জামশেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এলেন। কমলকে ডেকে পাঠানো হলো।
জামশেদ সাহেব কমলের কাছে বিস্তারিত সব জানতে চাইলেন ।এই বাড়িতে কে কে আছে, কে কি করে সব কিছু।
কমল বলে চললো,
দুই তলায় দাদু একাই থাকেন। হরদা সকালে আসেন। রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা সব কাজ সেরে ১টার দিকে চলে যান।খুনের দিন ও এমন ই করেছেন।আবার আসেন বিকালে ৪টার দিকে।রাত ১০ টা অব্দি থেকে বাড়ি চলে যান।দাদু রাতে বাড়িতে একাই থাকেন। মাঝে মধ্যে আমি রাতে দাদুর সাথে থেকে যাই । সাধারণত আমি আমার বাড়িতেই থাকি।
একতলায় থাকেন মুকেশ জেঠু, তার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি। জেঠিমা ডায়বেটিস এর রোগী। ঘরকুনো ধরনের মানুষ। খুব একটা বের হন না। ছেলের বউ ও অনেকটাই তেমন। দাদা কাজ করেন ২ মাইল দূরে একটা ফ্যাক্টরিতে। ছোট একটা কম্পানির ম্যানেজার। সকাল ৭ টা নাগাদ চলে যান প্রতিদিন।ফেরেন সন্ধ্যা 7টার দিকে। শুক্রবারে অফ থাকে। জেঠু কলেজের শিক্ষক। ক্লাস শেষ হলেই বাড়ি চলে আসেন। ফিক্সড কোনো টাইম নেই। জেঠিমা আর বৌদি বাড়িতেই থাকেন। ওনাদের নিজেদের বাড়িও এই এলাকায় ।বাস স্ট্যান্ডের কাছে।
প্রীতম প্রসাদ — এসব তো আগেও শুনছেন ।আবার একই কথা জানতে চাচ্ছেন কেন?
জামশেদ - কেন দ্বিতীয়বার জানায় কোনো সমস্যা আছে নাকি?
প্রীতম - না তা নয়। কেস নিয়ে আপনার তেমন কোনো অগ্রগতি দেখছিনা। আবার আমাকেও যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। এভাবে আর কতদিন। আমার একটা জব আছে ইউএসএ তে।
জামশেদ সাহেব শীতল চোখে তাকালেন প্রীতম দত্তের দিকে এরপর বলা শুরু করলেন-
আপনি দেশে এসেছিলেন প্রায় ৫ বছর আগে।এর মাঝে প্রসাদ বাবুকে একবার ও দেখতে আসেননি। তার উপর মাস কয়েক আগে আপনার বাবার সাথে আপনার মনমালিন্য হয়। যতটুকু জানি টাকা পয়সার বিষয় নিয়ে। এরপর আপনার বাবার খুন। খুনের সময় এখানে না থাকলেও সন্দেহের তীর কিন্তু আপনার দিকেও যায় প্রীতম বাবু। তদন্ত যে হচ্ছেনা তা নয়। হচ্ছে,,, বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে,,।
প্রীতম (কাপতে কাপতে বলল) : তারমানে, তারমানে আপনি বাবার খুনি হিসেবে আমাকে সন্দেহ করছেন?
