আমাদের গ্রামে সময় নাকি অন্যভাবে চলে। কখনো দ্রুত, কখনো ধীর, কখনো আবার থেমে যায়। ঘড়ির কাঁটায় সময় মাপা যায় না এখানে। বৃষ্টির পর মাটির গন্ধে, আম গাছের ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে, ঝিঁঝির ডাকে সময়ের হিসেব রাখে গ্রামের মানুষ।
এই গ্রামেই থাকে এক অদ্ভুত মানুষ, নাম তার মোবারক। মোবারকের বয়স কত, কেউ বলতে পারে না। কেউ বলে সে শতবর্ষী, কেউ আবার বলে সে অমর। মোবারকের একটা ছোট্ট ঘড়ির দোকান আছে, যেখানে নানা রকমের ঘড়ি সাজানো থাকে। কিন্তু কোনো ঘড়িই ঠিক সময় দেয় না।
একদিন এক যুবক মোবারকের দোকানে আসে। তার হাতে একটা দামী ঘড়ি, যেটা নাকি কখনো ভুল সময় দেয় না। যুবক মোবারককে বলল, “আপনার দোকানের সব ঘড়িই তো নষ্ট। এগুলো কি বিক্রি হয়?”
মোবারক হেসে বলল, “এই ঘড়িগুলো সময় দেখায় না, সময় ধরে রাখে।”
যুবক অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “সময় ধরে রাখে মানে?”
মোবারক একটা পুরোনো ঘড়ি হাতে নিয়ে বলল, “এই ঘড়িটা দেখো। এটা আমার দাদুর। এই ঘড়িতে তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি আটকা পড়ে আছে। যখনই আমি এই ঘড়িটার দিকে তাকাই, তখন আমি যেন আমার দাদুর সাথে কাটানো সেই সুন্দর দিনগুলোতে ফিরে যাই।”
যুবক কিছু বলতে পারে না। মোবারক আবার বলল, “তোমার ঘড়িটা ঠিক সময় দেখায়, কিন্তু তোমার জীবনের কোনো স্মৃতি কি এতে ধরা আছে? সময় শুধু মাপলে হয় না, সময়কে বেঁচে থাকতে হয়, অনুভব করতে হয়।”
যুবক চুপ করে মোবারকের কথা শুনতে থাকে। তার মনে হয়, যেন সে জীবনে প্রথমবারের মতো সময়ের আসল মানে বুঝতে পারছে। সে তার দামী ঘড়িটা খুলে মোবারকের হাতে দিয়ে বলে, “এই ঘড়িটা আপনার দোকানে রাখুন। হয়তো কেউ এসে এই ঘড়িটার মাধ্যমে তার হারিয়ে যাওয়া সময়ের খোঁজ পাবে।”
মোবারক হেসে যুবকের ঘড়িটা তার দোকানের অন্য ঘড়িগুলোর সাথে রেখে দেয়। দোকানের দেয়ালে থাকা নানা রকমের ঘড়ি যেন তখন নীরবে গান গাইছে, হারিয়ে যাওয়া সময়ের গান, বেঁচে থাকা স্মৃতির গান।