পোস্টস

গল্প

# গল্পঃ অবিশ্বাস্য তবুও---, লেখকঃ আবদুল মজিদ

১৪ অক্টোবর ২০২৪

আবদুল মজিদ

# গল্প (ভৌতিক )    
#অবিশ্বাস্য_তবুও--- 
# কলমেঃ আবদুল মজিদ

পর্ব-১ 
~~~
ভূত প্রেতে আমার তেমন একটা বিশ্বাস নেই। তবে ভূতের ভয়ে যে কখনো বুক কাঁপেনি তা কিন্তু  নয়। গ্রামে একটু বেশি রাত হলে আঁধারে পথ চলতে এখনো গা ছমছম করে, মনে ভয় জাগে।

ছোটবেলায় অনেককে তো এও বলতে শুনেছি যে, আঁধার রাতে একা একা পথ চলতে পিছনে পিছনে কারো হেঁটে চলার পা'য়ের শব্দও নাকি সে শুনতে পায়! অথচ পিছনে ফিরে কাউকে দেখতে পায় না।

মনের ভিতর পোষা আতঙ্ক থেকেই হয়তো এমনটা হতে পারে।

তবে কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যার কোন ব্যাখ্যা কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি গা ছমছম করা অবিশ্বাস্য ভৌতিক একটা গল্প নিয়ে আমার আজকের এই লেখা।

আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী। অনেকদিন যাবত বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে ছোটখাটো ঠিকাদারি  কাজের সাথে জড়িত।

ইদানীং মোবারক সাহেব নামের এক ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। তিনি বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামে সরবরাহের কাজ করেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারখানায় দেখা হতে হতে তার সাথে আমার পরিচয় হয়ে যায়।

সেই পরিচয়ের সুবাদেই একদিন সন্ধার পর তিনি আমার বাসায় আসেন। চা নাস্তা খাওয়ার পর তার জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত আর অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতার গল্প তিনি আমাকে শুনালেনঃ--

ফ্যাক্টরির আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ খুবই ঝামেলা পূর্ণ। ফ্যাক্টরির বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে দেখা করা,মালের স্যাম্পল সংগ্রহ করা,সরবরাহকৃত সরঞ্জামের এ্যাপ্রুভাল নেওয়া এসব কাজ করতে করতে অনেক সময় বাড়ি ফিরতে বেশ রাতও হয়ে যায়।

তিনি বললেন একদিন একটি ফ্যাক্টরি থেকে অনেকগুলি কাজের অর্ডার পেলাম। মনের মধ্যে খুবই ভালো লাগছে।

তবে অর্ডারের কাগজ পত্র  নিয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে করে ঐ দিন বাড়ি ফিরতে আমার বেশ দেরি হয়ে যায়। অর্ডারের কাগজ পত্রগুলি একটি লেফাফায় এবং  স্যাম্পলগুলি একটি পলি ব্যাগে নিয়ে সবকিছু আমার হ্যান্ড ব্যাগে ঢুকিয়ে রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে ঐ ফ্যাক্টরি থেকে বের হলাম।

আমার বাসা শহর এলাকা থেকে বেশ দূরে। দুদিকে ঘন গাছগাছালি ঘেরা সরুপথ পেরিয়ে বাসায় যেতে মোটর সাইকেলে প্রায় এক ঘন্টাও বেশি সময় লেগে যায়। ঐ রাস্তায় রাতে খুব অল্পই গাড়ি চলাচল করে।  

প্রায় আধা ঘন্টার পথ চলার পর হঠাৎ মনে পড়লো আমার স্ত্রী বাড়ি ফিরার পথে রাস্তায় কোন বাজারে মাছ পেলে নিয়ে  যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু  আজ তো রাত একটু বেশি হয়ে গেল তাই এতো রাতে গ্রাম অঞ্চলের বাজারে কোন মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

সামনে একটি বাজার আছে তাই বাজারের নিকটে এসে বাইকের স্পিড একটু কমিয়ে দিলাম। বাজারের দু-একটি দোকানের বাহিরে নিরাপত্তা বাতি জ্বলছে, তবে আলো খুবই অপ্রতুল। লোকজনের সমাগম তেমন একটা নাই বললেই চলে।

