Posts

সমালোচনা

ক্যাডার

September 30, 2024

রাকিবুল ইসলাম

Original Author আজিজুল_হক_শাওন

66
View

বউ এর বিসিএস এডমিন ক্যাডারের রেজাল্ট দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো; পুরো বাংলাদেশে ৩য় স্থান দখল করেছে সে। বউ রেজাল্ট দেখতে রোল নাম্বার দিয়েছিল; কিন্তু এতটা যে অবাক হবো তা ভাবি নি। আমার মত একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের বউ এর এমন রেজাল্ট, সত্যিই অবাকের বিষয়।

__

আমার বউ সুপ্তি। তাকে বিয়ে করেছি বছর দু'য়েক হল। আমাদের লাভ ম্যারেজ ছিল। পুরো একবছর চুটিয়ে প্রেম করে তারপর দুজনে বিয়ে করেছি।

অনেক চেষ্টা তদবীরের পর একটা চাকরী জুটেছিল আমার; যার সুবাদে তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে পারি।নইলে কি আমার মতো ছেলের, সুপ্তির মতো মেয়ে জুটে! আজ দুইবছর তার স্বপ্ন বাস্তব করতে তার সকল সহযোগীতা করেছি আমি। এমন কি বেবিও কন্সিভ করেনি আমরা। দেশের প্রায় বিসিএস কোচিং সেন্টার ওকে কোচিং করিয়েছি। যাতে তার টার্গেটটা ঠিক থাকে।

তার পড়ার প্রবলেম হবে, তাই নিজে রান্না করতাম।

তার কাপড়-চোপড় সব কিছু প্রায়সময় আমিই ধুয়ে দিতাম।

তার কোনো কিছুতেই কমতি রাখেনি। আজ তার এমন রেজাল্ট দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।

মনে হচ্ছে আমি জয়ী হয়েছি।

ছোটবেলা থেকে আমারও স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। কিন্তু সব ইচ্ছে কি আর সত্যি হয়!

তবুও নামে মাত্র লুকিয়ে এক্সাম এতদিন দিচ্ছিলাম।

এই বছর টা আমার বিসিএসের লাস্ট বছর ছিল। সুপ্তির অজান্তেই লুকিয়ে এক্সাম দিয়েছিলাম।

কিন্তু আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

আমার বিসিএস হয়নি তো কি হয়েছে; আমার বউ এর তো হয়েছে। একজন বিসিএস ক্যাডারের হাজবেন্ড শুনতে খুব ভালো লাগবে আমার। যা ভাবতেই ভালো লাগছে।

__

বাজার থেকে সবচেয়ে দামী মিষ্টি কিনে এনে সুপ্তিকে দিলাম।

সুপ্তি বলল: কী ব্যাপার! আজ মিষ্টি!

আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম: আমার বউ যে এখন এডমিন ক্যাডার। সে পুরো বাংলাদেশেই ৩য় হয়েছে।মিষ্টি কি তার প্রাপ্য না?

সে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে করতে শক্ত করে, জড়িয়ে ধরল।

আমাকে বুকে টেনে বলল: আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে নিলয়! তোমাকে অনেক ধন্যবাদ যে,আমার পাশে ছিলে।তুমি ছাড়া এই সাফল্য চিন্তায় করা যায় না।

আমি বললাম: আমি ক্যাডার হয়নি কিন্তু তোমার মাঝে আমার স্বপ্নকে বাস্তবিত দেখতে পাচ্ছি এখন।ভালবাসি তোমায়।

দুজনেই জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম।

এই কান্না দুঃখের নয়; চির সুখের।।।

সকাল বেলা....

ঘুম থেকে উঠে দেখি, সুপ্তি কাপড়-চোপড় গুচাচ্ছে।আমি তাকে প্রশ্ন করলাম: এত সকাল-সকাল কাপড় বের করছো কেন? বাবার বাড়ি যাবে নাকি?

সুপ্তি জবাব দিলো: হুমম।

আমি বললাম: শুনে খুব ভালো লাগলো।আমার ক্যাডার বউ যে, মা-বাবার দুয়া নিতে ভুলেনি।

কিন্তু লক্ষ্য করলাম, সে শুধু তার কাপড়-চোপড় ই নিলো।আমার কোনো জামা নিলো না।তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম: কি গো! আমার কাপড়-চোপড় নিলা না যে..?

সুপ্তির কোনো উত্তর পেলাম না। মিনিট কয়েক পর,

সে ব্যাগটা একপাশে রেখে আমার পাশে বসল।আমার মাথায় চুলে পরশ বুলতে বুলতে বললঃ দেখো, নিলয়!তুমি অনেক ভালো হাজবেন্ড।তোমার মতো হাজবেন্ড পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।

আমি বললাম: তোমার মতো ক্যাডার বউ পাওয়াও আমার অনেক ভাগ্যের ব্যাপার!

