পোস্টস

গল্প

Murder mystery গল্পঃ লাস্ট কেস (পার্ট ০২)

১৩ অক্টোবর ২০২৪

Salsabil Khushi

মূল লেখক Salsabil Khushi

পুলিশ এলো তদন্তের জন্য।থানার ওসি জামশেদ হক তীক্ষন নজরে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন।খবর দেয়া হয়েছে প্রসাদ বাবুর ছেলেকে।গত দশ বছরে এ বাড়িতে এত ভীড় কখনোই হয়নি।বছর দশেক আগে প্রসাদ বাবুর স্ত্রী যখন বেঁচে ছিলেন তখন পুজো পার্বণে বেশ ভীড় হতো। তার বিদায়ের সাথে সাথে সকল আমেজও যেন বিদায় নিয়েছিলো সেদিন।

 

বারান্দায় হুইল চেয়ারের হাতল ধরে বসে আছে কমল । তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে রণ দাদু আর কোনদিনই তাকে কমল বলে ডাকবেন না।এ চেয়ারের প্যাঁচ প্যাঁচ  শব্দে আর কখনোই কমলের কান ধরে যাবেনা।কতবার দাদুকে বলেছে চেয়ারটা ঠিক করাতে।শব্দটা ওর কানে লাগে।ওকে বিরক্ত করার জন্যই  হোক বা অন্য কারণেই হোক  ঠিক করানোর মতো কোনো সমস্যা নয় বলে বারবার এড়িয়ে যেতেন ।


কমলের চোখের স্থীর আর বিমর্ষ চাহনি ওসি জামশেদ হকের চোখ এড়ালো না ।

রনপ্রসাদ বাবুর ছেলে প্রীতম দত্তের আসতে  সপ্তাহ খানেক লেগেছে।এ কয়দিনে প্রতিদিন একবার  কমল মর্গে গিয়ে রণদাদুর লাশ দেখে আসতো ।জামশেদ হক সব জানলেও নিষেধ করেননি কখনো । 

 

প্রাথমিক তদন্তে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।


মৃত্যুর কারণঃ গলায় করা সিলিন্ডার আকৃতির কোনো সূচালো বস্তুর আঘাত।অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৃত্যু।


প্রীতম দত্ত থানায় এসেছেন ওসি জামশেদ হকের সাথে দেখা করতে।

প্রাথমিক আলাপচারিতা শেষে জামশেদ হক প্রশ্ন করলেন,
 

এতবড় বাড়ি অথচ কোনো সিসি ক্যামেরা নেই কেন?


প্রীতম-আসলে বাবা ই পছন্দ করতেন না।কোনো যন্ত্র তার গতিবিধি সর্বোক্ষণ পর্যবেক্ষণ করবে আবার তা রেকর্ড ও থাকবে এ কনসেপ্ট বাবার ঠিক পছন্দ ছিলো না।


জামশেদ হক- হু।তা আপনার স্ত্রী সন্তান এলো না কেন?


প্রীতম –আমার স্ত্রী সন্তান কখনো দেশে আসেনি।তাই ও্দের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে দেরি হবে বলেই আমি ওদের ছেড়ে আসতে বাধ্য হলাম।

 

জামশেদ হক-কমল নামের ছেলেটিকে আপনি চেনেন?


প্রীতম দত্তহ্যাঁ,ছোটবেলা থেকে আমাদের এখানে যাওয়া আসা ছিলো । মা মারা যাওয়ার পর বাবা যখন সম্পূর্ণ একা হয়ে যান ।তখন থেকে ওর বাবার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।বাবা একা থাকতেন বলে এ বিষয়ে আমিও কখনো আপত্তি করিনি ।


জামশেদ হকঃআপনার কি কারো ওপর কোনো সন্দেহ হয়?


