Posts

নিউজ

মাহমুদ দারবিশ: ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের কবি

September 28, 2024

নিউজ ফ্যাক্টরি

ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশ। তার সাহিত্যকর্মে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম প্রতিফলিত হয়েছে। এজন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের কবি হিসেবেই বিশ্বজুড়ে তিনি সমাদৃত।

দারবিশকে ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের বাসিন্দা হানিন তারতির। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে তিনি বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের কৃষি জীবনের জন্য জলপাই গাছের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক জীবনের জন্য মাহমুদ দারবিশ গুরুত্বপূর্ণ।'    

তিনি বলেন, ‘দারবিশ সমগ্র বিশ্বে ফিলিস্তিনি জনগণের কন্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফিলিস্তিনি হিসেবে তিনি আমাদের গল্প বলেছেন। ফিলিস্তিনের স্কুলে তার কবিতাগুলো পড়ানো হতো। আর আমরা হৃদয় দিয়ে তা মুখস্ত করতাম।'    

তিনি  আরও বলেন, 'শৈশবে আমরা রামাল্লায় ছিলাম। তখন প্রতিদিনই দারবিশকে খলিল সাকাকিনি সেন্টারে তার অফিসের দিকে যেতে দেখতাম। তাকে খুবই আন্তরিক এবং ভদ্র বলে মনে হত।'     

তারতির উল্লেখ করেন, দারবিশের কবিতাগুলোকে গানে রূপান্তরিত করে এগুলোকে অমর করেছেন বিখ্যাত লেবানিজ গায়ক মার্সেল খালিফ। 

তিনি বলেন,’দারবিশের কবিতাগুলো আমাদের ফিলিস্তিনিদের কাছে মুক্তির পথে যাত্রার অংশ। তার কবিতাগুলো আমাদের প্রতিরোধের প্রতীক।' 

১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি এই কবি লিখেছিলেন ‘দোজ হু পাস বিটুইন ফ্লিটিং ওয়ার্ডস’ কবিতাটি। এই কবিতায় তিনি ফিলিস্তিনিদের ভূমি, সাগর, শস্যক্ষেত্র সবকিছু ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য দখলদার ইসরায়েলিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  

মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ ফিলিস্তিনের আল-বিরওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলি দখলদাররা তার পরিবারকে জোর করে নিজেদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। 

এক বছর পর দারবিশের পরিবার আবার ফিলিস্তিনে নিজেদের গ্রামে ফিরে আসে। কিন্তু সেখানে ততদিনে গড়ে উঠেছে নতুন ইহুদি বসতি। তাদের সহ আরো অসংখ্য ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ধ্বংস করে ইহুদিদের এই বসতি গড়ে তোলা হয়। ফলে নিজ দেশেই শরণার্থী হিসেবে বাস করতে বাধ্য হয় তার পরিবার।

মাহমুদ দারবিশ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের হাইফা শহরে ১০ বছর ছিলেন। এখানেই তিনি হাইস্কুল পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ‘আইডি কার্ড’ নামের একটি কবিতা লিখেন। 

এরপরই তিনি সকলের নজরে আসেন। এই কবিতার প্রতিটি লাইনে সেসব ফিলিস্তিনিদের কথাই তুলে ধরা হয়েছে, যারা নিজেদের দেশেই ছিলেন পরিচয়হীন।

এই কবিতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের আভিযোগ আনে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তিনি যেন হাইফা ছেড়ে যেতে না পারেন সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ১৯৬৭-৭০ সাল পর্যন্ত গৃহবন্দী ছিলেন এই কবি।  

এ সময় ইসরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে মন্তব্য, কবিতা লেখা এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বেশ কয়েকবার জেল খেটেছিলেন তিনি।

১৯৬০ সালে দারবিশ তার প্রথম কবিতা সংকলন ‘আসাফির বিলা আজনিহা’(বার্ডস উইদাউট উইংস) প্রকাশ করেন। সে সময় তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সি একজন কিশোর ছিলেন।

১৯৭০ সালে তিনি হাইফা ছেড়ে মস্কো যান। সেখানে তিনি লোমোনোসভ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি মিশরের রাজধানী কায়রো চলে আসেন। পরবর্তীকালে লেবানন, তিউনিসিয়া, ফ্রান্স এবং জর্ডানে ছিলেন তিনি। 

মাহমুদ দারবিশ প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি পিএলও’র নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ইসরায়েলের সঙ্গে পিএলও’র প্রথম অসলো চুক্তির প্রতিবাদে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। 

২০০০ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী হাইস্কুলের পাঠ্যসূচীতে দারবিশের কবিতা অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

২০০৮ সালের ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে হার্ট সার্জারির পর মারা যান এই কবি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ফিলিস্তিনের রামাল্লায় কবর দেয়া হয় তাকে। তার মৃত্যুতে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করেছিল ফিলিস্তিনবাসী।    

সূত্র: ডেইলি সাবাহ 

Comments

    Please login to post comment. Login