Posts

গল্প

ভালোবাসা

October 13, 2024

সুমাইয়া বর্ষা

115
View

—অর্নব,আমি কি কখনোই তোমার প্রিয়ের তালিকায় ছিলাম না?তবে কেন করলে আমার সাথে এমন?

তনিমা প্রশ্নটা করে অবিচল তাকিয়ে থাকে তার সামনে বসা শ্যামসুন্দর পুরুষটির দিকে।এই সেই পুরুষ যে দুই'বছর পর আবারো তনিমাকে কিছু বলার জন্য ডেকেছে।অর্নব কোনো ভাবভঙ্গি প্রকাশ না করে নিজের চুলগুলো হাতড়ে বলে—

তনিমা আমার স্ত্রী জারা আমাদের পাঁচ মাসের ছেলে আবিরকে রেখে অন্য এক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। তুমি কি আমার বাচ্চার আম্মু হবা?

তনিমার রাগ মাথা চাড়া দেয়।স্ত্রী পালিয়ে গেছে বলে এখন তাকে বাচ্চার মা হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে!তনিমা জানে সে অর্নবকে ভালোবাসে তবে সে তো কোনো কেয়ারটেকার নয় যে অন্যের বাচ্চার খেয়াল রাখবে।তার থেকে বড় কথা যে পুরুষটি তাকে শুধু টাইমপাসের জন্য ব্যবহার করেছে তার সন্তান তো কখনোই না।তনিমা উঠে চলে যেতে নিলেই অর্নব বলে—

তনিমা ভেবে দেখো,এমন সুযোগ আর পাবে না। তুমি আমার ছেলের খেয়াল রাখবে, মায়ের ভালোবাসা দেবে।আর আমি তোমাকে টাকায় মুড়ে দেবো।

তনিমা রেগে চেয়ারে লাথি মারে। আশেপাশের টেবিলের লোকেরা অদ্ভুতভাবে তাকায়।তনিমা সবাইকে এমনভাবে তাকাতে দেখে কটকট মেজাজে বসে পড়ে।বলে—

মিষ্টার অর্নব এহসান আমি আপনাকে ভালোবাসি।যদি আপনি কোনো কারণে বাধ্য হয়ে আমাকে ছেড়ে যেতেন এবং এখন আমাকে আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য চাইতেন তবে আমি নিশ্চিত আপনার সন্তানের মা হওয়ার চেষ্টা করতাম।তবে দুঃখজনক বিষয় হলো দুইটার একটাও আপনি করেননি।আপনি আমাকে ইচ্ছা করে ছেড়ে গিয়েছিলেন এবং এখনও শুধুমাত্র স্বার্থের জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন।

তনিমা নিজের কথা দৃঢ়ভাবে সম্পূর্ণ করে বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে।পেছনে ফিরে আর তাকায় না। কেননা তনিমা চায় না অর্নব ওর চোখের জল দেখুক।সেই দুইবছর সাতাশ দিন আগেও তো তনিমা দেখতে দেয়নি তার চোখের জল অর্নবকে।এখনও নাহয় না দেখুক!

বাসায় ফিরে গোসল করে একেবারে ঘর থেকে বের হয় তনিমা।মায়ের বয়স হয়েছে তাও রান্না করছেন।ভাবির বাবা অসুস্থ হওয়ায় তিনি তাকে দেখতে গিয়েছেন! অবশ্য মা নিজেই তাকে পাঠিয়েছে।তনিমা গিয়ে মা'কে সাহায্য করতে নিতেই মা বলে—

আরে আরে কি করছিস!মাত্রই অফিস থেকে ফিরলি যা বিশ্রাম নে।আমি খাবার দিচ্ছি!

—মা,আমি রাজি আছি তোমরা পাত্র দেখতে শুরু করো!

হঠাৎ তনিমার কথাটা যেন ধারাম করে শব্দ করে ওঠে পুরো বাড়িতে।চব্বিশে পা দিয়েছে তনিমা।কতবার বিয়ের কথা বললেও তা কানে তোলেনি।তবে আজ নিজ থেকে বলায় তনিমার মা অকপটে খুশি হয়ে যান।দ্রুত নিজের গালে নিজে থাপ্পর মেরে সত্যতা যাচাই করেন।তনিমা মা রোকসানার কান্ডে মুচকি হাসি।

—তনিমা তুই তো চিনিস রাকিবের চাচাতো ভাই রাহিলকে তাই না?

মায়ের মুখে হঠাৎ কোনো পুরুষের নাম শুনে কিঞ্চিত অবাক হয় সে। পরমুহূর্তেই বুঝে ফেলে মা তার বিয়ের জন্যই হয়তো কোনো পুরুষের কথা বলছেন।

—না মা

—তাহলে তুই থাক।আমি ওদের জানিয়ে দেবো ওরা চাইলে তোকে দেখতে আসতে পারে।এইতো একসপ্তাহ আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল।ইতালি থাকে ছেলে। এখানকার এক ভার্সিটির রিসার্চার না কি জানি বলছিল!

তনিমা মায়ের স্পিড দেখে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর হাসতে হাসতে ফিরে আসে।তনিমাকে আর কিছু জানায় না। তনিমাও আর কৌতুহলী না হয়ে ঘরে চলে যায়।কালকে অনেক কাজ আছে অফিসে!তাই কিছু কাজ কমিয়ে রাখতেই রাতে করে নেবে।রাত বারোটার দিকে কাজ শেষ করে বাইরে বেড়িয়ে দেখে মা এখনো তার জন্য বসে আছে খাবার নিয়ে।তনিমা কপট রাগ দেখিয়ে বলে—

মা তুমি এখনো বসে আছো কেন?তোমার তো শরীর খারাপ হবে!

—সন্তান এখনো খাইনি আমি কি করে নিশ্চিন্তে ঘুমাবো?

তনিমার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।ওর মনে পড়ে সেই ছোটবেলা থেকেই মা আগে ওদের খাওয়াতো তারপর নিজে খেতো।তবে ওরা কখনোই মাকে জিজ্ঞেস করেনি ,মা তুমি খেয়েছো তো!তার পর তনিমার জীবন থেকে অর্নব নামটা চলে যাওয়ার পর তো সে আরো ইন্ট্রোভার্ট হয়ে গিয়েছিল।কারো সাথেই তেমন কথা বলতো না।তনিমা বুঝতে পারে মাত্র ছয়মাসের ভালোবাসা হারিয়ে সে প্রায় চব্বিশ বছরের পুরনো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে অপমান করেছে,কষ্ট দিয়েছে। তনিমা মায়ের হাত ধরে কেঁদে দেয়।

বর্তমান প্রজন্ম হোক আর আগের প্রজন্ম ,তবে মায়েরা একই রকম এখনো! মায়েদের ভালোবাসার একচুলও পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু সেই আমরা মায়ের ভালোবাসার গুরুত্ব দেই না। গুরুত্ব দেই সো কল্ড ছয়মাসের ভালোবাসার।

Comments

    Please login to post comment. Login