প্রীতম দত্তঃ না,সেরকম সন্দেহভাজন কাউকেই আমি দেখছিনা।সম্পত্তির বিষয়েও তেমন কোনো শত্রুতার ঘঠনা নেই।বাবা বরাবরই ঝামেলাবিহীন মানুষ।মা মারা যাবার পর বাবা এসব বিষয়ে আরও উদাসীন হয়ে পড়েন ।যা দেখাশোনা করার বাবার সেক্রেটারি রামেশ কাকাই করেন।

 

জামশেদ হকঃ আপনি এখন আসতে পারেন। কোনো প্রয়োজন হলে আমি ডেকে পাঠাব আর নয়তো নিজেই যাবো।


প্রীতমঃ ওকে, থ্যাঙ্কিউ

 

জামশেদ হক চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন।কপালের ভাঁজ বলে দিচ্ছে ব্রেইনে কিছু চলছে তার।

 

বিকালে নদীর পাড়ে হাঁটতে এসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন ওসি জামশেদ।এমন সময় চোখ আটকালো নদীর এক পাশে। কেমন বিমর্ষ বসে থাকার ভঙ্গী যেন সব হারিয়ে কেউ বসে আছে  পাড় ভাঙ্গা নদীর তীরে। 

পাশ থেকে এক মাঝি বলল ,”বেচারা দুপুর থেকেই এভাবে বসে আছে”।

 

জামশেদ হক এগিয়ে গেলেন।যদি তার ভুল না হয় এ আর কেউ নয় ,কমল।

 

- এভাবে এখানে একা বসে আছো কেন?
কমল ফিরে তাকালো


- আপনি বললে চলে যাবো।
- না না তা কেন।আমি কি কিছুক্ষণ তোমার পাশে বসতে পারি ?
 

কোনো জবাব এলোনা। নিরবতা্,…..
 

জামশেদ হক বসলেন।


- তোমার দাদু তোমাকে অনেক আদর করতেন তাইনা কমল?
- জ্বি।।
- তোমার কি মনে হয়? দাদুর এত বড় শত্রু কে হতে পারে?
- আমার জানা মতে তেমন কেউ নেই
- আছে ,নিশ্চয়ই আছে। তা না হলে তো এত বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারেনা, তাইনা্,?
 

কমলের নিশ্বাস অতি দ্রুত পড়ছে ছেলেটা হয়তো কেঁদে ফেলবে এখনি।


- কমল ,তুমি ওনার সবচেয়ে কাছের এবং অতি আদরের একজন। নিশ্চয়ই চাইবে ওনার খুনিকে শাস্তি দিতে?


- জ্বি


- আমিও চাই। আর এ কাজে আমার একজন সহযোগী দরকার। আমি চাই তুমিই আমার সে সহযোগী হও ।তুমি কি রাজি আছো আমাকে সাহায্য করতে?!

 

- আমি? আমি কি পারব আপনাকে সাহায্য করতে?


- পারবে।কেউ যদি পারে তবে সেটা তুমিই ।


- আপনার এতো আত্মবিশ্বাসের কারণ কি জানতে পারি?

 

- অবশ্যই পারো ।রণ বাবুর বুক সেলফে থ্রিলার এবং গোয়েন্দা গল্পের বেশ কিছু বই দেখেছি।অন্য বইয়ের তুলনায় সেগুলো বেশ চকচকে।আর কিছুটা অগোছালো। আমার ধারণা উনি এসব বই বেশ পছন্দ করেন এবং পড়েন ও।এসব বই পড়ে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করার মধ্যে এক ধরণের  আনন্দ আছে। যে আনন্দটি ভাগ করে নেয়ার মতো একমাত্র তুমিই আছো। উনি তোমাকে এসব বই পড়ে শোনাতেন।তোমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে।তাই তুমি ভালোই জানবে  কিভাবে ক্লু খুঁজে বের করতে হয়।সূতরাং ইনভেস্টিকেশনে সাহায্য চাইতে নিশ্চয়ই আমার আর কোনো সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন নেই।

 

আবারও নিরবতা….


 -ঠিক আছে আমি এখন চলি।তুমি সন্দেহজনক কিছু পেলেই আমাকে জানাবে।

 

জামশেদ হক সোজা চলে যাচ্ছেন। ফিরে তাকালেন না।ছেলেটা যে কাঁদছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সে হয়তো কখনোই ভাবেনি গোয়েন্দা গল্পের সেইসব লজিক তাকে দাদুর খুনি খুজে বের করার জন্য প্রয়োজন পরবে।

একজন এতিম দ্বিতীয়বারের মতো এতিম হয়ে গেলো।  

জামশেদ হকেরর মন খারাপ হয়ে গেলো। মূহূর্তেই ঝলমলে বিকেলটা যেন মনমরা আর 

বিষাদে পূর্ণ হয়ে গেলো।

 

ইতোমধ্যে প্রায় দিনদশেক পার হয়ে গেছে। খুনি কোনোই ক্লু ছেড়ে যায়নি।জামশেদ সাহেব জোর তল্লব চালাচ্ছেন।