জামশেদ : অস্বাভাবিক কিছু তো নয়।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন প্রীতম দত্ত।এরপর বললেন,
— শুনুন তাহলে, হুট করেই মাস কয়েক আগে আমার চাকরি চলে যায়। ইউএসএ তে আমার সেভিংস তেমন কিছু ছিলনা। পড়াশোনা শেষ করে জবে ঢুকেছি।বাবার মতো এতোটা গোছানো মানুষ না আমি । বিয়ের পরেই ক্যারিয়ার আর পরিবার সচেতন হই।তাই চাকরি যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বেশ টানাটানি শুরু হয়। সেসময় বাবার কাছে বেশ কিছু টাকা চাইলে তিনি আমাকে দিতে অস্বীকার করেন।
বাবার বক্তব্য হলো,টাকা পেলে আমি নতুন চাকরি খুঁজতে আলসেমি করব। এটাই উপযুক্ত সময় জোর তালাশ করার।
এ নিয়েই বাবার সাথে রাগারাগি। বাবার কথা কতটা সত্য তা বুঝতে আমার লেট হলোনা ।
আমি খোঁজাখুজি শুরু করি। প্রায় দেড় মাস পর নতুন চাকরিও পেয়ে যাই। এ বয়সেও বাবা আমায় এভাবে শাসন করে শেখাবেন তা আগে বুঝিনি। পরে নিজেই বাবাকে ফোন দিয়ে সরি বলে নেই। ব্যাস এতটুকুই।
আমার বাবা এমন কোনো অন্যায় করেননি যে তার শাস্তি স্বরুপ তার নিজের সন্তান ই একসময় তাকে খুন করবে।আর তাও সম্পত্তির জন্য। আপনি যাতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সন্দেহ না করেন তাই ব্যাপারটা চেপে যাই।
জামশেদ সাহেব,প্রীতম দত্ত বলে চললেন।
আমি হয়তো একজন যোগ্য সন্তান হয়ে উঠতে পারিনি।কিন্তু আমার বাবা তার দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা করেননি। প্লিজ আমার অনুরোধ আপনার কাছে। তার ব্যাপারে কোনো ধারণা পোষণ করার আগে এটা বিবেচনায় রাখবেন, তিনি আসলেই একজন ভালো মানুষ ছিলেন।
কথা শেষ করেই রুম থেকে চলে যান প্রীতম দত্ত।
জামশেদ হক কমলের দিকে তাকান। কমল কথার সত্যতা স্বরুপ সকলের অবলোকে একটু মাথা ঝাকায় ।
জামশেদ হক থানার দিকে ফিরতে লাগলেন।
যেতে যেতে ভাবছেন,
প্রীতম দত্ত তার বাবার সম্পর্কে যা বলেছে তা আসলেই সত্য। এমন একটা লোককে অন্তত সম্পত্তির জন্য কেউ খুন করবে না।খোঁজ নিয়ে যা জানা গেছে তাতে উনি শুধু অসহায়দেরই নয় বরং আত্মীয়স্বজনকেও বেশ সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তবে কি এমন কারণ হতে পারে যার জন্য তিনি খুন হলেন? খুনের কারণ কি সে নিজে নাকি অন্য কিছু।
রাতে কেসটা নিয়ে আবারও বসেছেন জামশেদ হক। সব কিছু আবার চিন্তা করা যাক। খুনের প্যাটার্ন দেখে মনে হয় পেশাদার খুনির কাজ নয়। তাহলে গুলি, ছুরি এজাতীয় জিনিস দিয়ে হত্যা করা হতো। আবার কোথাও কোনো হাতের ছাপ ও নেই। হত্যার অস্ত্র সিলিন্ডার আকৃতির। পাইপ জাতীয় কিছু।যার মাথাটা সূক্ষ্ম ও ধারালো।কি হতে পারে সেটা?
কলম? হ্যাঁ কলম হতে পারে। হত্যার অস্ত্র খুঁজে পেলে তদন্ত অনেকটাই সহজ হয়ে যেতো। আচ্ছা,আপাতত কলমকে অস্ত্র ধরে নিয়ে তদন্ত আগানো যাক। প্রসাদ বাবুর ঘরে বই, খাতা, কলম প্রায় প্রতিটি রুমেই পাওয়া যাবে।খুনি সেগুলোর ই কোনোটা ব্যাবহার করতে পারে। আচ্ছা কোনো কলম কি প্রসাদ বাবুর বাসা থেকে মিসিং আছে? থাকলেও সেটা কি কেউ বলতে পারবে?
পারবে। (নিজের মনেই উত্তর দিলেন)৷ কমল পারবে।ওকে ঘরটা ভালোভাবে দেখতে বলতে হবে। যদি কমল কলমের ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে পারে তবে ধরে নেয়া যায় কলমই হলো হত্যার অস্ত্র।
জামশেদ হক টর্চ নিয়ে ওই রাতেই দ্রুত বেরিয়ে পড়লেন।