যারা সামহোয়ারইনব্লগ এ ছিলেন তাদের মনে আছে কি না জানি না ২০০৯ সালে আমরা হি&যবুত তাহরীর নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করি।সেকালে আমাদের হাতে ছিল হি&যবুতের ২০০৪ সালে বের হওয়া পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্রের বাংলা অনুবাদ।৯টি অধ্যায়ে ভাগ করা এ গঠনতন্ত্রটি আরবীতে লেখা এবং পরে বাংলায় অনুবাদ করা হয়।
তারা পুস্তকের প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখে "হি&যবুত তাহরীর এমন এক রাজনৈতিক আন্দোলন,পূর্ণাঙ্গ ইসলাম চিন্তাই যার দেহের একমাত্র আত্মা।ইসলামই তার মূল কথা এবং ইসলামী চেতনাই তার জীবন রহস্য।"
এ দলটি সুরা আল ইমরান এর উপর জোর দেয় যেখানে লেখা "তোমাদের মাঝে এমন একটি দল থাকা উচিৎ,যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দিবে আর অসৎ কাজ নিষেধ করবে এবং এরাই সফলকাম"।মুসলিম উম্মাহকে চরম অধঃপতিত অবস্থা থেকে উদ্ধার,কুফরি চিন্তা-ব্যবস্থা-বিধি বিধান,কুফর রাষ্ট্রের প্রভাব মুক্ত হতে হলে খিলাফত পুন:প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।
ইসলাম ব্যতীত অন্য যে কোন মতাদর্শ আছে পুঁজিবাদ,কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র,জাতীয়তাবাদ,গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা,অসাম্প্রদায়িকতা,ব্যক্তিস্বাধীনতা সব মানব স্বভাব পরিপন্থী,ইসলাম পরিপন্থী-তাই এসব হারাম।
হি&যবুতীদের মতে আজকে আমরা যে দেশে বসবাস করি এগুলো নীতিগতভাবে দারুল কুফর।কারণ এখানে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও কাফেরদের চিন্তা,বিধি-বিধান ও কুফরী শাসন ব্যবস্থাই কার্যকর যার সাথে তুলনা চলে নবী(স:) নবুয়ত প্রাপ্তির পর মক্বায় অবস্থানের সাথে।তাই আমাদেরকে এ সময়ে নবী(স:) এর মক্কী সময়ের মতো দাওয়াত ও রাজনৈতিক কার্যক্রমই চালাতে হবে, কোন সশস্ত্র তৎপরতা করা যাবে না।দারুল কুফরকে দারুল ইসলামে নিতে হলে জনগণের মধ্যে বিদ্যমান চিন্তা,অনুভূতি এবং প্রচলিত রাষ্ট্রকাঠামোকে পুরোপুরি পরিবর্তন করতে হবে।কারণ নবী(স:) ইরশাদ করেন " যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল যে,তার কাঁধে (কোন খলীফার) বাই'আত নেই,সে যেন জাহেলী মরণ মরল",এই খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্যই হি&যবুত তাহরীর গঠিত হয়েছে।
হি&যবুত নবী(স:) এর মক্বী জীবনের কৌশল অবলম্বন করবে এবং মদীনায় যেভাবে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে তরিকায় এগোবে।এ সংগঠনের সদস্যদের হালাকা বা পাঠচক্র থাকবে।মহিলাদের হালাকা পুরুষদের থেকে পৃথক হবে।তারা রাজনৈতিক সংগ্রাম ও চিন্তার লড়াই এই দুই কাজে লিপ্ত থাকবে।
তারা ১ম পর্যায়ে দল গঠন করবে,
২য় পর্যায়ে গণ আন্দোলন সৃষ্টি করবে,
৩য় পর্যায়ে শাসন কর্তৃত্ব লাভের মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করবে এবং বিশ্বব্যাপী এর দাওয়াত পৌঁছে দিবে।
