বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটা বড় সমস্যা হলো, এই ব্যবস্থার অংশিদার বেশির ভাগ মানুষই একই সাথে শোষক আবার শোষিতের ভূমিকায় থাকে। যেমন মধ্যবিত্ত তার উপরের শ্রেণীর দ্বারা শোষিত হয় আবার সুযোগমত নিচের শ্রেণীকে শোষণ করে, মধ্যবিত্তদের মধ্যেও আবার উঁচু-নিচু, কম-বেশি আছে। উচ্চবিত্ত নিম্নবিত্তদেরও একই অবস্থা। হাজার কোটি টাকার মালিকদের দেখে আমাদের মনে হতে পরে তার আর পাওয়ার কিছু নাই, কিন্তু সে হয়তো লাখ কোটি টাকার মালিকদের দ্বারা নিজেকে শোষিত মনে করে, ফলস্বরূপ সে নিজেও যেন তেন ভাবে লাখ কোটির লেভেলে উঠতে চায়। এই উঠতে চাওয়ার বা উঠে যাওয়ার সময় অন্যদের মাড়িয়ে যেতে তার খুব একটা বেগ পেতে হয় না, কারণ নিজের পৃথিবীতে সেই শোষিত, সেই গরিব। সে যে নিজেকে শোষিত ভাবছে, এটার চেয়ে বড় সমস্যা হলো নিজের শোষক রূপটা একবারেই দেখছে না। মানুষ সাধারণত নিজেকে ভিকটিম মনে করতে ভালবাসে। আর এই ভালোবাসা, ভালোবাসার ভ্রান্ত জগত তার অবিরাম অন্যায় করার ন্যায্যতা উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার। শোষণ বা অন্যায় যে শুধু অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ তাও না, সমাজের সব জায়গায় এর ব্যাপক বিস্তার। অর্থনীতি বা সমাজনীতি যেহেতু আমরা তুড়ি মেরে বদলে দিতে পারব না, কাজেই নিজেকে আগে বদলাতে হবে। কোথায় আমি শোষক আর কোথায় শোষিত এটা নির্মোহভাবে বিচার করতে হবে। অন্যায়ের দুষ্টচক্র ভাঙার প্রথম ধাপ হতে পরে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা, “আমি শুধুই শোষিত” এই ঘোর কাটিয়ে ওঠা।