সুপ্তি হালকা থেমে, গম্ভীর হয়ে বলল: আসলে...তুমি প্রাইমারী স্কুলের দুই টাকার শিক্ষক আর আমি একজন এখন বিসিএস ক্যাডার! আমাদেরকে সমাজের মানুষরা তা অন্য চোখে দেখবে! তাই...

কথাটা শুনে আমার মাথা ঘুরিয়ে উঠলো। দু'চোখ অন্ধকার হয়ে গেলো। চোখে পানি টলমল করতে লাগল। নিজের পানিকে বেঁধে রেখে বললাম: তো?

সুপ্তি মার্জিত কন্ঠে বলল: দেখো। তোমার সাথে,যায় না আমার। তাই আমি বলছিলাম কি আমাদের ডিভোর্স হলে ভালো হবে! আর তুমি তো জানো! ক্যাডার হাজবেন্ড পাওয়াও আমার অনেকদিনের ইচ্ছা!

অন্তত আমার একজন ক্যাডার হাজবেন্ড পেলে, দুজনের পাল্লা সমান হবে; আর ক্যাডার হাজবেন্ড-ওয়াইফ দুজনকে মানাবেও ভালো।।। কী বলো?

আমার চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগলো।

পানি মুছতে মুছতে বললাম: সত্যি বলেছো। আমাদের ডিভোর্স হলেই বেশ হবে! কোথায় তুমি আর কোথায় আমি! প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক আর একজন ক্যাডার কখনোই মিলে না। তবে, তোমাকে পুরোজীবনই আমি ভালোবেসে যাবো। তবে একটা রিকুয়েস্ট রাখবে?

সুপ্তি খুশি মনে বলল: কি টাকা লাগবে?

আমি বললাম: না! তোমাকে মাঝে-মাঝে দেখতে চাইলে, দেখা দিবে তো?

সুপ্তি বললঃ দেখো...দেখা যাওয়া কি যাবে? আমার সাথে দেখা করতেও তোমার পারমিশন লাগবে।

আর কেউ যদি আমাদের আগের সম্পর্কটা জেনে যায়, তা হলেও তো আমার মান-ইজ্জত ক্ষুন্ন হবে। তার চেয়ে বরং তোমার খুব মনে পড়লে, আমার ফটো দেখে নিও।ও হ্যাঁ...একসপ্তাহের মধ্যেই আমাদের ডিভোর্স লেটার চলে আসবে।প্লিজ! আমার কথা চিন্তা করে, লেটারে সই দিয়ে দিও। আসি...

আমি বললাম: ওকে যাও। ডিভোর্স লেটার পাঁঠিয়ে দিবো। তোমাকে কোনো কষ্ট করতে হবে না!

তবে, যাওয়ার আগে আমার একটা কথা শুনে যাও।

সুপ্তি বলল: হ্যাঁ।তাড়াতাড়ি বলো।এখানে থাকতেই অস্বস্তি লাগছে।

আমি বললাম: আসলে,তুমি হয়তো কাল কে রাতে ভুল শুনেছো!

সুপ্তি বললঃ কী ভুল!

আমি বললাম: এডমিন ক্যাডার তুমি হও নি,আমি হয়েছি!

সুপ্তি বলল: কি?

আমি বললাম: ভাবলাম, তোকে একটু পরীক্ষা করি!আমার জায়গায় তুই থাকলে কি করতি। কিন্তু,তুই কতটা স্বার্থপর আমি বুঝে গেছি। তোর মতো মেয়ে এখন আমার থুথু খাওয়ারও যোগ্য না। ভাগ আমার সামনে থেকে...

পরে, সে আমার পায়ে ধরে অনেক কান্না কাটি করল।মাফ চাইল।

সুপ্তির ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বললামঃ চুপ! একদম চুপ।ক্যাডারের সাথে ক্যাডারি মানায়; তোর মতো স্বার্থপর মেয়েদেরকে না!!

, কান্না করে খুব মাফ চাইল সে।

কিন্তু, মাফ করতে পারলাম না!

কারণ, একবার সম্পর্ক ভাঙলে তা আর কখনো জোড়া লাগানো যায় না।তাই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে 'সুপ্তিকে ঘর থেকে আর মন থেকে বের করে দিলাম।

এমন মেয়েদের বুকে নয়; পায়ে স্থান দিতে হয়।

সমাপ্ত

.

Comments

    Please login to post comment. Login