পোস্টস

সমালোচনা

ঠিকানায় ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহফুজ আলম

৯ অক্টোবর ২০২৪

ফারদিন ফেরদৌস

সাংবাদিক খালেদমুহিউদ্দীন ভাইয়ের প্রশ্ন ফেস করতে পারাটাও ভীষণ আনন্দের। রিসেট বাটন, হিজবুত তাহরীর, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, সংবিধান সংশোধন ও ইন্টেরিম গভমেন্টের টাইমিং নিয়ে চিফ অ্যাডভাইজারের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের প্রাণবন্ত আলোচনা উপভোগ করলাম।

ঠিকানায় জনাব আলম বলছিলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে আওয়ামী লীগের আইডিওলজি প্রতিফলিত হয়েছে, তাই তিপ্পান্ন বছরের দেশ শাসন কার্যত ছিল আওয়ামী ফিলোসফি বেসিস। যেটায় সর্বজনের ইচ্ছা প্রাধান্য পায়নি।

এটা তো খুব স্বাভাবিক আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সেসময় বড় একটা জনযুদ্ধে জিতে এসেছিল। এবং সেই যুদ্ধটার মূল ভিত্তি ছিল আওয়ামী লীগের মস্তিষ্কপ্রসূত ৬ দফা। তো আওয়ামী আইডিওলজি সংবিধানে স্থান না দিয়ে কোন গ্রহ থেকে তারা ফিলোসফি ধার করবে?

একাত্তরের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গণযুদ্ধ ছিল সীমানা নিশ্চিতকরণ, জাতীয়তাবাদ নির্ধারন এবং সার্বভৌম একটি নতুন দেশ বিনির্মাণের বৃহদায়তনের সংগ্রাম। যেটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। পক্ষান্তরে ২০২৪ ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে একটি ফ্যা'সিস্ট শাসককে সরিয়ে দেয়ার গণ-আন্দোলন। একাত্তর ও দুই হাজার চব্বিশ যদি তুল্যমূল্যে বিচার্য হয় কোনটার ভার বা তাৎপর্য বেশি সেটি বিচার করবে জনগণ। তবে ২০২৪ এর ছাত্র আন্দোলনের আইডিওলজি যদি রেনোভেটিভ সংবিধানে স্থান পেতে পারে, বাহাত্তরের সংবিধানের ওপর আওয়ামী দোষ চাপিয়ে দেয়া জাস্টিফাইড কিভাবে হয়?

তিপ্পান্ন বছর পরে এসেও বাহাত্তরের সংবিধান কার্যকারিতা হারাচ্ছে। কাজেই ২০২৪ এর সংবিধানও যে অমর অক্ষয় রূপ পরিগ্রহ করবে তা কী করে বলি?

বৈষম্য বিরোধী সরকারের সদস্যরা শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর হাতে। তাঁর স্বাক্ষরেই সবাই মসনদে বসেছেন। বিপ্লবী সরকার হলে এটা করার কথা ছিল না। জনতার মঞ্চে গিয়ে জনতার হাতে শপথ নেয়ার কথা। জনাব মাহফুজ আলম সেটা আপনারা পারেননি। আওয়ামী লীগের দুর্গন্ধ গায়ে মেখে আপনাদের ভাষায় তাদের প্রণীত জগাখিচুড়ি সংবিধানকে কতটা সুবাসিত করতে পারেন দেখা যাক।

আপনি বলছেন, সংবিধান সংশোধনে জনতার সাথে রিকনসিলিয়েশনে যাবেন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনুসারী বেশি। বিএনপি বলেছে গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তন না করতে। তাহলে আওয়ামী লীগ বাইরে রাখা সমাজে বিএনপি ছাড়া অন্য আর কার সাথে রিকনসিলিয়েশনে গিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারবেন?

জনাব আলম আপনি বলছেন, রাষ্ট্র সেক্যুলারই থাকবে, সেটা আওয়ামী লীগের সেকুলারিজম নয়। ভালো কথা, আমরাও চাই আপনারা আরো বেশি বিশুদ্ধ সেক্যুলারিজম কায়েম করুন। আমাদের সমর্থন পাবেন। কিন্তু গেল দুই মাসে আপনাদের কর্মধারা থেকে আমরা কিভাবে আশ্বস্ত হবো যে, সত্যিকার অর্থেই আপনারা যা মুখে বলছেন তাই আসলে ভিতরে ভিতরে করতে চাইছেন?
গেল দুই মাসে Hatred, Bigotry, Racism ও সামগ্রিক অসহিষ্ণুতা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

জনাব মাহফুজ রিসেট বাটন নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর সদুত্তর দিয়েছেন। ৪৭, ৭১ ও ২০২৪ এর রাজনৈতিক পরম্পরা স্বীকার করে নিয়ে গণবিরোধী সিস্টেম পরিবর্তন করবার কথাটাকে তারা অতীত মুছে ফেলে দেয়ার কথা বলছেন।

মাহফুজ আলমকে অভিবাদন জানাই। তিনি পড়াশোনা করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবার মতো দক্ষতা অর্জন করেছেন। দেশ, রাজনীতি ও মানুষ নিয়ে তাঁর নিজস্ব ফিলোসফি আছে। সেই দর্শন যদি জনহিতে কার্যকারিতা দেখায় আমরা সাধুবাদ জানাব।

খালেদ মুহিউদ্দীন ভাই আপনার প্রশ্নগুলো এমনিভাবে আরও শানিত হোক। আমাদের সমাজে ক্ষমতাকে জবাবদিহি করবার মানুষ খুব কম। আপনি আলাদা ও ব্যতিক্রম।

 

লেখক: সাংবাদিক 

৯ অক্টোবর ২০২৪