পোস্টস

পোস্ট

ফল অফ মারিউপোলঃ পর্ব ১

১১ অক্টোবর ২০২৪

Md. Rezaul Islam

মূল লেখক Md. Rezaul Islam

সাল ২০২২। বছরের শুরু থেকেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে থাকে। একদিকে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানে মরিয়া অপরদিকে রাশিয়া তাদের দেশের নিরাপত্তায় এক চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ। সময় যত গড়াতে থাকে সম্পর্ক আরো তিক্ত হতে থাকে। দুদেশের সীমান্তের প্রায় চার হাজার মাইল জুড়ে জানুয়ারি থেকেই সামরিক মহড়া পাল্টা মহড়া চলতে থাকে। এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইউক্রেনকে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলারের অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রদান করে যেটা রাশিয়াকে আরো বেশি ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলশ্রুতিতে ১০ই ফেব্রুয়ারী রাশিয়া তার বন্ধু রাষ্ট্র বেলারুশকে সাথে নিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে ১০ দিনের বিশাল এক যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করে। 'এ্যালাইড রিজলভ ২০২২' নামের এই মহড়ায় প্রায় এক লক্ষ রুশ সেনা অংশগ্রহন করে এবং ক্রাইমিয়াসহ অন্যান্য প্রান্তে  প্রায় ৩০ হাজার সেনা সমাবেশ করে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার সবথেকে বড় সেনা সমাবেশ।

 

২১শে ফেব্রুয়ারি। সামরিক মহড়ার মেয়াদ শেষ হতে না হতেই  রুশ প্রসিডেন্ট ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান করেন। শুধু তাই নয় স্বীকৃতি দেয়ার সাথে সাথে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ মোতাবেক রুশ সেনারা শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকা দুটিতে ঢুকতে শুরু করে। যদিও বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ধারনা করা যাচ্ছিল যে এমন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কারণ এ দুটি স্বশাসিত অঞ্চলের সেনাদের সাথে ইউক্রেনীয় সেনাদের উল্লেখযোগ্যহারে সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। স্বীকৃতি প্রদানকালে মি. পুতিন বলেন,

           “আমার মনে হয় একটা সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। যেটা অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল।  সেটা হল অতিদ্রুত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়া। পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার অংশ ছিল এবং দেশের জনগণ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে নির্দ্ধিধায় সমর্থন জানাবে।“ 

 

স্বীকৃতির আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ফোনালাপে ফ্রান্সের প্রসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সাথে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পুতিনের ঘোষণার সাথে সাথেই বিশ্বনেতারা তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন। জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস একে “কান্ডজ্ঞানহীন” হিসেবে আখ্যা দেন। অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রসিডেন্ট বলেন, 

           “পুতিন উত্তেজনা কমাতে ও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন।“

ডেড লাইন ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২২। বিবৃতি পাল্টা বিবৃতি এবং নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেন। অত্যন্ত গম্ভীর এবং জোরালো কণ্ঠে তিনি বলেন, 

                 “যারা গত আট বছর ধরে কিয়েভ কর্তৃক গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার, তাদের রক্ষা করতেই রাশিয়া এ সেনা অভিযান চালাচ্ছে। আমি ইউক্রেনের সেনাদের বলতে চাই - অস্ত্র ফেলে বাড়ি ফিরে যাও। যারাই আমাদের থামাতে চেষ্টা করবে তারা এমন প্রতিদান পাবে যে- এমনটা আর ইতিহাসে ঘটেনি। আমরা সবকিছু মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।“ 

 

ঘোষণার কিছুক্ষনের মধ্যেই রুশ সেনারা ইউক্রেনের তিন দিক যথাক্রমে বেলারুশ, ক্রাইমিয়া এবং দোনবাস অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করতে থাকে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের মতই রাশিয়ার অন্যতম লক্ষ্য ছিল আজভ সাগরের তীর ঘেঁষা বন্দর নগরী মারিউপোল দখলে নেয়া। মারিউপোল হচ্ছে পূর্ব ইউক্রেনের দোনবাস প্রদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শহর। সমুদ্রের কাছে অবস্থিত শহরটি বেশ কিছু  কারণে অত্যন্ত কৌশলগত। আমরা সবাই হয়ত অবগত ইউক্রেনে প্রায় সকল বৃহৎ শিল্প কারখানা এবং একইসাথে কৃষি কার্যক্রম পূর্ব এবং পশ্চিম ইউক্রেনে হয়ে থাকে। তাই এ অঞ্চলে রয়েছে ইউক্রেনের অন্যতম বৃহৎ সমুদ্র বন্দর যেটি ১৮৮৯ সাল থেকে আমদানি রপ্তানি করে আসছে। শুধু তাই নয় ১০ স্কয়ার কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত ইউরোপের অন্যতম সর্ববৃহৎ স্টিল কারখানা আবভস্টলও এখানে অবস্থিত। এটা এতটাই সুবিশাল যে কারখানার ভেতরে রয়েছে একাধিক বানিজ্যিক স্থাপনা এবং মাটির নীচে অসংখ্য কক্ষ এবং গোপন সুরঙ্গ। এজন্য আজভস্টকে বলা হয় একটি শহরের নীচে আরেকটি শহর। সুতরাং, রাশিয়ার জন্য শহরটি দখল যে কতটা জরুরি সেটা বুঝতেই পারছেন। 

 

রুশ এবং তাদের মিত্র দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের মিলিশিয়ারা যুদ্ধের প্রথম দিন থকেই মারিউপোল আক্রমন করে। তাঁরা ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকার স্থল অংশ বারদিয়ানস্ক এবং ভলনোভাখা থেকে দ্বিমুখী আক্রমন শুরু করে এবং অন্যদিকে রাশিয়ার নৌবাহিনী আজভ সাগর  নিজেদের নিয়ন্ত্রন নিয়ে সেখান থেকে ইউক্রেনের ডিফেন্স ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ  করতে থাকে। ত্রিমুখী হামলার ফলে ইউক্রেনের সেনারা অতি দ্রুত পিছু হটতে শুরু করে। হামলার তীব্রতা এতটাই ভয়বহ ছিল যে, বিবিসির একটি তথ্য অনুসারে, মারিউপলের প্রায় ৯০ ভাগ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। অবশেষে ২রা মার্চ রুশ সেনারা আঞ্চলটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হয়।

 

চলবে………………