এই রাত গভীরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে শেষ সুখটানটা দিচ্ছে বহ্নি। আজ রাতে তার খাওয়া হয়নি। বলা ভাল, খেতে ইচ্ছে করেনি। দিনের পর দিন অপমান সয়ে সয়ে খাবার ইচ্ছেটা মরে গেছে। আজ তার ডিনার হল, চারটা বেনসন ব্লু গোল্ডের কাঠি। খারাপ কি? নিকোটিন কিছুটা হলেও উপকার করে মস্তিস্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দিয়ে।
রাত নিশুতি। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া নেই তেমন। অন্ধকারে ভুতের মত দাঁড়িয়ে আছে সে। শহুরে আকাশে তারাও নেই। তবু আকাশের দিকে তাকায় বহ্নি। খুঁজে ফেরে দুষ্ট গ্রহ অরুন্ধতীকে। অরুন্ধতীকে হাতের নাগালে পেলে দেখে নিত আজ। হাতের সিগারেট প্রায় শেষ। ফিল্টারের কাছাকাছি চলে আসা আগুনের দিকে তাকিয়ে ভাবে, কি মিল তার সাথে! সে বহ্নি - তার ভেতরেও আছে জ্বলন। অপমানের, অসম্মানের, অবহেলার, উপেক্ষার। ভেবে দেখলে দু আঙুলের ফাঁকে ধরে রাখা নিঃশেষ সিগারেটটার সাথে তার পার্থক্য খুব একটা নেই। ফেলে দেবার জন্য রেলিং গলে হাত বাড়ায় বহ্নি। সাথে সাথেই চোখ যায় একটা থেমে থাকা রিক্সার দিকে। রিক্সাচালক একজন নারীর সাথে কথা বলছে। নারীর বেশভুষা দেখে যা বোঝার সে বুঝে নেয়। মনটা ভার হয়ে আসে তার। ঘরে যেতে যেতে ভাবে, সংগম আর সম্ভোগে কত ফারাক! দুটো ব্যাপার তো এক নয়। যদিবা কারো জীবনে এক হয়েই যায়, তবে তার আগল ভাঙার দিন এসে গেছে। সমাজ, সংস্কার পায়ে দলবার দিনও এসে গেছে। কিছুক্ষণ আগে হাতে ধরে থাকা সিগারেট আর এখন মধ্যরাতে এই নির্মম শহরের রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি- কারো সাথেই নিজের কোনও পার্থক্য খুঁজে পায়না সে।