কুদস অঞ্চলে ১৯৫৩ সালে নাবাহানী এ সংগঠনের গোড়াপত্তন করেন।মানু্ষকে প্রথমে হালাকায়ে দরস বা পাঠচক্রে শামিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।এ পাঠচক্রের মাধ্যমে মানুষের আকলিয়াহ (জ্ঞান-বুদ্ধি) ও নফসিয়াহ(মন মানসিকতা) ইসলামী করে তোলা হয়।এ পাঠচক্রে তিন বছর সাফল্যের সাথে থাকলে জামাআতে শামিল করে দীনি তালিম শুরু হয়।
তিনটি পর্যায় সম্পন্ন হলে শুরু হয় শরীয়া বিধি বিধান মোতাবেক জনগণের স্বার্থের বিষয়াদি দেখভাল করা।তারা বিশ্বাস করে 'অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদের উপেক্ষা কর'।যাই ইসলামের নীতির বাইরে তাই হি&যবুত চ্যালেঞ্জ করবে তাতে যদি এর সদস্যদের গ্রেফতার,শারীরিক নির্যাতনও সহ্য করতে হয় তাও মেনে নিতে হবে।জর্ডান,ইরাক,মিশর,লিবিয়া,উজবেকিস্তান,তাজিকিস্তান,তিওনিসিয়া,যুক্তরাজ্য,তুরস্ক ইত্যাদি দেশ তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তারা তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।জিহাদ তারা মনে করে কিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে।তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য দরকারে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী লোকদের ব্যবহার করবে।
ইসলামী আকিদা
শরীয়া
শরীয়ার পরিভাষা
বাস্তব বিষয়ের সংজ্ঞা
চিন্তা
সমাজ
গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদ,সমাজতন্ত্র কুফরী ব্যবস্থা
ইসলাম ধর্ম
ইত্যাদি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা আছে এ গঠনতন্ত্রে।তারা নবী(স:) কে উদ্ধৃত করে বলছে 'যে তার দ্বীন পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর'
ইসলামে ব্যক্তিস্বাধীনতা,মালিকানা,মত প্রকাশ এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই।পৃষ্ঠা ৪০ এ হি&যবুত বলে প্রতি মুসলমান ব্যক্তিজীবনে শরীয়ার অধীন।
☞মহিলারা যদি বেপর্দা অবস্থায় বাইরে চলা ফেরা করে,তাহলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।'মুসলিম উম্মাহর কোন সার্বভৌমত্ব নেই,কারণ সকল সার্বভৌমত্ব শুধু ইসলামী শরীয়া তথা আল্লাহর।
ইসলাম বলেছে বস্তু হচ্ছে সৃষ্টি আর সমাজতন্ত্র বস্তুবাদী মতবাদ।এটা 'আযলী' বা অনাদি-অনন্ত নয়।এ ব্যবস্থা আল্লাহর তরফ থেকে না আসায় সমাজতন্ত্রও পরিত্যাজ্য।
যেসব বস্তু তৈরী বা ব্যবহারে ইসলামী আকিদার সাথে কোন বৈপরীত্য নেই তা ব্যবহার করা জায়েজ যেমন কম্পিউটার,মোবাইল ফোন ইত্যাদি।একমাত্র শাসন ব্যবস্থা খেলাফত এবং শাসক খলীফা;
নবী(স:) ইরশাদ করেন "বনী ইসরাঈলের সিয়াসাত (তত্ত্বাবধান) করতেন নবীগণ।যখন এক নবী চলে যেতেন অপর নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন।আমার পর আর কোন নবী আসবেনা বরং অনেক সংখ্যক খলীফা হবেন"
"যদি দুই খলীফার বাইআত নেয়া হয়,তাহলে তোমরা দ্বিতীয় জনকে হত্যা কর"।
খিলাফত ব্যবস্থায় প্রধান নির্বাহী থাকেন খলীফা,তিনি সরাসরি আদেশ জারি করেন,কার্যকর করেন,তার সাথে শাসনকর্তা হিসেবে কোন মন্ত্রীসভা থাকে না।প্রশাসন থাকে সহযোগী হিসেবে।
সরকারের কাঠামো
✔খলীফা
