Posts

চিন্তা

হারানো দিনগুলো আজ কোথায়?

September 30, 2024

মোহাম্মদ সাকিব (সাকু মিয়া)

আজকের এই দিনটা গতকাল ছিলো আগামীকাল। আগামীকাল আবার এই দিন হয়ে যাবে গতকাল।
আজ যেমন গতবছরের স্মৃতি মনে পরছে। তেমনি আগামী বছর এই বছরের স্মৃতি মনে পরবে।

আজ যেমন অতিতের স্মৃতি মনে পরে আফসোস হচ্ছে। মনে হচ্ছে হাড়িয়ে ফেললাম সোনার দিন। কাল আরও আফসোস হবে। মনে পরার এই তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

এ কেমন নিয়ম? যতো দিন যাচ্ছে সময়গুলোকে নিরামিষ মনে হচ্ছে। স্বাদ হাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিলোনা।

২০২৮-৩০ সাল কল্পনা করতেই চোখের সামনে ভেসে আসছে জীবনের এক ভয়াবহ সময়। যেই জীবনে রঙের ছোয়া নেই। একদম সাদাকালো।  আশেপাশে বন্ধুবান্ধব নেই। পরিজন নেই। একদম একা একটা মানুষ।

২০৩৪ সাল কল্পনা করতেই চোখে ভেসে ওঠে আজকের রাতের মতোই নীরব এক নিশি রাত। যেই রাতে একা একা বসে বসে অতিত কল্পনা করে মন খারাপ করছি। 
কেমন যেনো শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ভাবতে গেলে।

যতো দিন যাচ্ছে ততো স্মৃতি বারছে। বয়স বারছে। রঙিন দিনগুলো অতিতে পরিনত হচ্ছে। এভাবেই দিনদিন মৃত্যুর কোলে ঢেলে পড়ছি। একদিন এমন সময় আসবে। মৃত্যুর ফেরেশতা দরজা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিবে। তখন জীবনের সব স্মৃতি তখন একসাথে জেগে উঠবে। তখন নিজের পুরো জীবনটাকেই স্মৃতি মনে হবে। সবার সাথে কাটানো সকল রঙিন স্মৃতি মনে পড়ে যাবে সেই মুহুর্তে।

ভাবতেই আমার কেমন যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি একজন স্মৃতিকাতর মানুষ। শুধু আমি না। আমার মতো আরও অনেকেই এমন স্মৃতিকাতর।

ছোট্টবেলার স্মৃতি যাওয়ার সাথে সাথে আরও স্মৃতি জাগলো কৈশবকালের। মেসেঞ্জার ঘেটে পুরনো বন্ধুদের খুজলাম। অনেক কষ্টে তাদের খুজে পেয়ে রাতের পর রাত কথা বলে তৈরি করলাম আরও কিছু স্মৃতি। এরপর আফসোসের পরিমান আরও বেরে গেলো।

খুব মনে পরছে সেই সোনার দিনগুলোকে।
কোথায় সেই ছোট্টবেলা? কোথায় আমার লাটিম খেলা,  কোথায় হারালো আমার ছোট্টবেলার আনন্দ? এইতো সেদিন সকালবেলা স্কুল ফাকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ঘুড়ে এলাম।
সেদিন না মাকে বললাম আরেকটু ঘুমাই মা পেট ব্যাথা করছে আজ স্কুলে যাবোনা।
সেদিনই তো টিভির পর্দায় টম এন্ড জেরির মারামারি দেখলাম। দিনগুলো কীভাবে চলে গেলো টেরই পেলাম না।

চোখের সামনে এখনও ভাসছে শীতের সেই সন্ধ্যাটা যখন বন্ধুরা মিলে রাস্তার মাঝে ব্যাডমিন্টন খেলতাম।
সেদিনই না মায়ের সাথে নানাবাড়ি ঘুড়ে এলাম? নানি হাতের মধ্যে ১০০ টাকার একটা নোট দিলো। সেই নানি আজ কোথায়? সেও কবরে চলে গেছে। 
সময়গুলো এতো নিষ্ঠুর কেনো? উপভোগ করার আগেই চলে যায়। এক মুহুর্ত দেরী করেনা। শৈশব কি তা বুঝে ওঠার আগেই শৈশব হারিয়ে গেলো।

কেউ কি আমাকে আমার হারানো ছোট্টবেলার সন্ধান দিতে পারবেন?
কোথায় সেই ছোট্টবেলা? কোথায় সেই ভিডিও গেমসের দোকান? যেখানে ৫ টাকা দিয়ে ২০ মিনিট ভাইস সিটি খেলা  যেতো। কোথায় সেই লাটিমের দোকান? যেখানে ৫ টাকা দিয়ে লাটিম কিনে বিকেলগুলো উপভোগ করা যেতো। কোথায় সেই ঘুড়ির দোকান? যেখানে ৫ টাকা দিয়ে ঘুড়ি ৫০ টাকার সুতো আর ৮০ টাকার নাটাই কিনে বিকেলগুলোকে রঙিন করা যেতো? কোথায় সেই শেষ বিকেলের আলো? যখন বাসায় যাওয়ার তাগিদায় বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে ফুরফুরে মনে বাসায় ঢুকতাম। কোথায় সেই শীতের রাত? যখন নানাবাড়ির মামাতো ভাই-বোনদের সাথে এক হয়ে খাতায় একে চোর পুলিশ খেলতাম।
কোথায় সেই জোনাকির রাত? যখন জোনাকির দলেরা দলবদ্ধ হয়ে খোলা মাঠে উড়ে বেড়াতো? কিছুই তো আজ দেখছিনা। আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। চোখের ওপর ভেসে উঠছে রঙিন কিছু ছবি। যা ক্যাপচার করা হয়েছে স্মৃতির ক্যামেরা দিয়ে। 
প্রতিটা ক্ষনে একটাই কথা ভাবি ছোট্টবেলা কি আর ফিরে পাবোনা? আর কি ফিরে আসবেনা সেই সময়? আমি কি আসলেই বড় হয়ে গেছি? বারবার আয়নায় গিয়ে দেখি। মুখে এখন দাড়ি গজিয়েছে। সেই ছোট্ট আমিটি এখন আর নেই। নিষ্ঠুর প্রকৃতি আমার শৈশব কেরে নিয়েছে। দিয়েছে অজস্র বেদনা। মনের মাঝে একটা গান বারবার বেজে উঠছে।
' কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার
বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার
বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভীড়
হারানোর তালিকায়'


- মোহাম্মদ সাকিব (সাকু মিয়া)
 

Comments

    Please login to post comment. Login