অগ্রাহায়নের শেষ ভাগ। এসময় শহরতলিতে রাত দশটার পর  মানুষের চলাচলও খুবই কম থাকে।

বাজারে কোন মাছ ওয়ালার দেখা পেলাম না। তবে বাজার ছাড়িয়ে সামান্য একটু সামনে আসতেই দেখি এক মাছ ওয়ালা একটা বড় থালার মধ্যে বড় সাইজের দুইটা ইলিশ মাছ নিয়ে বট গাছটার নিচে খুবই আবছা চাঁদের আলোতে দাঁড়িয়ে আছে।

আশেপাশে কোন ল্যাম্প পোস্টের বাতি নেই। মাছ দেখেই আমার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। বেশ বড়সড়  কেজি সাইজের দুটো মাছ। মোটর সাইকেল পাশেই দাঁড় করিয়ে আমি একটু এগিয়ে গেলেই লোকটা বাম হাতের তালুতে থালাটা রেখে আমার দিকে মাছ দুটো এগিয়ে দিল।

আমার মনে হলো লোকটার গায়ে একটা কালো গেঞ্জি এবং পরনে একটি সাদা লুঙ্গি আর তার মাথা যতটা সম্ভব নিচের দিকে ঝুঁকানো।

আমি হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম মাছ দুটি একদম তরতাজা। তবে লোকটার শরীর থেকে কেমন যেন অদ্ভুত একটা বিকট দুর্গন্ধ আমার নাকে ভেসে আসছে।

ভাবলাম সারাদিন মাছ বিক্রি করে তাই এমন গন্ধ তার গায়ে থাকটাই স্বাভাবিক।

মাছের দাম কতো দিতে হবে? বলতেই সে নিচের দিকে তাকিয়েই মুখে কিছু না বলে একদিকে সামান্য মাথা নোয়ালো।

তাতে আমি যা বুঝতে পারলাম--, সে বুঝাতে চাচ্ছে যে আমি যে দাম দেব তাতেই সে মাছ বিক্রি করে দেবে।  এতো রাতে কাস্টমারই বা পাবে কোথায়? হয়তো এটাই ভাবছে সে।

আমি ভাবলাম এই মাছ দুটি বাজারে নিদেন পক্ষে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দাম হবে তদুপরি মাছদুটি খুবই তরতাজা। আমি বললাম চাচা আড়াই হাজার টাকায় মাছদুটি দেওয়া যাবে কি? 
সে মাথা নেড়ে সায় দিল।

মাছদুটি নেওয়ার জন্য আমি আমার হ্যান্ড ব্যাগের ভিতরে থেকে বাজারের ব্যাগটি বের করে ধরলাম কিন্তু  লোকটি তার থালাটি আমার দিকে একটু এগিয়ে দিল।  আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি লোকটা কোন কথাই বলছে না।

তার কোন সমস্যা থাকতে পারে এই ভেব আমি মাছ দুটি আমার হাত দিয়েই বাজারের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে পানির বোতলটা বের করে হাতটা ধুয়ে নিলাম।

অতঃপর প্রথমে হ্যান্ডব্যাগটি তারপর মাছের ব্যাগটি বাইকের বামদিকে বেঁধে পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে পাঁচশত টাকার পাঁচটি নোট  মাছওয়ালাকে এগিয়ে দিয়ে বললাম--, চাচা টাকাটা গুনে নিন।

মাছওয়ালা তার থালাটি এগিয়ে দিল। অর্থাৎ টাকাগুলি তার থালায় রাখতে আমাকে ইঙ্গিত করলো।

একেতো লোকটার শরীর থেকে  ভীষণ দুর্গন্ধে আমার বমি এসে  যাওয়ার অবস্থা তার উপরে আমার কৌতুহল হচ্ছে লোকটা কথা না বলায়।

আবছা আলোয় এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, লোকটির পরনে তো সাদা লুঙ্গি দেখছি  কিন্তু গায়ে আদৌও কোন কালো গেঞ্জি আছে কি না, নাকি সারা শরীর কালো কালো লোমে আবৃত?  

আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এইবার আমি সাহস করেই বললাম চাচা টাকাটা আপনি গুণে নিচ্ছেন না কেন? তাছাড়া থালার মধ্যে তো মাছের পানি ওখানে আমি টাকা রাখবো কেন?

এবার লোকটা তার থালাটা নিচে রেখে হাত বাড়িয়ে টাকাগুলি নিতেই আবছা আলোতে আমার মনে হলো যেন তার হাতের পুরো তালুটাই কালো কালো লোমে আচ্ছাদিত!! 
আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো!
সেই সাথে ভয়ে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যাওয়ার অবস্তা! 
                         চলবে-----