতে পারবেন না। একটি ব্যাকআপ রাখুন। শুধু পড়াশুনার উপর ভরসা করে থাকলে হবে না। এই দেশে পড়াশুনার কোনো চাকরি নাই। তবে পড়াশুনা করলে একবারে ভালো করে করেন, এবরাথেবরা পড়াশুনার কোনো দাম নাই। এরকম পড়াশুনা শুধু লোক দেখানো পড়াশুনা হবে। তাছাড়া আর কিছুই নয়।

একটা কথা মনে রাখা আপনার আমার জন্য বাঞ্চনীয়। কোনো মেয়ে আপনাকে ৩টি কারণে ভালোবাসবেঃ

১। আপনি দেখতে সুন্দর হলে।
২। আপনি পড়াশুনায় ভালো হলে।
৩। আপনার কাছে টাকা থাকলে। 

যেকোনো একটি থাকলেই আপনার সাথে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আবার যদি হঠাৎ একদিন এসব উধাও হয়ে যায়, তাহলে আবার আপনার কপাল থেকে মেয়ে উধাও। 

এসব কথা শুধু লোক শুনানো নয়। আপনি মিলিয়ে নিতে পারেন আপনার জীবনে। টাকা আছে প্রেম আছে,  টাকা নাই প্রেম নাই।

আমিতো আমার ক্যারিয়ার ট্রাক ঠিক করে নিয়েছি। আপনি নিয়েছেন তো?

Comments

    Please login to post comment. Login