✔প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী
✔নির্বাহী সহযোগী
✔আমীরে জিহাদ
✔গভর্নরবৃন্দ
✔বিচার বিভাগ
✔প্রশাসনিক বিভাগ
✔মজলিসুল উম্মাহ
✔সেনাবাহিনী
হি&যবুত তাহরীর অর্থনীতি বিষয়ে 'ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা' গ্রন্থে পুঁজিবাদ,সমাজতন্ত্র নিয়ে কুফর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মন্দ দিক তুলে ধরেছে।শিক্ষা নীতি হবে ইসলামী আকিদা ভিত্তিক।
➤হয়তো এতক্ষণে ভাবছেন কেন এতকিছু লিখেছি;কারণ
দেখবেন এত লম্বা লেখায় নারী নীতি নিয়ে কিছু বলিনি,আদিবাসী,ভিন্ন ধর্মাবলম্বী,ভিন্ন জেন্ডার পরিচয়ের কাউকে নিয়ে কোন মন্তব্য করিনি।
কারণ পুরুষ ও মুসলমান ছাড়া শরীয়াতে আর কারও কোন এক্সিস্টেন্স স্বীকার করা হয় না।হি&যবুতও এর বাইরে নয়।গুগলের যুগে,ফেসবুক শাসিত সমাজে সব অনলাইনে পাবেন।
দেশের সেনা থেকে শুরু করে সর্বত্র কিভাবে এদের দৌরাত্ম্য বিরাজমান সেই আফগানিস্তানে মুজাহিদিন হিসেবে ট্রেনিং নেয়ার পর থেকে সে বিষয়েও বোধিপ্রাপ্ত হবেন আগ্রহ থাকলে।
আমার এ লেখার মূল উদ্দেশ্য শুধু এটুকুই কোন চরম রাইটিস্ট সংগঠন নারীদের কোন ছাড় দিবে দীর্ঘমেয়াদে তা ভাবা ভুল।হি&যবুতের বাংলাদেশে কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ার পর থেকে যা দেখা যায় তা হলো তারা অরাজনৈতিক সেনা সমর্থিত সরকার যখনই ছিল তখনই নানা শোডাউন করেছে।
নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করতে পারেন আপনার আমার চেয়েও যেসব দেশ অনেক বেশি বেশি ইসলামী তারাও কেন এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে?খুঁজেন,খুঁজে পড়েন।নারীরা ধারাবাহিকভাবে আফগানিস্তান,ইরাক,সিরিয়া,ইরান,পাকিস্তান এসব দেশে নারীর অবস্থান পর্যালোচনাও করতে পারেন।
দেশ আক্রান্ত।সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা,রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার ভিন্ন এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সুদূর পরাহত আর যে কোন চরমপন্থী রাষ্ট্রব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মূল্য চুকায় নারী ও শিশুরা কারণ পুরুষ প্রণীত ধর্মীয় ব্যবস্থার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে পুরুষ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এবং ধর্মীয় দিক থেকে আরও ক্ষমতায়িত হয়।তাই পুরুষের হি&যবুত জামাত শি&বির জঙ্গী কেউ ক্ষমতায় এলে কিছুই যায় আসে না।
বিবিধ লিংক
১. https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/shudro/29032767
২. https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Habibfprblog/29077055
৩.https://www.risingbd.com/politics-news/63154
৪.https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/%E0%A6%9C%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A6%BF
৫.https://ht-bangladesh.info/books/Ban-Hizb-ut-Tahrir.pdf [এটা হি&যবুতের নিজের করা গঠনতন্ত্র]