Posts

প্রবন্ধ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ও তার ফলাফল।

October 3, 2024

Rocky Meraz

Original Author রকি মেরাজ

পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানি সেনা ও আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালে গণযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এ যুদ্ধে বাংলাদেশ জয় লাভ করে। এই গণযুদ্ধের আকাঙ্খা ছিল বেসামরিক ও সিভিল শাসন প্রতিষ্ঠা করা। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে দীর্ঘ ১৮ বছরই  প্রত্যক্ষ সেনাশাসনে আটকে ছিল বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারন কি ছিল?

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ। তৃতীয় বিশ্ব ও উন্নয়নশীল দেশ গুলোর রাজনীতিতে সেনা অভুত্থান নতুন কিছু নয়। তবে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সদ্য স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক মহলের অসতর্কতা, সেনাবাহিনীর ক্ষমতার মোহ, বিশ্ব পুঁজিবাদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। 

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পর ই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হয়। নতুন রাজনৈতিক ব্যাবস্থা প্রণয়ন, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত অর্থনৈতি পুনর্গঠন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব ও স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা সমগ্র দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্য ও পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা সেনা সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্ব শুরু হয় তৎকালীন সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ দিয়ে। সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণে সেনাবাহিনী ক্ষুদ্ধ হয় এবং অভুত্থান ঘটায়।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশে পাঁচটি সেনা অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল তার হাতে ধরেই পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান এবং পাল্টা-অভ্যুত্থান হয়। এসব অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশ নিমজ্জিত ছিল সামরিক শাসনের মধ্যে। প্রতিটি ঘটনার প্রভাব রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর উপর ছিল বেশ সুদূরপ্রসারী। যা বদলে দেয় বাংলাদেশের রাজনীতিকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের ফলাফল।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের সামরিক শাসকরা তাদের শাসনকে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের কাল হিসেবে বর্ণনা করেন। বস্তুত সামরিক শাসনকালে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনগণের আশার প্রতিফলন ঘটে না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপ কখনোই ভাল ফলাফল বইয়ে আনতে পারেনি। আমাদের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সামরিক শাসকরা কোন ভূমিকা রাখতে পারেন নি। উল্টো রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহ দূর্বল হয়েছে। বারবার সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। সামরিক ব্যায় বেড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামরিক শাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় লালফিতার দৌরাত্ম্যে বেড়েছে। প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। দূর্নিতির প্রসার ঘটেছে। দেশের আর্থ সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই দূর্দশা বেড়েছে। আাইনের শাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। এবং বার বার বহুল প্রতিক্ষিত গণতন্ত্র পদদলিত হয়েছে।

Comments

    Please login to post comment. Login