দুর্গোৎসব সার্বজনীন?
ধর্ম যার যার উৎসব সবার?
এবার আপনাকে মানতেই হবে শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনীন মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে।
কিভাবে? খোলাসা করে বলছি। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে নগরীর জেএম সেন হলে আয়োজিত শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা 'শুধু মুসলমানের লাগি আসেনি কো ইসলাম' শীর্ষক ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। সাথে ছিল বাউল শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত গান 'আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।' এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং জামায়াতের আমির শাহাজাহান চৌধুরী।
প্রিয় শায়খ ডা. শফিকুর রহমান এবার তো আপনারা মানলেন যে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই যে হিন্দুর উৎসবকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আপনারা নিজেদের ব্যক্তিগত ধর্মাচারের সাথে গুলিয়ে দিতে পারলেন -এটাই সম্প্রীতি, এটা অসাম্প্রদায়িকতা ও সার্বজনীতা তাই না? আমার দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যের মঞ্চ যদি অনুমোদন দেয়, সেখানে সঙ্গীত পরিবেশন খারাপ কিছু না। কিন্তু সম্প্রীতি একপাক্ষিক হলে কেমন কেমন হয় না? আপনার প্রার্থনালয়েও আশা করি ভিন্নধর্মীদেরকে ঈশ্বর প্রশস্তির গীত গাইতে দেবেন। দেয়াটা তো উচিত। এক হাতে তালি বাজাবেন কেমনে?
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিক ও ওয়েল অর্গানাইজড পলিটিক্যাল সংগঠন। সমাজের সবচেয়ে মেধাবী ব্যক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাসে প্রথম স্থান পাওয়া রোকনেরাই শিবির করে। তাই আপনাদের জ্ঞান বুদ্ধি, বিবেক, বোধ ও সংবেদনশীলতাও সবার ওপরেই থাকবার কথা। সেই আপনারা যখন হিন্দুর প্রার্থনা মঞ্চে নিজেদের ধর্ম সমস্বরে প্রচার করে আসতে পারেন, এবার তাদেরকেও আপনাদের জলসা বা প্রার্থনালয়ে ধর্ম প্রচারের সুযোগ করে দেবেন আশা করি। আপনাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগার দোহাই দেবেন না প্লিজ। আবেগ-অনুভূতি সবখানে সবমানুষের সমান।
আচ্ছা আপনারা যখন পূজোমণ্ডপে গিয়ে ধর্মীয় গজল গান, চেয়ার আটকে বসে থাকেন; সেটা কি হিন্দুদের জন্য খুউব উপভোগ্য হয়? তাদের ধর্মাচারে বাড়তি পূণ্যের সংস্থান হয়? নাকি তারা মন খারাপ করেন? যদি তারা মনটা কিঞ্চিতও খারাপ করেন তাহলে কিন্তু আপনাদের রক্ষা নাই।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব। (আবু দাউদ : ৩০৫২)।
আচ্ছা আপনারা নিশ্চয়ই মহানবীর সেই সত্য গল্পটা জানেন, একদিন কয়েকজন সাহাবীকে নিয়ে বসে কথা বলছেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। হঠাৎ সাহাবীরা দেখতে পান, মহানবী কাঁদছেন, তাঁর চোখে পানি। উদ্বিগ্ন সাহাবীরা জানতে চাইলেন ইয়া আল্লাহ্'র নবী আপনি কাদঁছেন কেনো? কী দুঃখ আপনার? মহানবী জবাব দিলেন, দেখো সামনের ওই পাখিটা ময়লা খাচ্ছে, ওর গায়ে কালেমা তাইয়্যেবা লেখা। সাহাবীরা জানতে চাইলেন, হুজুর এর মাজেজাটা কী? মহানবী বললেন, আখেরি জামানায় এমন কিছু লোক আসবে, যাদের লেবাস থাকবে ইসলামের কিন্ত চরিত্র হবে ময়লা খাওয়া পাখির মতো, তাদের কারণে ইসলামের অনেক ক্ষতি হবে। সে জন্যই আমি কাদঁছি।’
ডা. শফিকুর রহমান আপনি এই পলিটিক্যাল প্রপঞ্চ বা Phenomena নিশ্চয় শুনে থাকবেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে মজলুম জননেতা প্রয়াত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলতেন, 'নীল নদের পানিও নীল নয়-জামায়াতে ইসলামীও ইসলাম নয়।’
একাত্তরের আপনারা পাকিস্তানের কেবিনেটে ছিলেন। সঙ্গত কারণেই হানাদারদের পক্ষে কাজ করেছেন। ব্রুটাল জেনোসাইডের দায়ভার তাই আপনারা এড়াতে পারেন না। সেটি মীমাংসিত বিষয়। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা ভাসানী যদি ভুল কিছু বলে থাকেন সেই ভুল ভেঙে দেয়ার দায়ভার আপনাদের ওপরই বর্তায়।
আপনার আচরণই আপনার হয়ে কথা বলবে যে, হিন্দু বা ভিন্নধর্মীরা আপনাদের কাছে কতটা নিরাপদ। ইতোমধ্যে চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বিষয়টি আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
আমরা এখনও বিশ্বাস করি,
ডা. শফিকুর রহমানের মতো সজ্জন ও সংবেদনশীল মানুষ চট্রগ্রামের বিষয়টি আমলে নিয়ে শর্মিন্দা হবেন। ডিনায়ালকে সাফাই হিসেবে দাঁড় করাবেন না।
রাষ্ট্র ও মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার রক্ষায় যথাবিহিত সুচিন্তা ধারণ করবেন।
লেখক: সাংবাদিক
১০ অক্টোবর ২০২৪