পোস্টস

গল্প

অভিমান

১২ অক্টোবর ২০২৪

নাঈমা

মূল লেখক তানজীনা আফরিণ

পর্ব ০১
কাঞ্চনপুর গ্রামের পুরোনো জমিদার বাড়ির পুকুর পাড়ের সেগুন গাছের গুড়িটা কচি কাচাদের গল্পের আসর হলেও প্রায়শই সেখানে একটি সতের-আঠার বছরের কিশোরীকে দেখা যায়। ডাগর চোখা শ্যামবর্নের লম্বাচুলে বেণী করা মেয়েটির উপস্থিতিই যেন গোটা গল্পের আসরটাকে মাতিয়ে রাখে। অন্য আর দশটা মেয়ের মত বয়সের সাথে সাথে গাম্ভীর্যতা আসেনি মেয়েটির মধ্যে। তার একমাত্র কাজ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়া আর দুপুরে ফেরা। এই পুরো সময়টা সে কাটায় গ্রামের বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের সাথে। গ্রামের কোথায় কি হচ্ছে এসবই তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু, মাঝে মাঝে সদলবলে উপস্থিত হয় ঘটনাস্থলে। তার মা মরিয়ম শত শাসনের পরও মেয়েকে আয়ত্তে আনতে পারলেন না তখন হাল ছেড়েই দিলেন প্রায়।
-'কি রে এইবার নাকি চাচা আহেন নাই?' 
নিধী গাছের গুড়িতে বসা সামনের ছেলে মেয়েগুলোকে জিজ্ঞেস করলো।
-'হ নিধীবু, এইবার ঢাকা থেকে মিঞা ভাই আহে নাই, তার ছোড পোলায় আইছে।'
-'হেই  বেডা দেখতে খুব সুন্দর নিধীবু, পুরা উত্তম কুমারের মতন।'
-'ধুর, এইসব কিচ্ছু না, স্কুলে থাকতে বিশ পঁচিশটা উত্তমকুমার আমার পেছনে লাইন দিতো, বুঝলি? আমি পাত্তাই দিতাম না।'
ছোট ছেলে মেয়েগুলো অবাক বিস্ময়ে নিধীর কথা শুনে, কেন যে নিধীবুকে তাদের এত ভালো লাগে! নিধি গাছের গুঁড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে বললো, 'চল তাইলে একবার এলাকার নতুন মেহমানরে দেইখা আহি।'

 

একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠা রাজীব রায়হানের অভ্যেস। কিন্তু গ্রামের পাখির কিচিরমিচির, মানুষের কোলাহল, সকালের রোদ যেন একটু তাড়াতাড়িই বেড়ার ফাঁকে উঁকি দেয়। তাই রাজিব খুব ভোরেই জেগে গেলো। সে যে ঘরে থাকছে তা নাম মাত্রই ঘর। চারপাশে বেড়া আর মাঝে ছোট একটা খাট পাতা এ ঘরটাযে খুব কষ্টে দঁড়িয়ে আছে তা দেখেই বোঝা যায়। রাজিবের বাবা কায়সার রায়হান বছরে দু'একবার ফসলের ভাগ নিতে আসেন। এসেও দু'একদিনের বেশি থাকেন না। তাই গ্রামের এ ঘরটা মেরামতের ও প্রয়োজন মনে করেন না। এইবার তাদের গ্রামের জমীগুলো বিক্রি করে দেওয়ার কথা ছিলো কায়সার রায়হানের। কিন্তু তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই রাজিবকেই গ্রামে পাঠালেন। সে এইবার মাস্টার্স কমপ্লিট করাতে হাতে কাজও নেই তেমন। রাজিবের এখানে এসে খারাপ লাগছে না অবশ্য। এই ঘরটাতে থাকার মাঝে একটা অ্যাডভেঞ্চারাস ব্যাপার আছে। রাজিব সকাল নয়টায চেয়ারম্যানের কাছে গেল জমিগুলো বিক্রির ব্যাপারে কথা বলতে। সেখান থেকে ফিরলো এগারোটা নাগাদ। পাশের দোকান থেকে চা এনে অন্যমনষ্কভাবে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো রাজিব। হঠাৎই মড়মড় শব্দে ঘরের বেড়া ভেঙ্গে দশ বারটা ছেলেমেয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরের মাঝে এসে পড়লো। রাজিব ছিটকে সরে গেলো দরজার কাছে। তারপর হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইলো নিচে পড়ে থাকা একটি কিশোরী আর দশ বারটা ছেলেমেয়ের দিকে।