'মুজিব ব্যবসায়ী' বলে একটা প্রজাতি তৈরি হয়েছিল আওয়ামী রেজিমে। শিল্প ও সাহিত্যাঙ্গনে এটি অতিমারির মতো দেখা গেছে। মুজিব আদর্শের ছিটেফোঁটা ধারণ না করেও নানা বাহানা ও চাতুরিতে শেখ হাসিনার কাছে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন তারাই মুজিবের আসল ভাবশিষ্য এবং যত্তসব প্রকল্প ও অর্থলোপাটের কায়কারবারগুলো পাওয়ার অধিকার তাদেরই একার। পেয়েছেনও। তাদের কিছু স্তাবক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল, যারা কবি নজরুলের সাহেব ও মোসাহেব কবিতার মতো 'চমৎকার সে হতেই হবে যে! হুজুরের মতে অমত কার?' বলতে বলতে ফেসবুক টাইমলাইনে ফেণা তুলে ফেলতেন।
গণ-আন্দোলনে ৫ আগস্ট পলিটিক্যাল রেজিম চেঞ্জিং এর পর গিরগিটিকে টেক্কা দিয়ে এই গ্রুপটাই সবার আগে রঙ বদলে নিয়েছে। কেউ কেউ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে তত্ত্ব ফলাচ্ছে। ৩২ নাম্বারে আগুন, বঙ্গবন্ধুর মাথার ওপর 'পি' করা নিয়ে একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের করেনি। যতই আমরা রিসেটের গল্প শুনি অতীত তো মুছে ফেলা যায় না। অন্যায় অর্জনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে এখন কেউ কেউ কট খাচ্ছেন। কিন্তু শুভার্থী কাউকে পাশে পাচ্ছেন না। কী ভুলে ভরা জীবন!
ব্যক্তিগত আদর্শ থাকলে
আপনি বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ, চরমোনাই, হেফাজত, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শামিল হন কিংবা নির্দল থাকেন; যা খুশি করেন কোনো ব্যাপার না। যখনই আপনি আদর্শ নিয়ে বাণিজ্যে লিপ্ত হবেন 'জেরার মুখে' পড়বেনই টুডে অর টুমরো।
আমার আশেপাশেও আমি ওই নিম্ন রুচির মুজিব ব্যবসায়ীদের দেখতে পাই। তারা পারলে এখন বিএনপি'র টয়লেট পরিষ্কার করে দিতেও রাজি। ভাবটা এমন লাত্থিগোতা যাই দিস, শুধু হালুয়া রুটির সামান্য হলেও ভাগটা দিস রে ভাই! প্রাতিষ্ঠানিক ও সংঘবদ্ধ গুটিবাজি ঠিক রাখতে আমরা আগে যেমন তোদেরকেও দিয়েথুয়ে খেতাম রে!
সমস্যাটা আদর্শগত নয়।
খেয়াল করলেই দেখবেন আগে যেমন মুজিব বাণিজ্য চলত, কিছু বদবখত মেজর জিয়ার জাতীয়তাবাদী আদর্শ অন্তরে এতটুকু ধারণ না করেও এখন জিয়া বাণিজ্যের পসরা সাজিয়ে বসবে, বই লিখবে, ভাষণ দেবে। অধ্যাপক অসীম বিভাকর যেমনটা বলেন, ‘ভিখারি সব আমলেই ভিখারি। অন্যের দয়ায় যাদের জীবন তারা সবসময়ই দয়ার জন্য কাতর থাকে।’
এই বিষয়টির স্পষ্ট নজির মেলে দেশের গণমাধ্যমগুলোর দিকে তাকালেও। আগে যারা আওয়ামী রেজিমকে তোষামোদ করে ফায়দা লুটেছে এখন তাদেরকে নতুন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ভিত্তিমূল ও শক্তিমত্তায় স্বাধীন ও দল নিরপেক্ষ থাকলে কাউকে তোয়াজ করবার বাজে জীবন বরণ করতে হয় না।
এইসব তথাকথিত ‘আদর্শ’ কারবারিদের যারা বিভোল হয়ে আগলে রাখেন, অন্যায় ও অন্যায্য সুবিধা নিশ্চিত করেন; আত্মসম্মান বিকিয়ে দিতে না চাইলে ওই লিডাররা অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
-ফারদিন ফেরদৌস
০২ অক্টোবর ২০২৪